ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- আতাউস সামাদ ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা গ্রহণকালে তোয়াব খান

‘দেশপ্রেমের তাগিদ থেকে আসতে হবে সাংবাদিকতায়’

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

‘দেশপ্রেমের তাগিদ থেকে আসতে হবে সাংবাদিকতায়’

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মৃত্যুদ- কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার, শেখ হাসিনা প্রশাসন, ট্রাইব্যুনালসহ সবাইকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তারা দেশকে ন্যায় বিচারের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীরা দেশের প্রথিতযশা মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী হত্যায় সম্পৃক্ত ছিল। আজকে আমরা যেই তিন ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা করতে সমবেত হয়েছি (সাংবাদিক আতাউস সামাদ, এবিএম মূসা এবং তোয়াব খান), এই তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারণেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে যারা ত্রিশ লাখ মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, তাদের ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অবদান রেখেছেন তাদের সম্মানিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। রবিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে প্রখ্যাত সাংবাদিক তোয়াব খানকে ‘আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট’ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন। দেশে সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। অনুষ্ঠানে উপাচার্য তোয়াব খানকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উল্লেখ্য, প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসা আতাউস সামাদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থ দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ¯œাতক সম্মান পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল অর্জন করায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৫ জন শিক্ষার্থীকে আতাউস সামাদ স্মারক বৃত্তি দেয়া হয়। এরা হলেন- মোঃ শরিফুল ইসলাম, আনন্দ কুমার শীল, ফারজানা আকতার, ফাহিমা আকতার কচি এবং দুলাল সমদ্দার। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌসের উপস্থাপনায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মফিজুর রহমান, অধ্যাপক গোলাম রহমান, সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান প্রমুখ। এতে ‘আতাউস সামাদ : এক কীর্তিমান সাংবাদিক’ শীর্ষক স্মারক বক্তব্য দেন বিভাগের অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম। এ সময় উপাচার্য আরও বলেন, সাংবাদিক এবিএম মূসা যখন আতাউস সামাদের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। সেদিন তিনি বিষয়টি গোপন রাখতে অনুরোধ করেছিলেন। আমরা সাধারণত এই ধরনের উদ্যোগকে উৎসাহিত করার জন্য ট্রাস্ট ফান্ডের খবর প্রচার করার উদ্যোগ নিয়ে থাকি। এই থেকে বোঝা যায় যে তিনি কেমন আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি এভাবেই দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে গেছেন। আতাউস সামাদ সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, তিনি সাংবাদিকতার নিয়ম-নীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য তথ্যের সত্যতা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ক্লস রুমে এবং ক্লাস রুমের বাইরে সব সময় এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তার অসুস্থতার সময় দেশের কিছু টিভি চ্যানেল ভুলভাবে তথ্য উপস্থাপন করেছিল। এই ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সত্য প্রকাশ করাই সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় আইন। যে কোন ক্ষেত্রে সত্যানুসন্ধান সবার দায়িত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দায়িত্ব স্ব স্ব ক্ষেত্রে সত্যানুসন্ধান করে তা জানা। সত্য প্রকাশের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তোয়াব খান সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সাংবাদিকতায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এই বয়সেও নিজেকে প্রত্যক্ষভাবে সাংবাদিকতায় যুক্ত রেখেছেন এবং একনিষ্ঠভাবে সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। একজন সাংবাদিক কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, তোয়াব খান তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর সম্পাদিত দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। সেটি আমাদের উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করে। এই দেশের মূল ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর। আর এই চেতনাকে পত্রিকার মূল সঞ্জীবনী করে দৈনিক জনকণ্ঠ এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করে তোয়াব খান বলেন, অতীতে যারা সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন, তারা শুধু পেশার জন্য আসেননি, এসেছেন দেশ প্রেমের তাগিদ থেকে। তাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সম্পাদক, উপদেষ্টা সম্পাদকের মতো বড় বড় পদে আছেন। আগে কেউ ছিলেন ডান, কেউ ছিলেন বাম। এই ডান-বামকে পাশ কাটিয়ে যারা নিজেদের নির্মোহ করতে পেরেছেন, তারাই এই পেশায় স্থায়ী ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেশ প্রেম থেকে সাংবাদিকতায় আসতে হবে। দেশের সাংবাদিকতাকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাবার দিন এখন এসেছে। আমাদের সকলের প্রচেষ্টা দেশের সাংবাদিকতাকে সেই জায়গায় নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতা আগে কোন পেশা ছিল না। পেশার জন্য দরকার ছিল একটি নির্দিষ্ট বেতন-কাঠামো বা মর্যাদা কাঠামো, যা এদেশে ১৯৬১ সালের পর থেকে চালু হয়। এরপর থেকে সবাই সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করে। এই সময়ে দেশের সাংবাদিকতায় সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আসে। বর্ষীয়ান এই সাংবাদিকের বক্তব্যে পরাধীন বাংলাদেশ থেকে বর্তমান বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বিবর্তন ও প্রতিষ্ঠার ইতিহাস উঠে আসে বর্ষীয়ান এই সাংবাদিকের বক্তব্যে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাংবাদিক এবিএম মূসা। সাংবাদিক এবিএম মূসা একাধারে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিলেন, ছিলেন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাংবাদিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করেছেন। এখন দেশের প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় উচ্চ শিক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে সত্যিকারের সাংবাদিক হওয়া যায় না। এর জন্য নানা প্রশিক্ষণ ও মাঠপর্যায়ের জ্ঞানও প্রয়োজন। দেশ প্রেম থেকে সাংবাদিকতায় আসতে হবে। দেশের সাংবাদিকতাকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাবার দিন এখন এসেছে। আমাদের সকলের প্রচেষ্টা দেশের সাংবাদিকতাকে সেই জায়গায় নিয়ে যাবে।স্মারক বক্তব্যে তিনি প্রয়াত সাংবাদিক আতাউস সামাদ ও এবিএম মূসা সম্পর্কে বলেন, দেশের সাংবাদিকতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে তারা ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাদের অসামান্য অবদানের কারণে দেশে সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথে এগিয়ে গেছে। এই পেশায় তারা চির স্মরণীয় ও বরণীয়।
×