ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিশপ্ত মিথ্যাচারী

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫

অভিশপ্ত মিথ্যাচারী

ঔদ্ধত্য ও স্পর্ধার সীমা ছাড়িয়ে পাকিস্তান নামক দেশটি মিথ্যাচারে নেমেছে অতীতের মতোই। একাত্তরে বাংলাদেশ দখল করে হানাদাররা নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছিল। পুরো বিশ্ব তা দেখেছে। গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিবেকবান মানুষরা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল। প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছিল অনেকে। তারা চেয়েছিল শুধু বাংলাদেশের ভূমি থাকবে, আর দেশের সব লোককে তারা হত্যা করবে। পাকিস্তানী হানাদাররা পোড়ামাটি নীতিগ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ বিষয়ে। সবাইকে হত্যা কর, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দাও এবং সব লুটপাট করে নিয়ে যাও- এই ছিল তাদের নীতি। এই নীতির পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছিল পাকিস্তানীরা একাত্তরে। তা অস্বীকার করতে পারে, এমন মানবজন্ম কারও হতে পারে না। চুয়াল্লিশ বছর পার হয়ে গেল, এখনও পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। দুঃখ প্রকাশও করেনি। বাংলাদেশ অপেক্ষা করেছিল, ওআইসি ও সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে পাকিস্তান তার অতীত ঘৃণ্য কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। তদুপরি বিভিন্ন সময়ে তাদের আচরণ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর মধ্য দিয়ে বাঙালী হত্যার অভিশাপে জর্জরিত হয়ে পাকিস্তান সীমাহীন ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে যাচ্ছে। অবশ্য ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করা কিংবা ঔদ্ধত্য প্রকাশ এবং মিথ্যাচার পাকিস্তানীদের মজ্জাগত। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানীরা ত্রিশ লাখ বাঙালীকে হত্যা এবং চার লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে। কোটি কোটি বাঙালী উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছিল। ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয়ে শরণার্থীর অমানুষিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। তার মাসুল বাঙালীকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দিতে হয়েছিল। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ১৯৫ জন পাকিস্তানী হানাদারের বিচার করার অঙ্গীকার করেছিল পাকিস্তান ১৯৭৪ সালে। সিমলা চুক্তিতে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী গৃহীত সিদ্ধান্ত পাকিস্তান কার্যকর করেনি। তারা হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করে যে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছে, তাতেও গণহত্যার বিষয়টি সামনে এসেছে। কিন্তু সেই চুক্তিকে বিকৃত করে পাকিস্তানীরা এখন যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, তা তাদের স্বভাবগত মিথ্যাচারের নামান্তর। একাত্তর সালেও তারা বিশ্ব বিবেককে মিথ্যাচারে ভোলাতে চেয়েছিল যে, তারা দুষ্কৃতকারী হত্যা করছে। নির্লজ্জ বলেই তারা আজও বলতে পারছে, একাত্তরে কোন গণহত্যা হয়নি। নরাধমরা একাত্তরে বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হেরে গিয়েছিল নয় মাসের যুদ্ধে। সেই পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি বলেই স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা সত্ত্বেও রাষ্ট্র্রীয় সম্পদের হিস্যা প্রদান করেনি। বরং একাত্তরে তাদের সহযোগী ঘৃণিত রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের রক্ষার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত বাঙালী বংশোদ্ভূত পাকিস্তানীদের বিচার ও সাজা প্রদান করায় তারা মাতম তুলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা থেকে সরে আসার জন্য আহ্বান জানানোর মতো ধৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। তারা ভুলে যাচ্ছে, বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধে বিজয় অর্জন করা স্বাধীন দেশ। আর পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধী ও পরাজিতের দেশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির পূর্বাপর পাকিস্তান যে ভূমিকা নিয়েছে, শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছে, তাতে স্পষ্ট যে, পাকিস্তান এখনও শত্রুর দেশ। তার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করাও দুরূহ। বাংলাদেশের জনগণ জানে পাকিস্তান একটি অভিশপ্ত দেশ। সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে হলে তাদের মিথ্যাচার ছেড়ে ইতিহাসের সত্যকে মেনে নিতে হবে।
×