ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীস সীমান্তে বিক্ষোভ

বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ গ্রীস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে বিক্ষোভকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গ্রীসের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বিক্ষোভকারী বাংলাদেশীদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের সংখ্যা ৬০-৭০ জন হতে পারে। এছাড়া সেখানের সীমান্তে আটকে পড়া নাগরিকদের ‘ঠোঁট সেলাই’ প্রতিবাদ কর্মসূচীতে বাংলাদেশীরা রয়েছেন। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, গ্রীস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে বাংলাদেশের আটকে পড়া ৬০ থেকে ৭০ জন বাংলাদেশী হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, ‘শুট আস। উই নেভার গো ব্যাক বাংলাদেশ।’ ‘আমাদের গুলি করো। আমরা কখনোই বাংলাদেশে ফিরে যাব না’। গ্রীস ও মেসিডোনিয়া সরকারের প্রতি তারা এই আবেদন জানিয়েছেন। ওই দুই দেশের সীমান্তে শত শত অভিবাসী ও শরণার্থী নাগরিক আটকে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশীও রয়েছেন। এছাড়া ইরান, পাকিস্তানসহ আরও অনেক দেশের অভিবাসী প্রত্যাশী নাগরিকরাও আছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের মাঝ থেকে মেসিডোনিয়া কেবল সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানের নাগরিকদেরই তাদের দেশের ভেতর দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে দিচ্ছে। অন্যদের এখানে আটকে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে তারা সীমান্তে কয়েক দফা বিক্ষোভও করেছেন। অভিবাসী এবং শরণার্থীদের স্রোত থামাতে মেসিডোনিয়ার সেনারা গ্রীসের সঙ্গে তাদের দক্ষিণ সীমান্তে এখন কাঁটা তারের বেড়া তৈরি করছে। তবে শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেখার খবর অস্বীকার করেছে মেসিডোনিয়ার সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রীস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ইতোমধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশী নাগরিকরা দেশে ফিরে আসতে চাইছেন না। সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশী বিক্ষোভকারী নাগরিকদের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ জন হতে পারে বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে গ্রীস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে আটকে পড়া অভিবাসীরা তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখতে অনুমোদন না দেয়ার প্রতিবাদে ঠোঁট সেলাই করে অভাবনীয় এক প্রতিবাদের সূচনা করেছেন। সেই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে বাংলাদেশের অভিবাসী প্রত্যাশী নাগরিকরাও ছিলেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের এথেন্স দূতাবাস। সূত্র জানায়, মেসিডোনিয়া শুধু যুদ্ধাক্রান্ত দেশ থেকে আগতদের জন্য চলাচল সীমিত করলে হাজার হাজার অভিবাসী সীমান্তে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। অর্থনৈতিক অভিবাসী বিবেচনায় বাংলাদেশ এবং মরক্কো থেকে আসা অনেককে সীমান্ত অতিক্রমে বাধা দেয়ায় তারাও এই প্রতিবাদে যোগ দেন। কয়েকদিন ধরে অব্যাহত বিক্ষোভের পর প্রতিবাদের নতুন ভাষা অবলম্বন করে অভিবাসীরা। বিক্ষুব্ধরা তাদের মুখ সেলাই করে, বুকে ও কপালে ‘শুধু স্বাধীনতা’ এরকম শব্দগুচ্ছ লেখে দাঙ্গা পুলিশের সামনে রেল লাইনে বসে প্রতিবাদ করেন। ফ্রান্সের প্যারিসে গত ১৩ নবেম্বরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপীয় দেশগুলোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নতুন করে বিবেচনার আওতায় আনা হয়। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এই হামলায় জড়িত একজনের মৃতদেহের পাশ থেকে জাল সিরীয় পাসপোর্ট পাওয়ার পর এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ইউরোপের ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতারা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সেনজেন চুক্তি যার ফলে ইউরোপের ২৬টি দেশে পাসপোর্ট ছাড়াই ভ্রমণের অনুমোদন রয়েছে তা প্যারিস হামলার পর চাপের মুখে পড়েছে। মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, সেøাভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া বলেছে, তারা শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা লোকদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দেবে। দেশগুলোর এমন কড়াকড়ি আরোপ মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ অভিবাসী অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে বিশেষত জার্মানি ও সুইডেন যেতে চান। এদিকে জার্মান সরকার জানিয়েছে, নবেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮০ হাজারের মতো আশ্রয় প্রার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করেছেন। গত মাসে যার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার। তবে গ্রীস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে এবার নতুন বাধার পরে অভিবাসীদের প্রবেশ এখন হ্রাস পেয়েছে।
×