ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেলহত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৫

জেলহত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

বিকাশ দত্ত ॥ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার পলাতক আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধাকে নি¤œ আদালতের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ এ রায় প্রকাশ করে। একই সঙ্গে পলাতক আসামি মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপীল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, নাজমুন আরা সুলতানা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও মোঃ ইমান আলী। সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার ২ বছর ৮ মাস পর গতকাল ২৩৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর রাতের অন্ধকারে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে। ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে ঘাতকের ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। পরদিন তৎকালীন ডিআইজি প্রিজন কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাতের অন্ধকারে নির্মমভাবে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোঃ মতিউর রহমান রায় দেন। ওই রায়ে পলাতক আসামি রিসালদার (ক্যাপ্টেন) মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মোঃ আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। এর পর ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেয়। রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মারফত আলী শাহ ও আবুল হাশেম মৃধাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের। এ ছাড়া চারজন যাবজ্জীবন কারাদ- থেকে অব্যাহতি পান। অপর আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদ- বহাল থাকে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে আসার পর ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন (লিভ টু আপীল) করা হয়। পরে হাইকোর্টের রায়ে অব্যাহতি পাওয়া দুই আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মোঃ আবুল হাশেম মৃধাকে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি অবিলম্বে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই দিন আদালত আপীলের সারসংক্ষেপ (কনসাইজ স্টেটমেন্ট) ৩০ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলেছিল। সে অনুযায়ী সারসংক্ষেপ ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপীল আবেদন মঞ্জুর করে। আদেশে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদ-ে দ-িত তবে হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোঃ মতিউর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নির্মম হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত পলাতক তিন আসামিকে ফাঁসি ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হচ্ছে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ এবং এলডি দফাদার মোঃ আবুল হাসেম মৃধা। যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্তরা হচ্ছে কর্নেল (অব) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব) সৈয়দ শাহরিয়ার রশীদ, মেজর (অব) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ (বরখাস্ত), লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব) এমএইচএমবি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, লে. কর্নেল (অব) এএম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আহাম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মোঃ কিসমত হোসেন এবং ক্যাপ্টেন (অব) নাজমুল হোসেন আনসার। এছাড়া হত্যাকা-ের পেছনে কোন যড়যন্ত্র খুঁজে না পাওয়ায় আদালত অভিযুক্ত চার রাজনীতিবিদ কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহের উদ্দিন ঠাকুর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মেজর (অব) খায়রুজ্জামানকে বেকসুর খালাস দেয়।
×