ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সন্দেহজনক স্থানে অভিযান ॥ কড়া নিরাপত্তা

বগুড়ার মসজিদে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ৬, তিনজন রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৯ নভেম্বর ২০১৫

বগুড়ার মসজিদে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ৬, তিনজন রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার গ্রামে শিয়া মসজিদে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় পুলিশ শনিবার সকালে শিবগঞ্জ এলাকা থেকে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে। তার নাম শামসুল আলম (৩৫)। এ নিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলো তিনজন। পুলিশ জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। এদিকে শুক্রবার রাতে র‌্যাবও তিনজনকে আটক করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে র‌্যাব আটককৃতদের পরিচয় জানায়নি। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের সবগুলো টিম (থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, ডিএসবি, সিআইডি, পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো) মাঠ পর্যায়ে তদন্তে নেমেছে। সন্দেহজনক স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ এখনও জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তদন্তে খুঁটিনাটি সকল বিষয়কেই আমলে নেয়া হয়েছে। কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না। পুলিশ সুপার আশাবাদী শীঘ্রই হামলাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তারপরই প্রেস ব্রিফিং করে জানানো হবে। ওয়েবসাইটে বগুড়ার ঘটনায় উগ্র জঙ্গী সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করেছে এই বিষয়টির ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ সুপার বলেন, এর আগেও কয়েকটি ঘটনায় কথিত আইএস নামের সংস্থাটি দায় স্বীকার করে ওয়েবসাইটে বক্তব্য দিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজখবর করেও কোন প্রমাণ মেলেনি। বগুড়ার ঘটনায় কথিত আইএসের জড়িত থাকার বিষয়টির ওপর নজর রেখে তদন্ত চলছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চককানু গ্রামে শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা মুসল্লিদের ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করলে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। এই ঘটনার পর শিবগঞ্জ উপজেলাসহ বগুড়ার আশপাশের সকল এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকা ও ক্রসরোডগুলোতে পুলিশ ও গোয়েন্দাপুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশ রয়েছে। সন্দেহজনক মোটরসাইকেল ও যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। শিবগঞ্জ ও বগুড়ায় শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান ছাড়াও খ্রীস্টান বৌদ্ধ আহমেদীয়া, কাদিয়ানী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিদেশীরা কর্মরত আছেন এমন প্রতিষ্ঠানের ওপর পুলিশী নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। কোথাও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিবগঞ্জের চককানু হরিপুরে শিয়া মসজিদ ছাড়াও হরিপুর কিচক বেলাই মহাস্থানগড় ও বগুড়া সদরের সবুজবাগে শিয়াদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পুলিশ জানায়, তাদের সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। মসজিদে হামলার ঘটনায় কথিত জেএমবি (উগ্রজঙ্গী) জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহের বিষয়ে পুলিশের এক সূত্র জানান, তদন্তে কোন কিছুকেই উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। খুবই নিকট অতীতে শিবগঞ্জের ওই এলাকাগুলোতে জেএমবির অস্তিত্ব ছিল। শিয়া মসজিদে হামলার ঘটনায় আটক আনোয়ার হোসেন জেএমবির ক্যাডার ছিল। বছর পাঁচেক আগেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওই সময় শিবগঞ্জের আলিয়ারহাট, মাঝিহট্ট, দামপাড়াসহ কয়েক এলাকায় জেএমবির কর্মকা-ের বিষয়টি জানা যায়। সেখানকার একটি মাদ্রাসা থেকে জেএমবি সদস্য সংগ্রহ করে তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। শিয়া মসজিদে হামলার পর পুলিশের তদন্তে এই বিষয়গুলো এসেছে। এক সূত্র জানায়, কথিত জেএমবির নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের (সিদ্দিকুল ইসলাম) বিচারে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার পর জেএমবি ঝিমিয়ে পড়ে। বছর দুয়েক হয় এই অবৈধ এই সংগঠনটিতে (জেএমবি) মৗলবাদী একটি দলের ছাত্র সংগঠনের কিছু ক্যাডার ঢুকে পড়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানের হামলায় কথিত জেএমবির সম্পৃক্ততা খুঁজে পাচ্ছে পুলিশ। ওই সূত্র জানায় এরা কাদের হয়ে কাজ করছে এবং হামলা চালিয়ে কারা ওয়েবসাইটে দায় স্বীকার করে তাদের কথিত অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, দেশকে ফের অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার সুপরিকল্পিত ও সুগভীর ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা কিনা এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×