ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুরুতেই চমক, রংপুরের রুদ্ধশ্বাস জয়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

শুরুতেই চমক, রংপুরের রুদ্ধশ্বাস জয়

মিথুন আশরাফ ॥ চরম উত্তেজনা, চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল-টি২০) তৃতীয় আসরের প্রথম ম্যাচেই মিলল। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ হল। সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে জয় তুলে নিল রংপুর রাইডার্সই। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই চিটাগং ভাইকিংসকে ২ উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনাও করল রংপুর রাইডার্স। সেই সঙ্গে সাকিব আল হাসানের কাছে তামিম ইকবালের হারও হয়ে গেল। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ২৩ রানের সময়ই আউট হয়ে গেলেন। রংপুর রাইডার্সেরও ৪ উইকেটের পতন ঘটে গেল। তখন সবারই ধারণা হয়, তামিম ইকবালের ৫১ রানে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে চিটাগাং ভাইকিংস যে ১৮৭ রান করে তা অতিক্রম করা কোনভাবেই রংপুর রাইডার্সের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সবার ধারণারই পরিবর্তন ঘটিয়ে দিলেন মিসবাহ উল হক ও থিসারা পেরেরা। ক্রিকেটে যে সব সম্ভব তা বুঝিয়ে দিলেন। দুইজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৮০ রানের জুটি গড়েই দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেলেন। এরপর রংপুর রাইডার্সের হাতে জয়ও ধরা দিল। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান করে জয়ও পেয়ে গেল রংপুর রাইডার্স। চিটাগাং ভাইকিংস যখন ব্যাট করল তখন উত্তেজনা ছড়িয়ে থাকল। রংপুর রাইডার্স ব্যাট করতে নেমে দ্রুতই ৪ উইকেট হারানোয় উত্তেজনা যেন শেষ হয়ে গেল। তখন কেউই বুঝতে পারেনি যে উত্তেজনা আরও অপেক্ষা করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শনিবার ফিরে রবিবার বিপিএলের প্রথম ম্যাচেই খেলতে নামেন সাকিব। ১ রান করে যখন সাজঘরে ফিরছেন তখন রংপুর রাইডার্সের সমর্থ-করাও যেন হতাশ হয়ে পড়েন। এর আগে যে লেন্ডল সিমন্স (১) একবার আসিফ আহমেদ রাতুলের হাতে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েও আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে সৌম্য সরকার (২০) ও মোঃ মিঠুন (০) আউট হয়ে যান। বড় স্কোর অতিক্রম করতে গিয়ে ২৩ রানেই যখন একটি দলের চারজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান তখন কি আর ম্যাচে জেতা সম্ভব হয়? অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন মিসবাহ ও পেরেরা। সাকিব যখন আউট হন তখন মিসবাহ কোন রান করতে পারেননি। এরপর আল আমিন জুনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে যান। কিন্তু তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ১২.