ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫ দিনব্যাপী মেলায় অংশগ্রহণ করছে শতাধিক প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যাংকিং মেলা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যাংকিং মেলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘একটি ব্যাংকিং জাতি গড়ার প্রত্যয়ে’ সেøাগান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী ‘ব্যাংকিং মেলা বাংলাদেশ ২০১৫’। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী শনিবার (২৪-২৮ নবেম্বর) পর্যন্ত মেলা চলবে। ব্যাংকিং পণ্য ও সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠেয় এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় দেশের সব তফসিলী ব্যাংকের স্টলসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল আর্থিকসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। মেলায় স্টলের পাশাপাশি আর্থিক শিক্ষাবিষয়ক আয়োজন, আর্থিক বিষয়ের ওপর বিতর্ক উৎসব, সেমিনার-ওয়ার্কশপ ও গোলটেবিল বৈঠক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে মেলার সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও মেলার প্রধান সমন্বয়কারী বিরূপাক্ষ পাল। তিনি বলেন, আটটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমরা প্রথমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে পণ্য ও ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রমকে তুলে ধরা, ব্যাংকিং পণ্য-সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর পাশাপাশ্বি ব্যাংকিং খাতকে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া তরুণ ও যুবসমাজকে ব্যাংকমুখী করা, বৃহত্তর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রমকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা হবে মেলায়। তিনি বলেন, ব্যাংকিং পণ্য ও সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, জাতীয় পর্যায়ে ব্যাংকিং খাতের পণ্য ও সেবাসমূহের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টন সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে আরও এগিয়ে যাওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। বিরূপাক্ষ পাল বলেন, জিডিপির ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাংক খাত। মেলার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমে সমন্বয় বাড়ানো গেলে জিডিপিতে অবদান আরও বাড়বে। এ লক্ষ্যে মেলায় প্রতিদিনই অর্থনীতির কোন একটি বিষয়ের ওপর সেমিনারের আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ব্যাংকিং বা অর্থনীতি বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে। এছাড়া পাঁচ দিনের মেলায় দুই দিন স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী এবং কর্মজীবী শিশু, বয়স্ক ও উন্মুক্ত উপস্থিতিতে আর্থিক শিক্ষা দেয়া হবে। তিনি জানান, এখনও ৪০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের ধারণা ব্যাংক শুধু বড় লোকদের জন্য। এ ধারণা পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা কর্মসূচী পালন করছে। মেলা আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাংকিং পণ্য ও সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, ব্যাংকের আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা, ব্যাংকের পণ্য ও সেবার প্রচার, ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকের কাছে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা, তরুণ ও যুব সমাজকে ব্যাংকমুখী করা মেলা আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। বিরূপাক্ষ পাল বলেন, সবার জন্য উন্মুক্ত এই মেলায় থাকবে টাকার জাদুঘর, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকাশনা, স্মারক মুদ্রা ও নোট বিক্রি, জনসাধারণকে দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সেবা সংক্রান্ত তথ্য, সিআইপিসি ও কন্ট্রোল রুম। এছাড়া মেলা চলাকালে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, গোলটেবিল বৈঠক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই মেলার প্রধান উদ্দেশ্য টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সামনে রেখে মেলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তিকরণের ওপর জোর দেয়া। এছাড়া সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে জানানো। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি মানুষ ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে জড়িত। তবে এটা ৮ কোটি মানুষ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এই মেলা সবাইকে সম্পৃক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। মেলায় নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান বলেন, বইমেলার স্থানেই করা হচ্ছে এই মেলা। বইমেলার মতোই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে। আসাদুজ্জামান এ সময় আরও বলেন, এ মেলাটি হবে একটি মিলন মেলাও। স্বাধীনতা পর থেকে ব্যাংকিং খাতে যারা অবদান রেখেছেন তারা উপস্থিত থাকবেন। এদের মধ্যে সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মাদ ফরাসউদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক ড. সাদিক আহমেদ, সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ, সিপিডির চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, এ কিউ সিদ্দিকী প্রমুখ। এছাড়া এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, এনজিএ সংগঠন, নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, কবি-সাহিত্যিক, গণমাধ্যমের অর্থনীতি সাংবাদিক, পেশাজীবী, ছাত্র-শিক্ষকও মেলায় আসবে। মেলায় স্টল ॥ মেলায় দেশে কার্যরত ৫৬টি ব্যাংক ছাড়াও ৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকিং সেবাদানকারী মোবাইল অপারেটরসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক বিষয়ভিত্তিক স্টল থাকতে পারে যেমন- আর্থিক শিক্ষা, টাকা জাদুঘর, বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস (কীভাবে টাকা বানানো হয়), বাংলাদেশ ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকাশনা, স্মারক মুদ্রা ও নোট বিক্রি, জনসাধারণকে দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রদত্ত সেবা, সিআইপিসি, কন্ট্রোল রুম/অভিযোগ কেন্দ্র্র/ লস্ট এ্যান্ড ফাউন্ট। আর্থিক শিক্ষা বিষয়ক আয়োজন ॥ প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচী আওতায় টার্গেট নিয়ে আর্থিক শিক্ষা বিষয়ক কর্মসূচী পালিত হবে। এর মধ্যে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী দু’দিন, কর্মজীবী শিশু একদিন, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একদিন এবং উন্মুক্ত উপস্থিতির জন্য একদিন। এ মেলা থাকবে সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের আওতায়। প্রতিদিন থাকবে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, থাকবে আঞ্চলিক ঐতিহ্য গান নাচসহ নানা আয়োজন। থাকছে থিম সং। প্রকাশ পাবে সংকলনও। মেলায় থাকবে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাও। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ও অংশগ্রহণ করবে। মেলায় মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে দৈনিক জনকন্ঠ। আর্থিক বিষয়ের ওপর বিতর্ক উৎসব ॥ প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যাংকিং/আর্থনীতি বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এতে দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বিতর্ক প্রতিযোগিতা সম্ভাব্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- শুধু কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের হাতেই সুদের হারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, খেলাপী সংস্কৃতিই ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদের প্রধান কারণ, মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত, অর্থনৈতিক আগ্রযাত্রার স্বার্থেই পুঁজির প্রবাহ অবাধ হওয়া প্রয়োজন, পর্যাপ্ত উদারনীতির অভাবেই বৈদেশিক বিনিয়োগ আশানুরূপ বাড়ছে না, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ আমাদের আর্থনীতির জন্য কাম্য নয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ব্যাংকিং খাত অপেক্ষা পুঁজিবাজারের ভূমিকা বেশি গুরুতত্বপূর্ণ। সেমিনার/ওয়ার্কশপ/গোলটেবিল বৈঠক ॥ প্রতিদিন ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ব্যাংকিং/আর্থিক বিষয় নিয়ে সেমিনার/ওয়ার্কশপ/গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হবে। সম্ভাব্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা, আর্থিক শিক্ষা : বৃহত্তর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পূর্বশর্ত, উৎপাদনশীল খাতে ঋণের প্রবাহ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি : প্রবৃদ্ধি সহায়ক মূল্যস্ফীতির হার কি আদৌও বিদ্যমান, বাংলাদেশের জন্য সর্বাপেক্ষা কাম্য সুদের হারের কাঠামো উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংক : সামাজিক এবং পরিবেশগত দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারদ্ধ/প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রবাহের ভূমিকা, মুদ্রানীতির কার্যকারিতা : একটি উদীয়মান অর্থনীতির মুদ্রানীতি প্রণয়নের চ্যালেঞ্জসমূহ এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংসেবা : একটি ডিজিটাল যুগের সূচনা/ ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা।
×