ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এলাম ময়নামতি

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এলাম ময়নামতি

দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। এভাবে সময় হারিয়ে যাবে, থেকে যাবে শুধু স্মৃতি। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কোন জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনও করতে পারিনি। তো বন্ধুরা ঢাকার আশপাশে কোথাও একদিনের একটা শর্ট ট্রিপ দিতে চাই। ঠিক স্টাডি ট্যুর না... গান... ফান, গসিপ, আড্ডাবাজি, বনভোজন.... কুইজ ...সহ আরও আয়োজন হতে পারে। এমন এক ঘোষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এমএসএস প্রিভিয়াসের ২৮ জন সহপাঠী এই শর্ট ট্যুরে অংশ নেয়। স্থান ঠিক হয় কুমিল্লা। অক্টোবর মাসের শেষ দিন ‘রোড টু ময়নামতি’ শিরোনামে ট্যুরের দিন নির্ধারণ হয়। কাক্সিক্ষত দিনে সবাই যথাসময়ে ক্যাম্পাসে জড়ো হই। দিনটি শনিবার বলে হয়ত আকাশ কিছুটা মেঘলা ছিল। গুমোট এই ভাবটা সূর্যকে লুকিয়ে দিয়ে আমাদের ভ্রমণটা আরও সহজ করে দেয়। একটু দেরি করে গাড়ি ছাড়ে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে। গাড়ি ছাড়তেই সবাই নাচতে নাচতে আর বেসুর গলায় সুর করে গাইতে থাকে। খানিক পর পরই সবার একযোগে চিৎকার আর হৈ-হুল্লোড় ভ্রমণের আনন্দকে চাঙ্গা করে দিতে থাকে। সাউন্ডবক্সে বাজতে থাকে জনপ্রিয় বাংলা গান। মিউজিকের তালে সকলের নৃত্যে নজিরবিহীন আনন্দ-উচ্ছ্বলতার মধ্যে চলতে চলতে আমরা এসে থামলাম শান্ত সমাহিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। ১৯৪১-৪৫ সালে তৎকালীন বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা), আসাম এবং বাংলাদেশের নয়টি রণ-সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ-সমাধিক্ষেত্র আছে, যার অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে এসব রণ-সমাধিক্ষেত্রে আসেন। তারপর ওয়ার সিমেট্রিকে বিদায় জানিয়ে আবার যাত্রা শুরু হলো। কুমিল্লা টাউন হলের মাঠে এসে আমাদের গাড়ি পার্কিং করি। এরপর পাশেই অবস্থিত ধর্মসাগর প্রদর্শনের জন্য হেঁটে রওনা দেই। ধর্মসাগর কুমিল্লা শহরে অবস্থিত একটি বিশাল জলাধার। এটি একটি প্রাচীন দীঘি। কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধর্মসাগরের আয়তন ২৩.১৮ একর। ধর্মসাগরের পাশেই একটি মহিলা কলেজ। ধর্মসাগরের উত্তর কোণে রয়েছে রানীর কুঠির, পৌরপার্ক। পূর্ব দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা স্টেডিয়াম আর পশ্চিম পাড়ে বসার ব্যবস্থা আছে। দীঘির পাড়ের সবুজ বড় বড় গাছের সারি ধর্মসাগরকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। তাছাড়াও শীতকালে ধর্মসাগরে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে। আমরা সবাই পশ্চিম পাড়ে দাঁড়িয়ে গ্রুপ করে ছবি তুলি। কেউবা গাছের ছায়ায় বসে ধর্মসাগর ছুঁয়ে ছুঁয়ে আসা মৃদু শান্ত শীতল বাতাসে দুপুরের ক্লান্তিটা সারিয়ে নিচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের অবস্থানের সময়সীমা অতিক্রম করছে- ট্যুর ম্যানেজার তাগাদা দিল তাই হোটেলের উদ্দেশে সকলে দুপুরের খাওয়ার জন্য রওনা দিল। রানীকুঠি, স্টেডিয়াম ও জিলা স্কুল হয়ে হেঁটে হেঁটে আমরা উপস্থিত হলাম বাংলা রেস্তরাঁয়। আমাদের সহপাঠী মেয়েদের এই হাঁটাহাঁটিতে ত্রাহিত্রাহি অবস্থা। সুপরিচিত শিল্পী আসিফ আকবরের বাংলা রেস্তরাঁর এসিতে বসে সবাই একটু প্রশান্তি পেল। আগেই আমাদের খাওয়ার অর্ডার দেয়া ছিল। খাওয়া শেষ করে গাড়িতে ফিরলাম। এরপর আমাদের যাত্রা কোটবাড়ি শালবন বৌদ্ধবিহার। গানে গানে আর কেউ কেউ দুপুরের ভাতঘুম দিতে দিতে পৌঁছে যাই! আমরা টিকেট কেটে প্রবেশ করে একে একে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি পুরো বৌদ্ধবিহারের অসাধারণ শিল্প কারুকার্য। চলতে থাকে স্মৃতির খাতায় অম্লান করে রাখতে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক। প্রথমে সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তুলে এরপর যার যার মতো তুলতে থাকে আর স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধতে থাকে মুহূর্তগুলো। কুমিল্লার কোটবাড়ি শালবন বৌদ্ধবিহার সুদীর্ঘকালের প্রাচীন। প্রচলন আছে, ভারতের বিহার রাজ্যের দেব বংশের শাসকরা এখানে শাসন করেছিলেন। বিশ্বের সুপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ‘লানন্দা বিশ্ববিদ্যালয়’ এই কোটবাড়ি শালবন বৌদ্ধবিহারেই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ইতিহাস-ঐতিহ্যে কুমিল্লাকে সমৃদ্ধ করেছে শালবন বৌদ্ধবিহার। বিভিন্ন সময়ে শালবন বৌদ্ধবিহারের ৩৭ একর জমি খনন করে ১০টি বৌদ্ধমন্দিরসহ প্রাচীন সভ্যতার বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে। আমাদের শিডিউলে আরও একটা স্পট থাকার কারণে তাড়াতাড়ি শালবন বিহারকে বিদায় জানাই। এরপর আমরা রওনা দেই কুমিল্লা বার্ডের দিকে। শেষ বিকেলে আমরা বার্ডে পৌঁছাই। এটি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন তথা পল্লীর দারিদ্র্য বিমোচনে নিরলস সহায়তা করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে কোটবাড়িতে অবস্থিত। অসাধারণ প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক স্পেসে পৌঁছে ছবি তোলার এক অনন্য উচ্ছ্বল আয়োজন চলল। ঘুরতে ঘুরতে এরপর আমরা বার্ডের নীলাচলে চলে গেলাম। সেখানে গোল হয়ে বসে সহপাঠী মাকসুদ উন নবীর উপস্থাপনায় চলল এক অন্যরকম আয়োজন। লটারির মধ্যমে যার ভাগ্যে যা ওঠে তা অভিনয় করে দেখানো। আর ফাঁকে ফাঁকে মিজান ভাইয়ের গিটারের মিউজিকে তার কণ্ঠে অনন্য বাংলা গান। অভিনয়ে দারুণ নৈপূণ্য দেখালো রাব্বানী ও হিজড়ার অভিনয়ে সোহেল রানা। মজার এই আড্ডা চলতে থাকত যদি না রাতের আঁধার নেমে আসত। আড্ডা শেষ করে এরপর বার্ডের ক্যান্টিনে চা-টা খাওয়া হলো। সন্ধ্যা সাতটায় বার্ডকে বিদায় জানিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালরেয় টিএসসির উদ্দেশে রওনা হই। ভ্রমণে সকলের অভিজ্ঞতা ও ভাল লাগা শুনতে শুনতে গাড়ি আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে! আমির সোহেল
×