ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জয়ের আগাম সৌরভেও কলঙ্কের ছায়া

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

জয়ের আগাম সৌরভেও কলঙ্কের ছায়া

অনলাইন ডেস্ক॥ মরণের ঘূর্ণি পিচে এবি তুমি টিকবে কতক্ষণ? সাধারণ বিচারবুদ্ধি বা স্কোরবোর্ড বিচারে প্রাক্-শুক্রবার ভারতীয় ড্রেসিংরুমের আগাম স্লোগান আন্দাজের ব্যাপার থাকলে, অনায়াসে তার রিংটোন বোধহয় এ রকম কিছু করে দেওয়া যেত। অগস্টের কলম্বোর পর শেষ নভেম্বরের ভারত। বিদেশের পর এ বার দেশ। যেখানে চেনা চিত্রনাট্য ধরে চললে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় সম্ভবত ঘরের মাটিতে তাঁর প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়টাও সম্পন্ন করতে চলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার আর আটটা উইকেট চাই, হাতে পড়ে তিনটে রৌদ্রজ্জ্বল দিন। ড্রয়ের কোনও সম্ভাবনা বেঁচে নেই। যে কোনও একটা টিম জিতবে এবং অলৌকিক হলে শুধু টিমটার নাম হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। একটা আমলা, একটা এবি ডে’ভিলিয়ার্স, একটা জেপি দুমিনি শুধু তুলতে হবে। আরও ভাল করে বললে, ফর্মে থাকা শুধু একজনকে চাই, যাঁর নাম ডে’ভিলিয়ার্স। প্রতিষেধক হিসেবে রবিচন্দ্রন অশ্বিন আছেন। রবীন্দ্র জাডেজা আছেন। অমিত মিশ্র থাকবেন। অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। ঠিক আছে, কেউ না পারলে টিমের ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ আছে, লোকে যাকে চিনছে জামথা পিচ নামে! বিরাট কোহলির তো বৃহস্পতিবার রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যাওয়া উচিত। সুখকর মধুচন্দ্রিমার মঞ্চ তৈরি। বল ঘুরছে, ব্যাটসম্যান নাচছে, এবিদের বাঁচাবে কে? দুঃখের হল, বিরাট কোহলি সম্ভবত এর পরেও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন না। আর কেউ নয়, ওই পরম-নির্ভরতার টুয়েলফথ ম্যানের জন্য। পারবেনও বা কী ভাবে? ক্রিকেটবিশ্বে যে আগুন জ্বলছে। এক-আধ জন নয়, আসরে একের পর এক মেগা ক্রিকেট-ব্যক্তিত্ব। কেউ বলছেন, নাগপুর পিচ স্বয়ং শয়তানের প্রতিভূ। কেউ তেলেবেগুনে খিঁচিয়ে উঠে আইসিসির কাছে কড়া দরবার পেশ করেছেন, পিচের নামে এ সব ‘আখড়া’ তৈরি বন্ধ হোক! আর নামগুলো মোটেও এলেবেলে নয়। মাইকেল ভন। ওয়াসিম আক্রম। মাইকেল ক্লার্ক। অযথা মুখবন্ধে ঘুরপাক না খেয়ে সোজাসুজি কাহিনিতে ঢুকে পড়া যাক। টেস্ট ক্রিকেটের সলজ্জ বিজ্ঞাপন পেশ করে বৃহস্পতিবার গোটা ক্রিকেটবিশ্বের বিতর্কসভায় নিজেকে বসিয়ে ফেলল নাগপুর। ‘অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে যদি দেশ উত্তাল হয়ে থাকে, তবে ক্রিকেট দুনিয়া আপাতত ফুটছে ঘূর্ণি পিচ নিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটের একশো আটত্রিশ বছরের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক ঘটনা কম কিছু হয়নি। ডগলাস জার্ডিনের কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজ। কিংস্টনের উইকেটে বিষেণ সিংহ বেদীর টিমের অর্ধেককে মাইকেল হোল্ডিংয়ের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া। জামথার বাইশ গজ কাউকে এ দিন হাসপাতালে পাঠায়নি। শুধু টেস্ট ক্রিকেটের আত্মাকে পঙ্গু করে ছেড়ে দিয়েছে। স্রেফ একটা ‘খোঁয়াড়ে’। কেউ শুনলে বিশ্বাস করবে, টেস্ট ম্যাচের মাত্র একদিনে কুড়ি উইকেট উড়ে যাচ্ছে! যে ব্যাটসম্যান রাত-প্রহরী হিসেবে আগের দিন নেমেছিলেন, তিনিই আবার পরের বিকেলে নামছেন একই ভূমিকায়? টিমের দ্বিতীয় ইনিংসে? রবিচন্দ্রন অশ্বিনের হাত থেকে আজ এমন একটা বল বেরিয়েছে, যা মাইক গ্যাটিংকে করা শেন ওয়ার্নের ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরিকে’ প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়ে গেল! এটা বলা ঘোরতর অন্যায় হবে যে, দিনের কুড়িটা উইকেট এ দিন নাগপুর বাইশ গজ নিয়েছে। নেয়নি। কুড়িটার মধ্যে গোটা বারো ব্যাটসম্যান বিপক্ষকে দিয়ে এসেছে। কিন্তু দিয়ে এসেছে, ঘূর্ণির আতঙ্কে। কোনটা খেলব, কোনটা খেলব না, কোনটায় পা বাড়াব, কোনটায় বাড়াব না-র ধাঁধায় আক্রান্ত হয়ে। ভাবা যায়, একটা সিনেমা শেষ হতে যে সময়টুকু লাগে, তার চেয়েও কমে আজ সকালে শেষ হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা! মাত্র ১২৭ মিনিটে, খেলা শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যে! আর তার পর ভারত কি না নেমে ঠিকঠাক দু’টো সেশনও বাঁচল না! ঘরের মাঠে তারাও শেষ, একশো তিয়াত্তরে। মোহালির সঙ্গে নাগপুরের নিরন্তর মিল খোঁজা বাদ দিন। এ টেস্ট তো তার প্রথম দিনের সঙ্গে দ্বিতীয়ের মহানাটকীয় সব মিল ছেড়ে যাচ্ছে। গত কাল ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা নামল। দু’উইকেট পড়া দিয়ে দিন শেষ। এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস শেষের পর ভারত নামল। এবং শেষ পর্যন্ত আবার দক্ষিণ আফ্রিকা আর আবারও দু’উইকেট পড়া দিয়ে দিন শেষ! সূত্র : আনন্দবজার পত্রিকা
×