ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপন্ন মাছ ও পাখি

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

বিপন্ন মাছ ও পাখি

আবুল বাশার শেখ নদীমার্তৃক বাংলাদেশের জল এবং স্থলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সীমানা কোন নিক্তি দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এ দেশের প্রতি পরতে পরতে রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। যার কারণে সারা বিশ্বে এই দেশের সুনাম বহুকাল থেকে। আমরা ছোট সময় পাঠ্যবইয়ে একটি কথা পড়েছি তা হলো, মাছে-ভাতে বাঙালী। হাজার হাজার প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে বাংলাদেশের নদী-নালা, হাওড়-বাঁওড় ও খাল-বিলে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি এখন আর মুখে মুখে শোনা যায় না। কারণ এখন আর আগের মতো হাওড়-বাঁওড়-জলাভূমির সেই মাছ নেই। মাছ থাকবে কোথায়! যেখানে দেশীয় প্রজাতির মাছ থাকত সেই জলাভূমিই তো নেই। আমরা নিজেরাই এই মাছের আবাসস্থলগুলো ধ্বংস করছি। কৃষি অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছরই একটি করে মাছের প্রজাতি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। মিঠা পানির মাছের প্রায় ২০ শতাংশ প্রজাতিই আজ বিপন্ন। এর মধ্যে সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ৪০ প্রজাতির ছোট মাছ। এ জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক আবাসভূমি এতটাই দ্রুত বদলে যাচ্ছে যে, টিকে থাকার উপযোগী জায়গা সঙ্কীর্ণ হতে হতে কোথাও কোথাও প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক আবাসস্থল বিশেষ করে হাওড়-বাঁওড়-জলাশয়গুলো ধ্বংস হওয়া এবং ছোট মাছ সংরক্ষণে আইন না থাকায় ছোট প্রজাতির মাছ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আবার পুকুরেও বড় মাছ চাষের আগে ছোট মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া লাভজনক না হওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ মাছের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় ছোট প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের স্মারক বিভিন্ন মাছ ধরার উপকরণগুলোও। সে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে পানকৌড়ি, কানা বগী, মাছরাঙা, চিল বলতে গেলে এখন আর দেখাই যায় না। যাদের প্রধান খাবার ছিল এসব মাছ। এসব পাখির কলকাকলীতে মুখর হয়ে যেত সন্ধ্যার বন-বনানী। শীতের সময় খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়-জলাশয়ে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো, টানা জাল, খরা নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। শুকনো মৌসুমে বিশেষ করে পৌষ থেকে শুরু করে চৈত্র পর্যন্ত শুরু হয়ে যেত দেশজ সরঞ্জামাদি দিয়ে মাছ ধরার মহড়া। জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সঙ্গে লাইন ধরে লুঙ্গি আঁটঘাঁট করে বেঁধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেঁধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপা ঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করতেন সারিবদ্ধভাবে। অনেকেরই মাথায় থাকত গামছা বাঁধা। চলত পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেয়া আর হৈ-হুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। পলোয় সাধারণত দেশী মাছই বেশি ধরা পড়ত। রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, আইড়, ঘাগট, কালি বাউস, বোয়াল, শোল, চিতল, টাকি ও গজার প্রভৃৃতি মাছ ধরা পড়ত। বর্তমানে অনেক হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এসব জলাশয় ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট। দখল হয়ে যাওয়া হাওড়-বাঁওড়-জলাভূমিগুলো উদ্ধার করে দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করতে হবে। তাছাড়া সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। সে সঙ্গে আইনী প্রক্রিয়া চালু রেখে হাওড়-বাঁওড়-জলাভূমি রক্ষা করতে হবে। তবেই রক্ষা পেতে পারে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ও পাখি। ভালুকা, ময়মনসিংহ থেকে
×