ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেই অবাক মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

নিজেই অবাক মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সবাই কিছুটা অবাকই হলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তৃতীয় উইকেট পতনের পরই ব্যাট হাতে নামলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বল হাতে দুরন্ত এ পেসার নাম পেয়ে গেছেন অনেক আগেই ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। তবে ব্যাট হাতে দারুণ কিছু করার অনেক উদাহরণই আছে যে কোন পর্যায়ের ক্রিকেটে। তাই বলে ৫ নম্বর ব্যাটসম্যান? তখন ইনিংসের মাত্র অষ্টম ওভার! স্বীকৃত কোন ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে দলকে জেতানোর গুরুদায়িত্ব নিয়ে আগেভাগে ব্যাট হাতে নামেন ভিক্টোরিয়ান্স অধিনায়ক মাশরাফি। আর এদিন দেখিয়েছেন ব্যাট হাতে তার আসল যোগ্যতা। আগের ম্যাচে আট নম্বরে নেমে করেছিলেন ২৫ রান। আর এবার ৫ নম্বরে নেমে মাত্র ৩০ বলে অর্ধশতক হাঁকানোর পর দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ৩২ বলে ৫৬ রান করে। ঝড়ো এই ইনিংস খেলার পথে তিনি চিটাগাং ভাইকিংসের বোলারদের হাঁকিয়েছেন ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে এটিই মাশরাফির প্রথম অর্ধশতক। আর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মারলন স্যামুয়েলসের সঙ্গে তিনি গড়েন ১২৩ রানের জুটি। পরে মাশরাফি জানিয়েছেন কোচের সঙ্গে আলোচনা করেই আগেভাগে নামেন তিনি এবং দলকে জিতিয়ে দেয়ার পর নিজের কাছেই বিষয়টি অবিশ্বাস্য লেগেছে বলে দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনে। ব্যাট হাতে আগেও অনেকবার ঝলক দেখিয়েছেন মাশরাফি। ওয়ানডে ক্রিকেটে একটি অর্ধশতক হাঁকালেও তিনবার এর কাছাকাছি গিয়ে ফিরে এসেছেন। ২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মাত্র ২৭ বলে অপরাজিত ৫১ রানের একটি ইনিংস খেলে নিজের ব্যাট করার যোগ্যতা আছে সেটার প্রমাণ দিয়েছিলেন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে করেছেন তিনটি অর্ধশতক। এর মধ্যে ২০০৭ সালের মে মাসে টানা দুই টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন ৭৯ ও ৭০ রানের দু’টি দারুণ ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ওয়ানডাউনে নামার রেকর্ডও আছে, যদিও সেটা নাইটওয়াচম্যান হিসেবেই নেমেছিলেন। আর ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৬ নম্বরে ব্যাট করেছেন একবারই। ঘরোয়া আসরেও বিভিন্ন সময়ে দারুণ ব্যাটিং করেছেন মাশরাফি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৭টি অর্ধশতক এবং প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে ১টি শতক ও ৬টি অর্ধশতক আছে তার। তবে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে অর্ধশতক করেননি কখনও। টি২০ ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৬! মাশরাফি সবসময়ই বেশ আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেটার। প্রথম ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হেরে এবার যাত্রা শুরু হয় কুমিল্লার। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ম্যাচেও বেশ চাপে পড়ে চিটাগাং ভাইকিংসের দেয়া ১৭৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে। ৭.২ ওভারে ৫৪ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। আর তখনই ব্যাট হাতে নামেন মাশরাফি। ব্যাটসম্যান হিসেবে তারচেয়ে স্বীকৃত হিসেবে মাহমুদুল হাসান লিমন, অলোক কাপালি ও আসহার জাইদি ছিলেন তখনও। তবে মাশরাফি যে ঠিক কাজটাই করেছিলেন তা বোঝা গেল নামার পর। নিজের মোকাবেলা করা পঞ্চম বলেই ছক্কা হাঁকান। এরপর ভয়ঙ্কর পাকিস্তানী স্পিনার সাঈদ আজমলকেও দু’টি ছক্কা হাঁকান তিনি। অবশ্য ব্যক্তিগত ৩৪ রানের সময় একটি জীবন ফিরে পান তিনি। শফিউল ইসলামকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন। লংঅফে অনেকদূর দৌড়ে এসে সেটা তালুবন্দী করতে পারেননি আসিফ আহমেদ রাতুল। এরপর আর থামানো যায়নি মাশরাফির ব্যাটিং তা-ব। মাত্র ৩০ বলেই প্রথম টি২০ অর্ধশতক আদায় করে নেন। ভিক্টোরিয়ান্সের প্রথম জয়টি অসম্ভব মনে হয়েছিল প্রথমেই। মাশরাফি যখন নামেন তখনও জয়ের জন্য ১২.৪ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২৩ রান! কিন্তু জয়ের নায়ক মাশরাফি ঝড়ে ওই রান উঠেছে ১১ ওভার ৩ বলে। ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে পাকিস্তানের গতি তারকা মোহাম্মদ আমিরকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার হাঁকিয়ে দলকে বিজয়ী করেন।
×