ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলাভূমি রক্ষায়

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

জলাভূমি রক্ষায়

বজলুল গনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত বাংলাদেশের প্রাচীন নাম ‘সমতট’। হিমালয়কন্যা নেপালের দক্ষিণে বাংলাদেশ, যার দক্ষিণ সীমানা বঙ্গোপসাগর। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ভারতীয় সীমান্ত। দেশের অভ্যন্তর ভাগ হাওড়-বাঁওড় ও নদী-নালায় পরিবৃত। প্রতিটি জেলায় রয়েছে নদ-নদী, খাল-বিল, নালা ইত্যাদি। অনেক জেলায় রয়েছে হাওড় ও বাঁওড়। দেশের সর্ব উত্তরে রয়েছে তেঁতুলিয়া ও সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ, উত্তরে দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ, সিলেট, সুনামগঞ্জ পশ্চিম দিকে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর। মধ্যভাগে ঢাকা, কুমিল্লা দক্ষিণে বরিশাল, পটুয়াখালী। খুলনায় রয়েছে অনেক নদী-নালা আর হাওড়-বাঁওড়। নাটোরে চলন বিল। ঢাকার আড়িয়াল বিল, গোপালগঞ্জের বহ্নির বাঁওড়, কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধরে রেখেছে। এসব জায়গায় রয়েছে প্রচুর মৎস্য সম্পদ। এসব খাল-বিল, নদী-নালা, হাওড়-বাঁওড় দেশের জন্য আশীর্বাদ। জলাধারগুলো এখন দুর্দশার সম্মুখীন। এগুলো ভরাট করে নষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট করা হচ্ছে মৎস্য সম্পদসহ অন্যান্য মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের যেসব অঞ্চলে হাওড়-বাঁওড় রয়েছে সেসব জায়গায় শীতপ্রধান দেশ থেকে শীতের সময় পাখি এসে ‘অভয়ারণ্য’ গড়ে তোলে। সেই সকল স্থান এক অভূতপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। দুঃখের বিষয় কিছু প্রভাবশালীর অপরিণামদর্শিতা ও প্রকৃতিবিনাশী কর্মকা-ের জন্য আজ হাওড়-বাঁওড় ও জলাভূমিসমূহ বিপন্ন। পানি ছাড়া কৃষিকাজ সম্ভব নয়। সারাটা দেশ শহর ও বন্দরে পরিণত হলে কৃষিপণ্য উৎপন্ন হবে কোথায়? খাল-বিল, জলাশয় না থাকলে আমরা পানি পাব কোথায়? মৎস্য ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদিত না হলে দেশের মানুষ বাঁচবে কী খেয়ে? সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে রয়েছে অনেক হাওড়। এখানে প্রচুর রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, মাগুর, চিংড়ি, কৈ ইত্যাদি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছ পাওয়া যায়। জলাভূমিগুলো শুকিয়ে গেলে কিংবা ভরাট করে ফেললে দেশের মানুষ বঞ্চিত হবে প্রচুর আমিষ থেকে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের সকল সম্পদই সমমূলবান। কৃষিজাত দ্রব্য, মৎস্য, পশুসম্পদ দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তাই পরিণামের কথা না ভেবে মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করলে দেশ সকল দিক দিয়ে উন্নত হবে না, পানির অভাব হলে দেশের মানুষও বঞ্চিত হবে মূল্যবান ফসলাদি থেকে। কিছু অর্বাচীন দেশের সম্পদ নষ্ট করছে, প্রভাব খাটিয়ে নদী-নালা ভরাট করে ইমারত বানিয়ে শহর গড়ে তুলছে। দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য যাতে রক্ষা হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। যারা বেআইনীভাবে নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে ইমারত বানাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। সকল নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় ও জলাশয়গুলো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এগুলো যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে, অন্যথায় দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে, দেশে ঘনঘন ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে। ঢাকা থেকে
×