ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইমরান হোসেন

গানে গানে নিউইয়র্ক মাতালেন তানভীর তারেক

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

গানে গানে নিউইয়র্ক মাতালেন তানভীর তারেক

সম্প্রতি নিউইয়র্কে গান আর টিভি উপস্থাপনার কাজে টানা ৩৫ দিনের দীর্ঘ সফরে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে ফিরলেন এই তরুণ প্রতিভাবান শিল্পী-সঙ্গীত পরিচালকসহ অনেক পরিচয়ের বাহক এক সাংস্কৃতিক কর্মী। নিজের পরিচয়ে এভাবেই বলেন তিনি। তানভীরের কথায়, ‘আমি স্র্রেফ শোবিজ ওয়ার্কার। জীবনে অন্য কিছু করবো না; বা ১০টা -৫টা অফিস আমাকে দিয়ে হবে না বলে আমার আনন্দের যাবতীয় উপকরণগুলো আমার আয় উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছি। তাতে ঠকেছি বা জিতেছি কি-না সে হিসেব জানা নাই, তবে আনন্দ কুড়িয়েছি অফুরন্ত। স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড থেকে ব্রোঞ্জে একটি প্রোগ্রামে গান গাইতে যাবার পথে এক ভক্তের জীপ গাড়িতে চড়ে যখন হাডসন রিভার পার হচ্ছিলেন তানভীর, তখন আয়োজকদের অনেক তাড়া থাকার সত্ত্বেও গাড়ি থামিয়েছিলেন তানভীর। হাতের গিটারটা নিয়ে নেমেছিলেন সেই বিখ্যাত নদীপাড়ে। গাড়ি পার্কে রেখে, নদীর পাশে সাইক্লিং ও জগিং করার ছোট্ট পথে যে সাদা বেঞ্চ থাকে, তাতে খানিকক্ষণ বসে ভেবেছিলেন, গিটার হাতে গুনগুন করে আওড়েছেন নিজের বোনা সুর। স্বপ্নগুলো ধরার আনন্দ খুঁজছিলেন তখন এই যুবক। তানভীরের কথায়, ‘আমার গ্রামের বাড়ি ভান্ডারিয়ার গাজীপুরে পোমা নদীর জলাধারে বসে সেই কলেজ লাইফে বিভিন্ন ইংরেজী কবিদের লেখা এই হাডসন রিভারের কথা যখন পড়েছিলাম! সেই কোন অতীত বিকেলেও তো ভাবিনি একদিন এমন পড়ন্ত দুপুরে সেই কবিতার শব্দস্র্রোত বেয়ে প্রায় স্র্রোতহীন এই মুগ্ধতার নদীটির পাশে বসবো! হয়তো জীবনটা এমনই। সুন্দর। তার চেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা।’ নিউইয়র্কের অগণিত পরিচিত মুখ আমার সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক কর্মমুখর জীবনে তিনজন মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা হলেন: সঞ্জীব চৌধুরী, কবির বকুল ও মাহবুব আজীজ। এই তিনজনই আমার প্রফেশনাল গুরুজন। দীর্ঘ ১৬ বছরের সাংবাদিকতা ও গানের ক্যারিয়ারে প্রত্যেকের আমি অনেক বকুনি খেয়েছি, অন্যায় আবদার, এমনকি মান অভিমান হয়েছে বড় ভাইদের সাথে। তারা আমায় বারবার ক্ষমা করেছেন, শিখিয়েছেন, ভালোবেসেছেন। কিন্তু প্রত্যেকের কাছে প্রতিনিয়ত আমি শিখেছি, পরামর্শ নিয়েছি। আমার একটি অডিও এ্যালবাম আমি আমার এই তিন প্রাণের মানুষকে উৎসর্গও করেছি। তাদের আশীর্বাদেই হয়তো আমার প্রথম সফরে এত সাকসেসফুলী শো করতে পেরেছি। কারণ নিউইয়র্কে এসে কমপক্ষে আমার ১২ জন স্কুল বেলার বন্ধু, প্রায় অর্ধশত কলিগ ও পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। যাদের সাথে আমার সম্পর্কের চলাচল দীর্ঘদিনের। আমি তাই আজীবন এই সম্পর্কগুলো