ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উদ্বোধনের অপেক্ষায় ভোলার গ্যাসভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্ল্যান্ট

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

উদ্বোধনের অপেক্ষায় ভোলার গ্যাসভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্ল্যান্ট

হাসিব রহমান, বোরহানউদ্দিন থেকে ফিরে ॥ দেশের বিদ্যুত সমস্যা নিরসনে দ্বীপজেলা ভোলার বোরহানউদ্দিনে গ্যাসভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কমবাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ২১০ থেকে ২১২ মেঘাওয়াট বিদ্যুত। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী মাসে এটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা জানিয়েছে, আশা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে এখনও তাদের কাছে কোন প্রোগ্রাম আসেনি। এদিকে এ প্ল্যান্টটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ এ বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে বিদ্যুত সরবরাহের ফলে দক্ষিণাঞ্চলে একদিকে যেমন বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা মিটবে তেমনি ভোলার শিল্পকারখানা স্থাপনের দাবি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে। স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৩ সালের দিকে ভোলার বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া এলাকায় আবিষ্কৃত হয় শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র। ওই গ্যাস প্ল্যান্ট থেকে ২০১০ সালের দিকে জেলা সদরে সাড়ে ৩৪ দশমিক মেগাওয়ার্ট ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক প্রথম একটি রেন্টাল পাওয়ার মেশিন চালু হয়। এরপর ওই প্ল্যান্টে এ সরকারের সময়ে আরও ২৪ মেগাওয়াট ইঞ্জিনযুক্ত করা হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় জেলা সদরে পৌর এলাকায় গৃহস্থালি কাজে গ্যাস সংযোগ চালু করা হয়। এদিকে গ্যাসসমৃদ্ধ দ্বীপজেলা ভোলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ থাকলেও তা এতদিন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ না নেয়ার মূল্যবান এ খনিজ সম্পদ তেমন কোন কাজে আসেনি। ফলে গড়ে ওঠেনি কোন শিল্প কলকারখানা। কিন্তু বর্তমান সরকার ভোলার গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিতে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা গ্রামে প্রায় ২২ একর জমির ওপর ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২২৫ মেগাওয়াট কমবাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের (সিসিপিপি) নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল হাসান জানান, চায়নার চেংদা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড নির্ধারিত সময়ের আগেই চলতি বছরের জুলাই মাসে এর যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ওই প্ল্যান্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষমূলকভাবে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই প্রধানমন্ত্রী এ বিদ্যুত প্ল্যান্টের উদ্বোধন করবেন বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাওয়ার প্ল্যান্টের ইলেকট্রিকাল বিভাগ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ এরশাদ আলী বলেন, এখানে মার্ক সিসি কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে ২টি জিটি ইউনিট এবং একটি স্টিম টারবাইন চলছে। প্রতিদিন এ প্ল্যান্টে ৩২ এমএম সিএফটি গ্যাস ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রকৌশলীসহ ৬৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্টাফ প্ল্যান্টে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। পাশাপাশি চায়নার প্রকৌশলীরাও কর্মরত রয়েছে। পাওয়ার প্ল্যান্টের মধ্যে রয়েছে তিনটি ইউনিটের সমন্বয়ে ২২৫ মেগাওয়াট জেনারেটর, প্রশাসনিক ভবন, রেস্ট হাউস, অফিসার ডরমিটরি, স্টাফ ডরমিটরি, মসজিদ, ওয়ার্কশপ ও ২৩০ কেভি সাব স্টেশন। এদিকে বিদ্যুত প্ল্যান্ট শীঘ্রই উদ্বোধন হতে পারে এমন খবরে আনন্দে ভাসছে বোরহানউদ্দিন তথা দ্বীপজেলা ভোলার মানুষ। বোরহানউদ্দিন পৌরসভার মেয়র মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি এখন পূরণ হতে যাওয়ায় আমরা আনন্দিত।
×