৩ ওভারে গিয়ে ৮৭ রান যুক্ত হয় চিটাগাং ভাইকিংসের স্কোরবোর্ডে। তখন ২৮ বলে ৩৮ রান করা আল আমিন আউট হয়ে যান। এমনই অবস্থা হয়, কোনভাবে জয়ের ব্যবধান কমাতে পারলেই হয়। কিন্তু জয়ের ব্যবধান কমানো দূরে থাক, জয়ই তুলে নিল রংপুর রাইডার্স! আল আমিন আউট হওয়ার পর পেরেরা ব্যাট হাতে নামেন। ১৪ ওভারে তখন রংপুর রাইডার্সের স্কোরবোর্ডে জমা থাকে ৯৭ রান। ৬ ওভারে জিততে তখনও ৯১ রান দরকার লাগে। এখান থেকেই যেন শুরু হয়ে যায় চরম উত্তেজনা। মিসবাহ আর পেরেরা যেন সবার কাছে নতুনরূপে ধরা দেন। একের পর এক বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। প্রতি ওভারেই ১২ রান বা তার বেশি রান নিতে থাকেন। একটা সময় গিয়ে ১৮ বলে জিততে ৪৩ রান লাগে। এমন মুহূর্তে জিয়াউর রহমান বল করতে আসেন। এক ওভারেই পেরেরা ২১ রান নিয়ে নেন। রংপুর রাইডার্সের সমর্থকদের মধ্যেও তখন জয়ের আশা জেগে যায়। শুরুতে যেমন পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ আমের পরপর ২ উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান, শেষদিকে ১৯তম ওভারে এসেও একই কাজ করেন আমের। ১২ বলে গিয়ে যখন ২২ রানের প্রয়োজন পড়ে তখন পেরেরা (১৭ বলে ৪৩) ও মিসবাহকে (৩৯ বলে ৬১) টানা দুই বলে আউট করে দেন আমের। এ ওভারে মাত্র ৮ রান দেন। আবার চিটাগাং ভাইকিংসের জেতার আশা জাগে। পেন্ডুলামের মত একবার রংপুর রাইডার্সের দিকে, আরেকবার চিটাগাং ভাইকিংসের দিকে জয় ঘুরতে থাকে। শেষ ওভারে গিয়ে এমন অবস্থা হয়, যে কোন দল জিততে পারে। ৬ বলে ১৪ রানের প্রয়োজন পড়ে। ব্যাটিংয়ে থাকেন ড্যারেন সামি ও আরাফাত সানি। বল করেন শফিউল ইসলাম। প্রথম বলে কোন রান নিতে না পারলেও দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকান সামি। তৃতীয় বলে ২ রান নেন। এ মুহূর্তে আসিফ আহমেদ সামির ক্যাচটি ধরতে ব্যর্থ হন। এ ক্যাচটি ধরলে হয়ত ম্যাচ চিটাগাং ভাইকিংস জিততেও পারত। ৩ বলে যখন জিততে ৬ রান প্রয়োজন তখন আবার বাউন্ডারি হাঁকান সামি। ২ বলে ২ রান প্রয়োজন থাকে তখন। পঞ্চম বলে ব্যাটে লাগিয়েই রান নিতে যান সামি। এক রান নিয়েও নেন। চান আরেকটি রান নিয়ে খেলা শেষ করে দিতে। কিন্তু রান আউট হয়ে যান। উত্তেজনা তখন চরমে। ম্যাচও তখন সমান-সমান অবস্থানে। টাই অবস্থায় থাকে। ১ বলে তখন জিততে ১ রানের প্রয়োজন পড়ে। এমন সময়ে সাকলায়েন সজিব ১ রান নিয়ে দেন দৌড়। এমনই উল্লাস তার ভেতর দেখা যায় জয় নিশ্চিত হতেই দৌড়াতে থাকেন। রংপুর রাইডার্সের ক্রিকেটাররা এসে তার দৌড় থামান। তাকে গলায় জড়িয়ে ধরে আনন্দ, উল্লাস করতে থাকেন। শেষ বলে গিয়ে রুদ্ধশ্বাস একটি ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে রংপুর রাইডার্সই। এরআগে টস জিতে আগে ব্যাট করে শুরুতেই চিটাগাং ভাইকিংস দুর্দান্ত ব্যাটিং করে। তামিম ইকবাল ও তিলকারত্মে দিলশান মিলে ৪ ওভারেই ৫২ রান তুলে ফেলে। ঝড় তোলে। রানের গতি দ্রুতই বেড়ে যায়। এমন সময়ে ১৬ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ২৯ রান করা দিলশান আউট হয়ে যান। রানের চাকা ঠিকই সচল থাকে চিটাগাং ভাইকিংসের। এনামুল হক বিজয়কে সঙ্গে নিয়ে ১১৭ রান পর্যন্ত এগিয়ে যান তামিম। আউট হওয়ার আগে ৩২ বলে ৫১ রান করেন তামিম। ২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই বিজয়ও (৩৬) সাজঘরে ফেরেন। পরে জীবন মেন্ডিসের ১৮ বলে করা ৩৯ রান চিটাগাং ভাইকিংসকে বড় স্কোর গড়ার পথেই এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ স্কোরও কাজে দেয় না। চরম উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটিতে রংপুর রাইডার্সই জয় তুলে নেয়। বিপিএলের তৃতীয় আসরে শুভ সূচনাও করে।
×