সঞ্চয় করেছি। ৮টি স্টেজ শো ও এক ডজন টিভি শো! নিউইয়র্কে ৮টি লাইভ স্টেজ শো ও ১২টি টিভি শো ছাড়া বিশ্বখ্যাত চ্যানেল এবিসি ভিজিট ও সেখানকার একটি ওয়ার্কশপ ইনভাইটেশন নিয়ে এসেছেন তিনি। এছাড়া নিউইয়র্কের বাইরে ফ্লোরিডা ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও গান ও মিউজিক ভিডিওর কাজ করে এসেছেন। এই দীর্ঘ সফর প্রসঙ্গ টানতেই তানভীর বলেন,‘ সবচেয়ে মনে রাখার মতো দুটি স্টেজ শো করেছি। তা হলো, ব্রোঞ্জে হাজার কন্ঠে বাঙালী উৎসব, যে সবে প্রায় ২০ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নিউইয়র্কের আমেরিকান পুলিশদের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ আমার জন্য স্মরণীয়। নিউইয়র্কের জয়া হলে আমি আমেরিকান পুলিশদের অনুষ্ঠানে গিয়ে হতবাক হয়েছি। প্রায় সাড়ে ৫ শ’ বাঙালী এখন নিউইয়র্কের পুলিশ প্রশাসনে! বাঙালী, বাংলাদেশী হিসেবে আমরা এখন অনেক গর্বিত অবস্থানে। আমি কিছু মঞ্চে কিছু কথা বলে দুটি গান শুনিয়ে যখন নেমেছি এক আমেরিকান পুলিশ আমায় জড়িয়ে ধরেছেন। অদ্ভুত ভাললাগার এই সকল মুহূর্ত। এবারের সফরে গিয়েছি আমি আমার বন্ধু কন্ঠশিল্পী তানভীর শাহিনের আমন্ত্রনে। সেখানে গিয়ে তানভীর শাহিনকেও নতুনভাবে চেনা, শাহনাজ রহমত উল্লাহ, আশা ভোসলে, মান্না দে, জলি মুখার্জী, মিতালী মুখার্জী, উদিত নারায়নের মতো বিখ্যাত মানুষদের সাথে তার যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক এবং একই মঞ্চে তাদের সাথে গাইবার অভিজ্ঞতা এমনকি প্রায় প্রত্যেককেই তিনি নিউইয়র্কে প্রথম শো’র আয়োজন করেছেন। তাই এত গোছানো সব অনুষ্ঠান, যা সত্যিকার অর্থেই নান্দনিক। এছাড়া টাইম টিভি ও টিবিএন টুয়েন্টি ফোরে একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তানভীর। মঞ্চে গান গাওয়া প্রসঙ্গে তানভীর বলেন,‘ আমি ঢাকার মঞ্চে খুবই কম গেয়ে থাকি। খুব সিলেক্টিভ কিছু অনুষ্ঠানে গেয়েছি। বেশিরভাগই অডিওতেই শ্রোতারা আমাকে গানে পেয়েছেন। কিন্তু ওখানে প্রবাসী বাঙালীর কাছে আমার ‘তুমি কার’, ‘তোমার কিছুটা জানি’, ‘ঝুম বরষা’, ‘একলা সমুদ্দুর’, চাঁদের শহরে’ গানগুলোর এতটা রেসপন্স পেয়েছি যা ভোলার না। নিজের শিল্পী স্বত্বাসহ ব্যক্তি তানভীর তারেক ঢাকায় যা করেন সেগুলোতেই একটু একটু করে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। বিশ্বখ্যাত টিভি চ্যানেল এবিসির আমন্ত্রনে প্রিয়াংকা চোপড়া অভিনীত সিরিয়াল ‘কুইন্টিকো’র প্রেস শো সহ চ্যানেল ভিজিট তার এই ভ্রমণের অন্যতম অনুসঙ্গ। বিশ্বখ্যাত এবিসি চ্যানেলে দুইদিন! তানভীর তারেক বলেন,‘এবিসি চ্যানেলে প্রথম কোন বাংলাদেশী জাতীয় দৈনিকের বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে আমি এরকম একটি প্রেস মিটে অংশ নিলাম। এটা সত্যিই আমার জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা। এবিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্ল নিলসন প্রেস শো শুরুর আগে আমার সাথে আড্ডা দিলেন অনেকক্ষণ। কফি