ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাইকো মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি ২৮ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১ ডিসেম্বর ২০১৫

নাইকো মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি ২৮ ডিসেম্বর

কোর্ট রিপোর্টার ॥ নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনার পর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ আদেশ দেন। সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আদালতে হাজির হয়ে শুনানিতে অংশ নেন খালেদা জিয়া। ১২টা ২৫ মিনিটে শুনানি শুরু হয়ে ১২টা ৩৫ মিনিটে শেষ হয়। জামিনের পক্ষে আবেদনে বলা হয়, এই মামলায় তিনি আগেও জামিনে ছিলেন। জামিন অপব্যবহার করেননি তিনি। এছাড়া খালেদা জিয়া অসুস্থ। লন্ডনে তাঁর এক চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরও চিকিৎসা বাকি রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করার আরজি জানানো হয়। শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে বলেন, ‘একই ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা ছিল। হাইকোর্টে তাঁর মামলা বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার চলছে। তবে উচ্চ আদালত এ মামলায় এর আগে জামিন দিয়েছিলেন এবং এ মামলা বাতিলে রুল বাতিল করে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। তবে উচ্চ আদালত আদেশে জামিন বহাল রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখা হোক।’ খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে অন্য আসামিদের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এ কারণে তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করার আরজি জানান এই আইনজীবী। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে খালেদা জিয়া আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছালে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে বিএনপি নেত্রীর পক্ষে সেøাগান দেন। আইনজীবীদের মিছিলে পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশ-আইনজীবীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এবং ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এসে সবাইকে শান্ত করেন। নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদন ও এ সংক্রান্ত রুল গত ১৮ জুন খারিজ করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। রায়ে আদালত বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হলো বলেও জানান। আদালত বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তবে জামিন অপব্যবহার না করার শর্তে খালেদা জিয়ার জামিন বিবেচনা করবেন আদালত। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতির মামলাসহ দুর্নীতির পাঁচটি মামলা রয়েছে। এক-এগারোর পরের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলাগুলো করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদক কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে। পরের বছর ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। পরে নাইকো মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি রুল দেন হাইকোর্ট। ওই সময় থেকে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল। চলতি বছরের শুরুতে মামলাটির কার্যক্রম আবার চালু করার উদ্যোগ নেয় দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মোঃ শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
×