স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর ও দিনাজপুর ॥ এবার রংপুরের ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের ফাদার রেভারেন্ড বার্নাবাস হেমরম এবং বেসরকারী তিনটি সংস্থার শাখা প্রধানসহ ১০ জনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ফাদার এবং সংশ্লিষ্ট সবাই চরম আতঙ্কে রয়েছে। হুমকির পর ওই চার্চসহ অন্য ব্যাপ্টিস্ট চার্চগুলোতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলেও সেখানে অবস্থানরত পরিবারগুলোর রাত কাটছে নির্ঘুম। এছাড়া দিনাজপুরেও এক ফাদারকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।
ফাদার জানান, বুধবার সন্ধ্যায় তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ডাক বিভাগের খামে চিঠি পান তিনি। সেটি খুলে দেখেন তিনিসহ ১০ জনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। পরে রাতে তারা দাফতরিকভাবে এক জরুরী সভা করে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে মিডিয়ার কাছে তুলে ধরেন তারা। চিঠিতে প্রাপক হিসেবে ফাদারের নাম এবং প্রেরক হিসেবে নাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছেÑ অতুল রায়, পিতাঃ গণেশ রায়, গ্রাম: উত্তরপাড়া, পোস্ট: কমলপুর, সদর: দিনাজপুর।
চিঠিতে প্রেরকের নামে একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উল্লেখ করা হলেও চিঠির শুরুতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ইয়া আল্লাহ’। আর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘খ্রীস্টানের নেতাগণ, তোমরা যা খাবার ইচ্ছা করে তা খেয়ে নাও, এই মুহূর্ত থেকে জেনে রাখবা আগামী যে কোনদিন, সময় বা মুহূর্তে তোমাদের বিদায় দেব। এরপর রয়েছে যে দশজনকে হুমকি দেয়া হয়েছে তাদের নাম। তার নিচে রয়েছে আবার হুমকি। এবার বলা হয়েছে, ‘এবার আমাদের পরিকল্পনা বাংলাদেশে যারা খ্রীস্টান ধর্ম প্রচার করে তাদের সকলকে এক এক করে বিদায় দেয়া। আমাদের দেশে শুধু মুসলিম আইন সারাদেশে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশে মুসলমান আছে কিনা এবার সরকার টের পাবে।’
চিঠিতে যে তিনটি বেসরকারী সংস্থার শাখা পরিচালককে হুমকি দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট রংপুর সদরের পরিচালক গিয়াস, ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরিচালক গ্লোরিয়াস দাস ও কৈননিয়া পীরগাছার পরিচালক। এছাড়াও আর যাদের নাম রয়েছে তারা হলেনÑ মানিক, এজি চার্চ, রংপুর সদর, মাইকেল, কাথলিক চার্চ, রংপুর সদর, মনতাজ, ইয়োগী চার্চ, রংপুর সদর, লাবলু, ফেইথ বাইবেল চার্জ, পীরগাছা, জগদীশ, চার্চ অব গড, কাউনিয়া, আজিজুল, সবুর, সাতদরগা, পীরগাছা।
আঞ্চলিক ব্যাপ্টিস্ট সংঘের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাস জানান, এই মিশনে প্রায় ৪০ পরিবারের অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ বসবাস করেন। তারা সকলেই এখন চরম উৎকণ্ঠিত। ফাদার রেভারেন্ড বার্নাবাস হেমরম জানান, যদিও চিঠির প্রেরক হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তিনি তা বিশ্বাস করেন না। কারণ চিঠির শুরুতেই রয়েছে ‘ইয়া আল্লাহ’ লেখা। কোন হিন্দু মানুষ আল্লাহ লিখতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বিষয়টিকে অসামঞ্জস্য বলে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ঘটনার পর থেকে সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক মুহিবুল ইসলাম জানান, সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের রয়েছে। অন্যদিকে, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জিলানী জানান, এটি একটি উড়ো চিঠি। তারপরও আমরা বিয়টির খোঁজখবর করছি।
দিনাজপুরে ধর্মযাজককে হুমকি ॥ দিনাজপুরে এবার খ্রীস্টান ধর্মযাজককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে এ হুমকি দেয়া হয়। তবে হুমকি দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুনরায় এসএমএস দিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। বীরগঞ্জের নিজপাড়া ইউনিয়নের চকবেনারসী এলাকায় অবস্থিত ক্যাথলিক চার্চের ফাদার কার্লসকে এই হত্যার হুমকি দেয়া হয়। হুমকি দেয়ার পরপরই সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে ক্যাথলিক চার্চের ফাদার কার্লসের মোবাইল ফোনে একটি মোবাইল মেসেজ আসে। সেখানে লেখা ছিল ‘আইএস’র নির্দেশে আপনাকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে হত্যা করা হবে, তা আপনি নিজপাড়া বা জেলা শহর দিনাজপুরে থাকেন। যা খুশি খেয়ে নিন।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে পুনরায় ফাদারের মোবাইলে মেসেজ আসে এবং সেখানে লেখা ছিল ‘আমি কোন আইএস’র সদস্য নই, এটি একটি দুষ্টুমি করা হয়েছে।’ এরপরে একই নম্বর থেকে বীরগঞ্জ থানার ওসির মোবাইলেও একই মেসেজ পাঠানো হয়।
ওসি জাহাঙ্গীর আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আদিবাসী এক মেয়ে মোবাইলে এই এসএমএস দিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: