ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অশ্বিন ঘূর্ণিতে কুপোকাত দক্ষিণ আফ্রিকা, পিচের সমালোচনায় আকরাম-ক্লার্ক

তিন দিনেই জয় ভারতের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

তিন দিনেই জয় ভারতের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এটা কি টেস্ট না টি২০Ñ ভারতে এসব কি হচ্ছে? হুট করে এক-আধটা ম্যাচে এমনটা হতে পারে, তাই বলে নিয়মিত! মাত্র আড়াই দিনে প্রথম টেস্টের ফয়সালা, বৃষ্টিময় দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথমদিন লাঞ্চের পরই অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা, এবার তিন দিনে তৃতীয় টেস্টটা জিতে নিল ভারত। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বিরাট কোহলির দল। ক্রিকেট বিশ্বই যেন গোলক ধাঁধায় পড়ে গেছে। মোহালি, ব্যাঙ্গালুরু হয়ে নাগপুরÑ পিচের আচরণে রীতিমতো বিস্মিত ক্রিকেটের রথী-মহারথীরা। ওয়াসিম আকরাম-রিকি পন্টিং তো রীতিমতো ক্ষুব্ধ। সেই সাজানো চিত্রের মঞ্চায়ন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিনবিষে নীল অতিথি প্রোটিয়ারা। তার ঘূর্ণিজাদুর কল্যাণেই দ.আফ্রিকাকে ১২৪ রানের বড় ব্যবধানে গুঁড়িয়ে দেয়া। দীর্ঘ নয় বছর পর এই প্রথম দেশের বাইরে কোন সিরিজে হার র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল প্রোটিয়াদের! নাগপুরের পিচ যেন ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি। যেখানে একেবারে প্রথমদিনের প্রথম সেশন থেকে ছড়ি ঘুরিয়েছেন স্পিনাররা। প্রথম দু’দিনে ৩২ উইকেটের পতন ঘটলে ফলটা অনুমেয় হয়ে উঠতে বাধ্য। ভারত থামে ২১৫ ও ১৭৩ রানে। আর লজ্জার ভরাডুবির পথে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৭৯তে অলআউট। ৩১০ রানের জয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংটা মন্দ করেননি অতিথিরা। ১৮৫তে অলআউট হয়ে হেরেছে ১২৪ রানে এই যা! শুক্রবার তৃতীয় দিনের শুরুটা হয় অনুমিত ধারায়। প্রথম ১০ ওভারেই সাজঘরে ডিন এলগার ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। মাত্র ৫৮ রানে প্রোটিয়াদের ৪ উইকেট ফেলে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই হয়ত ম্যাচটা জিতে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল ভারতীয়রা। কিন্তু নিশ্চিত হার দেখা ম্যাচে প্রতিরোধের ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন হাসিম আমলা (৩৯) আর ফ্যাফ ডুপ্লেসিস (৩৯)। পঞ্চম উইকেটে ৭২ রান যোগ করেন। এক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১৩০! যখন সবার আগ্রহ ছিল একটি বিষয় নিয়েই, ম্যাচ শেষ করতে ভারতীয় স্পিনাররা আর কতটা সময় নেবেন? আরও খেলাশা করে বললে অশ্বিন? খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। চা বিরতির পরই শেষ ৪ উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৮৫ রানে গুটিয়ে দিয়েছেন অশ্বিন। ৬৬ রানে ৭ উইকেট, প্রথম ইনিংসে ৫Ñ সব মিলিয়ে ম্যাচের ১২ শিকারে অবধারিত ম্যাচসেরা ভারতীয় এ স্পিনার। অমিত মিশ্রর শিকার ৩। অপর ঘূর্ণিবোলার জাদেজা পিচের দিকে তাকিয়ে কেবল মাথা চুলকে গেছেন! নাগপুরে স্পিন-বান্ধব উইকেটের ফায়দাটা পুরোপুরিই তুলে নিয়েছেন অশ্বিন। এ নিয়ে চলতি বছর (২০১৫) টেস্টের সর্বোচ্চ ৫৫ শিকার তারই। অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেন, ‘অশ্বিন দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ও এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর স্পিনার। মনে রাখতে হবে ওর জন্যেই ক’দিন আগে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জিতেছি।’ আকরাম-পন্টিংরা ক্ষুব্ধ হলেও পিচ নিয়ে একদমই আফসোস নেই বিজয়ী অধিনায়কের। কোহলি যোগ করেন, ‘উইকেট খুব চ্যালেঞ্জিং। এখানে আমাদের যেমন ব্যাটিং-বোলিং করার কথা ছিল আমরা সেটিই করেছি।’ ভারতের এই ধরনের উইকেট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন অসি তারকা মাইকেল ক্লার্কও। ক্রিকেট ব্যক্তিত্বরা বলছেন, নাগপুরের পিচ স্বয়ং ‘শয়তানের’ প্রতিভূ। কেউ চান পিচের নামে এইসব ‘আখড়া’ বন্ধ হোক! স্কোর ॥ ভারত প্রথম ইনিংস ২১৫/১০ ৭৮.২ ওভার (বিজয় ৪০, জাদেজা ৩৪, সাহা ৩২, কোহলি ২২, পূজারা ২১, অশ্বিন ১৫, রাহানে ১৩, ধাওয়ান ১২; হারমার ৪/৭৮, মরকেল ৩/৩৫) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৩/১০ ৪৬.৩ ওভার (ধাওয়ান ৩৯, পূজারা ৩১, রোহিত ২৩, কোহলি ১৬, মিশ্র ১৪; তাহির ৫/৩৮, মরকেল ৩/১৯)। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ৭৯/১০ ৩৩.১ ওভার (ডুমিনি ৩৫, হারমার ১৩, ডুপ্লেসিস ১০, এলগার ৭, রাবাদা ৬, তাহির ৪; অশ্বিন ৫/৩২, জাদেজা ৪/৩৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৮৫/১০ ৮৯.৫ ওভার (আমলা ৩৯, ডুপ্লেসিস ৩৯, ডুমিনি ১৯, ভিলাস ১২, তাহির ৮, হারমার ৮, রাবাদা ৬; অশ্বিন ৭/৬৬, মিশ্র ৩/৫১)। ফল ॥ ভারত ১২৪ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ অশ্বিন (ভারত)। সিরিজ ॥ চার টেস্টের সিরিজে ভারত ২-০তে এগিয়ে।
×