স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত প্রজন্ম চত্বরে তিনদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচী চালান মঞ্চের কর্মীরা। এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন। কর্মসূচীতে ডাঃ ইমরান বলেন, সাকা ও মুজাহিদের পরিবার ফাঁসির দ- ঠেকাতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের কোনভাবেই বিশ্বাস না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এরা নিজেদের স্বার্থে সবই করতে পারে। যেমন মুজাহিদ নিজেই যুদ্ধাপরাধের মাস্টারমাইন্ড হওয়ার পরও বলেছিলেন এদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যার জঘন্যতম ইতিহাস অস্বীকার করেছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। যিনি নিজেই মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী আর গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডদের অন্যতম। তার এই দম্ভোক্তির পর পরই সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই, কোন স্বাধীনতাবিরোধী নেই। অবশেষে অবসান হলো তার সেই ঔদ্ধত্যের। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আগেই মুজাহিদকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন। শনিবার নিজেই সেই অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিত আবেদনে নিজেকেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মুজাহিদ, যা এর আগে ফাঁসি কার্যকর হয়ে যাওয়া আর কোন যুদ্ধাপরাধী করেননি।
সেদিন ছিল ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপ শেষে গাড়িতে ওঠার আগে ইসির সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে মুজাহিদ দেখিয়েছিলেন সেই ঔদ্ধত্য। যা আগে কেউ কখনো করার সাহস করেননি। সেদিন তিনি তাচ্ছিল্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই। এটা তাদের কল্পনাপ্রসূত, নিজের বানোয়াট একটা উদ্ভট চিন্তা। তখন (৭১ সাল) থেকেই নাই, এখনও নাই। বাংলাদেশে কোন স্বাধীনতাবিরোধী নাই। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কখনও ছিল না, এখনও নাই।
শনিবারের কর্মসূচীতে ইমরান এইচ সরকার আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীদের বিচার হবে না, এটা হতে পারে না। এই রায় কর্যকর করা না হলে শহীদদের আত্মার সঙ্গে বেঈমানী করা হবে। দেশের সকল মানুষ চায় তাদের দ- কার্যকর হোক। কোন বিদেশী কিংবা দেশী অপশক্তির কাছে দ- কার্যকরের ক্ষেত্রে সরকারকে মাথা নত না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষ তাদের বিচার চায়। শহীদ পরিবারগুলো আশা বুক বেঁধে আছে। ৪৪ বছর পর হলেও গণহত্যাকারীদের বিচার হবে। তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হলে শান্তি পাবে শহীদদের আত্মা। দায়মুক্তির পথে এগিয়ে যাবে দেশ।
সরকারের প্রশ্রয়ে ফাঁসি ঠেকাতে সাকা-মুজাহিদের পরিবার হাঁটছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। আইনগতভাবে চূড়ান্ত দ-প্রাপ্ত আসামিদের পক্ষে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী সঙ্গীতা ঈমাম, আরিফ নূর, আকাশ প্রমুখ। সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বরে মোমবাতি জ্বালিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিতে চলে সেøাগান। প্রতিবাদী গান আর কবিতা পাঠ করেন মঞ্চের কর্মী ও আবৃত্তিশিল্পীরা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: