মিথুন আশরাফ ॥ ম্যাচ শেষ হতেই হাসিমাখা মুখ নিয়ে ড্যারেন সামি হেঁটে হেঁটে সাকিব আল হাসানের কাছে আসছেন। আর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নাচতে নাচতে সামির কাছে গেলেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে ম্যাচে কী ঘটেছে। সাকিবের দল রংপুর রাইডার্স জিতেছে। কোন্ দলের সাথে? সেই দল, যে দলটি বিপিএলের তৃতীয় আসরে শুধু হারই দেখছে। দলটির নাম সিলেট সুপার স্টারস। টানা তৃতীয় ম্যাচে হেরেছে দলটি। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে সাকিবের দল ৬ রানে হারিয়ে দিয়েছে মুশফিকুর রহীমের দল সিলেটকে।
এত কম ১০৯ রান করেও যে জিতেছে রংপুর তাতেই সাকিবের এত খুশি, এত আনন্দ! দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করার পর বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে যে দলকে জেতান এতে আনন্দ ডাবল হয়ে যায়।
কোনভাবেই দুর্দশা কাটছে না সিলেটের। প্রথম দুই ম্যাচে জিততে জিততেও হেরেছে। দুইবারই ১ রানে হার হয়েছে। বৃহস্পতিবারও মাত্র ৬ রানের হার হল। রংপুর চার ম্যাচ খেলে ৩টিতেই জয় তুলে নিল।
টস জিতল রংপুর। আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু আহামরি কিছু করতে পারল না। পেসার মোহাম্মদ শহীদের (৪/১২) বোলিং তোপে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রান করল। সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ রান আসল। সিলেট এ রানও করতে পারল না! ১৯.২ বলে গিয়ে ১০৩ রান করতেই অলআউট হয়ে গেল সিলেট। দলের পক্ষে মুমিনুল হক ২৯ ও মুশফিক অপরাজিত ২৫ রান করেন। রংপুরের ইনিংস শেষ হতেই মনে করা হল অবশেষে বুঝি সিলেট জয় পেতে চলেছে। কিন্তু কী দেখা গেল, শেষ পর্যন্ত হারই হল নিয়তি। শুরুতে রংপুরের যে অবস্থা হয়েছে সিলেটেরও একই পরিণতি হয়েছে। ৫ রানে যে জসুয়া কব আউট হন, এরপর থেকে একটু বিরতি দিয়ে ১০০ রানেই ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ৩১ রানে গিয়ে দুই উইকেটের পতন ঘটে। এরপর ৫২ থেকে ৫৬ রানের মধ্যে ৪ রানেই আরও ৩ উইকেট পড়ে যায়। মুশফিক ছাড়া দলের নির্ভরযোগ্য সব ব্যাটসম্যানই আউট হয়ে যান ততক্ষণে। কব, দিলশান মুনাভিরা, মুমিনুল হক, নাজমুল ইসলাম ও রবি বোপারা আউট হয়ে যাওয়াতেই সিলেটের জয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়ে যায়। মুশফিক থাকেন। কিন্তু তার সঙ্গে যারা থাকেন তাদের দিয়ে যে ভরসা করা মুশকিল। তাই ঘটেছে। দেখতে দেখতে ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ১০ বলে জিততে যখন ১০ রানের প্রয়োজন তখনই ৯ উইকেট হারায় সিলেট। তখন সবারই ধারণা হয়ে যায় হারের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছে মুশফিকের দল। শেষে ৬ বলে জিততে ৭ রানের প্রয়োজন থাকে। হাতে থাকে ১ উইকেট। এমন সময়ে বল করতে আসেন আবু জায়েদ। অজন্থা মেন্ডিস ও মুশফিক ব্যাটিংয়ে থাকেন। তবে মেন্ডিসকে বলের মুখোমুখি হতে হয়। প্রথম বলেই এলবিডাবলিউ আউটের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। তবে হয়নি। কোন রানও হয়নি। দ্বিতীয় বলে গিয়ে মেন্ডিস ছক্কা হাঁকাতে যান। সেখানেই বিপত্তি ঘটে। লং অনে সেনানায়েকে ক্যাচ ধরে ফেলেন। সেই সঙ্গে ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায় সিলেট।
এর আগেরদিন শুরুতে ব্যাট করে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হেসে খেলে হারানোয় হয়তো এদিনও প্রথমে ব্যাট করার দিকেই মনোযোগী হন রংপুরের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাটও করেন। কিন্তু ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু বিপত্তির মধ্যেই থাকে দল। মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারে। এর মধ্যে সাকিব সবচেয়ে বেশি ৩৩ রান করেন। থিসারা পেরেরার ব্যাট থেকে ২১ ও লেন্ডল সিমন্সের ব্যাট থেকে ১৩ রান আসে। এতটাই করুণ দশা হয় রংপুরের। শুরুতে ১৯ রানে যে সৌম্য সরকার আউট হন, এরপর এক এক করে ১০৮ রানে গিয়ে ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়। দুর্দান্ত বোলিং করেন শহীদ। গুরুত্বপূর্ণ চারটি উইকেটই নেন তিনি। শুরুতেই সৌম্যকে আউট করে রংপুরের ইনিংসে ধস নামান। এরপর যখন সাকিব দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তাকেও আউট করেন।
শেষে গিয়ে সচিত্র সেনানায়েকে ও আরাফাত সানির উইকেটগুলোও দ্রুত তুলে নেন। সাকিব-পেরেরা মিলে যে পঞ্চম উইকেটে ২৬ রানের জুটি গড়েন সেটিই রংপুর ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি হয়ে থাকে। এত কম রান করেও শেষ পর্যন্ত সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয় হল রংপুরেরই।