ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে সেতু ॥ দেখার কেউ নেই

পুরনো ব্রহ্মপুত্রের বালু লুট!

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

পুরনো ব্রহ্মপুত্রের বালু লুট!

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের বালু উত্তোলনে চলছে হরিলুট কারবার। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একটি মহল নদের রেল সেতু থেকে সওজের সড়ক সেতু হয়ে কাচারি ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে দুই পাড়ে ছোট বড় অসংখ্য ড্রেজার বসিয়ে দিনে রাতে উত্তোলন করছে এই বালু। ইজারা না থাকায় এভাবে বালু উত্তোলন চলছে ফ্রি স্টাইলে। অপরিকল্পিতভাবে এই বালু উত্তোলনের ফলে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এমতাবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে সড়ক ও রেল সেতু। এছাড়া দিনে রাতে এভারে ব্রহ্মপুত্রের বালু হরিলুটের কারণে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ বালু লুটেরাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। এ নিয়ে হতাশ ময়মনসিংহের সচেতন মহল। স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে ব্রহ্মপুত্রের রেলসেতুর পশ্চিম ও পূর্বপাশে বৃহদাকারের একাধিক ড্রেজার বসিয়ে দিনে রাতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রেলসেতুর পূর্বপাশে মুর্ত্তুজ আলী মোড়ল ও তপনের মালিকানাধীন এবং পশ্চিম পাশে আবাসন প্রকল্পের নিচে সেবক গংয়ের মালিকানাধীন ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলন করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পাইপ বসিয়ে আশপাশের এলাকার প্লট ভরাট করা হচ্ছে। পরে এসব বাণিজ্যিক প্লট বিক্রি করা হচ্ছে চড়াদামে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের গোড়া থেকে শুরু করে পশ্চিম পাশের কাচারি ফেরিঘাট পর্যন্ত অংশেও অন্তত এক ডজন ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা চলছে। ব্রহ্মপুত্র সড়ক সেতু থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ২টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে ফ্রি স্টাইলে। মজিবুর ও সবুজের মালিকানাধীন এই ড্রেজার থেকে কয়েক কিলোমিটার পাইপ স্থাপন করে ভরাট করা হচ্ছে ফসলি জমির প্লট। একইভাবে স্পর্শকাতর রুরাল পাওয়ার কোম্পানির ১৪০ মে.ও বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রসহ সংলগ্ন এলাকাতেও বসানো হয়েছে মাহবুব, আনু মোড়ল ও মোতালেবের মালিকানাধীন একাধিক ড্রেজার। এমদাদ ও দুলুর মালিকানাধীন ড্রেজার বসানো হয়েছে ব্রিজ ও বিদ্যুতকেন্দ্রের মাঝখানে। অভিযোগ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একটি মহলের নেতৃত্বে চলছে এসব ড্রেজার। ফলে স্থানীয় প্রশাসন থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সওজ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় প্রকৌশলীরা। ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ব্রিজের এক কিলোমিটার এলাকায় এই ধরনের ড্রেজিং ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যে কোন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সড়ক ও রেলসেতু। অপরিকল্পিত এই ড্রেজিং কেবল রেল ও সড়ক সেতুর জন্যই নয়, ব্রহ্মপুত্রের দুই তীরের জন্যই হুমকি বলে দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী। একই ধরনের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের কাছে গোপন প্রতিবেদন দিয়েছে স্থানীয় ভূমি অফিস। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাহমিনা জানান, খুব শীঘ্রই এসব অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
×