বানিয়ে খাওয়ালেন। পরে তিনি তাদের ডিজনীওয়ার্ল্ডে ভ্রমণের অফার করলেন আমাকে। এরপর অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে যে সম্মানে উপস্থাপন করলেন যা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এছাড়া সেখানে আমি বিশ্বখ্যাত কন্ঠশিল্পী মার্ক এ্যান্থনীর একটি এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফ্লোরিডায় আমার একটি অনুষ্ঠান শেষ করে সময়মতো ফ্লাইট না পেয়ে নিউইয়র্কে আসতে পারিনি। সেখানকার সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো দুটি। এক বাঙালীদের বিশাল এক সাংস্কৃতিক পরিবার তৈরি হয়ে গেছে। পহেলা বৈশাখ, ঈদে চাঁদরাতের মেহেদী উৎসব, একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, পূজা-পার্বণ সবকিছু এত আম্বড় নিয়ে অনুষ্ঠিহ হয়। যা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এছাড়া নিউইয়র্কের বাঙালী এলাকা জ্যাকশন হাইটস ও জ্যামাইকাতে সান্ধ্য আড্ডায় অংশ নিয়ে তানভীর তারেকের মনে হয়েছে, এ যেন ঢাকাতেই তার অবস্থান। বাঙালীদের এই উত্তরণ প্রসঙ্গে তানভীর তারেক বলেন, মিডিয়া, আইটি সেক্টর , বিজনেসসহ বিভিন্ন অঙ্গনে বাঙালী-বাংলাদেশীরা যেভাবে তাদের সাফল্যের পথ গুনছেন তা একজন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র শোবিজ কর্মী হিসেবে সত্যিই গর্বে বুক ভরে যায়। নিউইয়র্কের স্টুডিওতে রেকর্ডিং গান, নিউইয়র্কে টিভি শো ছাড়াও শিল্পীর প্রমোটার তানভীর শাহীনের নিজস্ব স্টুডিও ‘থ্রি এম স্টুডিওতে’ বেশ কিছু নতুন গানের কাজ করেছেন। যা খুব শীঘ্রই রিলিজ দেবেন। তানভীর তারেকের কথায়, প্রবাসী শিল্পীরা অনেকেই ভাল করছেন। তানভীর শাহীন খুবই গুণী নিউইয়র্কের সবচেয়ে পপুলার শিল্পী, এছাড়া সোমা রহমান, বরেণ্য শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের কন্যা চন্দ্রা রায়সহ অনেকেই ভাল করছেন। তারা আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে একাধিক শো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রায় সারাবছর। তাই সেখানে গানের একটা আলাদা সার্কেল তৈরি হয়ে গেছে। আমি তাদের নিয়ে কিছু গানের প্রজেক্ট করেছি। যা খুব শীঘ্রই রিলিজ দেবো। খুব শীঘ্রই নিউইয়র্ক প্রবাসী শিল্পী সোমা রহমানের সাথে আমার একটি ডুয়েট গান ‘ঘুম আসে না’ এর ভিডিও রিলিজ দেবো। ’ এই হরেক কাজের ফাঁকে নিজের লেখালেখিও থেমে নেই্ মূলত ঢাকা থেকে টানা প্রায় ২ মাসের সফরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর হয়ে আমেরিকা সফরে গেলেন তিনি। তাই তানভীর তার এই ভ্রমণের স্মৃতি গল্প নিয়ে আসছে বইমেলার জন্য লিখছেন এক ভিন্ন স্বাদের ভ্রমণ গদ্য। বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘উড়াল পাখির পান্ডুলিপি’। নিজের ছন্দময় বা বিচ্ছিন্ন স্বপ্নের মেঘমালাগুলো নিয়েই আগামী পথের উড়াল দিতে চান তিনি। ভাল লাগাগুলোর সাথে জড়িয়ে জীবিকা কিংবা আনন্দের রকমফেরে ঘুরতে চান এই স্বপ্নরসিক যুবক।
×