ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পল্লী চিকিৎসকের কাণ্ড ॥ কলাপাড়ায় মরতে বসেছেন আয়শা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ নভেম্বর ২০১৫

পল্লী চিকিৎসকের কাণ্ড ॥ কলাপাড়ায় মরতে বসেছেন আয়শা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২০ নবেম্বর ॥ পচন ধরে কোমরের নিচে, পেছনের বাম পাশের ক্ষত (গর্তটা) এমন বড় হয়েছে যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাতটি কব্জি পর্যন্ত ঢুকে যাচ্ছে। শুক্রবার দুপুরের পরে ওই ক্ষতের ড্রেসিং করার সময় এ দৃশ্য দেখা গেল। চিকিৎসক এবং সহকারীরা জানালেন, এখন পচনের দুর্গন্ধ অনেকটা কমেছে। ড্রেসিং করানোর সময় দম বন্ধ করে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছেন ভিকটিম আয়শা বেগম। হতদরিদ্র আয়শা বেগমের এমন হাল করেছে পল্লী চিকিৎসক। ১৬ নবেম্বর আয়শা তার এমন দুর্ভোগ নিয়ে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শ’ টাকার ওষুধের প্রয়োজন হয়। বোনের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা কর্জ করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক মানস মজুমদারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আয়শা। এ ঘটনায় দু’দিন আগে কলাপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আয়শা বেগম। হতদরিদ্র আয়শা কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়া গ্রামে থাকেন। মা ও স্বামী আব্দুস সালামকে নিয়ে দিন আনি দিন খাইয়ের সংসার। ঝিয়ের কাজ করেন। শরীরে এলার্জির সমস্যার কারণে গিয়েছিলেন কুয়াকাটা ভিআইপি সড়কের পল্লী চিকিৎসক আনোয়ার হোসেনের কাছে। ওষুধপত্রসহ ইনজেকশন দেন। তিন দিন পরে আর একটি। মোট তিনটি ইনজেকশন দেয়ার পরে ওই জায়গা ফোঁড়ার মতো হয়ে ওঠে। পেকে গেলে ফাটিয়ে দেয় আয়শা। পানির মতো ঝরতে থাকে। ফের শরণাপন্ন হয় আনোয়ার হোসেনের কাছে। তখন ঘাবড়ে যায় আনোয়ার। কুয়াকাটা হাসপাতালে তাকে পাঠিয়ে নিজেই চিকিৎসা করায়। আনোয়ার হোসেনের ব্যবস্থাপত্রে তার নামের নিচে লেখা রয়েছে এল এম এ এফ (ঢাকা)। ভিডি (আরএমপি) চট্টগ্রাম। শিশুদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট। রেজি নং সি ৫৪৮৯০। নাহার ফার্মেসি রাখাইন মহিলা মার্কেট কুয়াকাটা। বর্তমানে আয়শা বেগমের বেহালদশা। কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক মানস মজুমদার জানান, তার ক্ষত সারতে কিংবা সুস্থ হয়ে উঠতে কমপক্ষে এক-দেড় মাস সময় লাগবে। কেন, কী কারণে এমনটি হয়েছে এর সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি ডাঃ মানস। তবে বলেছেন, ময়লা-আবর্জনার কাপড়ের ওপর দিয়ে ইনজেকশন দেয়া ঠিক হয়নি। বর্তমানে হতদরিদ্র আয়শার চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজন আইনী সহায়তা। পল্লী চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন জানান, ওই মহিলার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার তিনি বহন করছেন। আর কাপড়ের উপর দিয়ে ইনজেকশন দেয়ার জন্য মহিলা নিজেই বলেছেন। কোন ধরনের ভুল চিকিৎসা করা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। কলাপাড়া থানার এসআই শাখাওয়াত হোসেন জানান, আয়শার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সকল ধরনের আইনী সহায়তা দেয়া হবে আয়শাকে।
×