ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২১ নভেম্বর ২০১৫

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজন

ফিরোজ মান্না ॥ ২১ নবেম্বর। দিবসটি সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। উৎসাহ উদ্দীপনা ও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। দেশের সব সেনানিবাস, নৌ-ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটিসমূহ নানা রঙে সাজানো হয়েছে। রাতে বিভিন্ন সেনানিবাস ও স্থাপনা আলোক সজ্জায় সজ্জিত থাকবে। সশস্ত্রবাহিনীর মসজিদসমূহে দেশের কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করা হবে। ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের সব কর্মসূচী শুরু হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটির একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র বাঙালী জাতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতিবছর ২১ নবেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। পরে তিন বাহিনী নিয়ে সম্মিলিতভাবে ২১ নবেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনী আলাদাভাবে দিবসগুলো পালন করত। পরে ২১ নবেম্বরের তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তিন বাহিনী প্রধানগণ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৫’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা জানাবেন। এছাড়া ২০১৪-২০১৫ সালে সশস্ত্র বাহিনীর শান্তিকালীন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী পদক এবং অসামান্য সেবা পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পদকে ভূষিত করা হবে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রেস সচিব ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্তৃক ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এক বৈকালীন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এই সংবর্ধনায় উল্লেখযোগ্য আমন্ত্রিত ব্যক্তিত্বগণের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার, প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিগণ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, প্রাক্তন উপদেষ্টাগণ, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, ঢাকা এলাকার সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনীর প্রাক্তন প্রধানগণ, ২০১৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ও একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, নির্বাচিত রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীগণ, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-তাঁদের উত্তরাধিকারীগণ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে তিন বাহিনী প্রধানগণ নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন। ঢাকা ছাড়াও সাভার, বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা এবং রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসসমূহেও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে, দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। ঢাকা (সদরঘাট), নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজসমূহ ২১ নবেম্বর বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন শুক্রবার রাত আটটার সংবাদের পর সশস্ত্র বাহিনীর পরিবেশনায় ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। বাংলাদেশ বেতার ২১ নবেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ‘বিশেষ দুর্বার’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠানটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলসমূহ পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সম্প্রচার করবে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তাসমূহ (শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে স্টাফ রোড পর্যন্ত প্রধান সড়ক) যানজট মুক্ত রাখার লক্ষ্যে সেনানিবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের বহনকারী যানবাহন ব্যতীত সব ধরনের যানবাহন চালকদের সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সেনানিবাস এলাকা দিয়ে চলাচল পরিহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেনানিবাসের মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচলে সাময়িক অসুবিধার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গেছে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জের বৈকালীন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তাগণকে বেলা ২টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে এবং অন্যান্য অতিথিকে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর তাৎপর্য অপরিসীম। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এই দিবসে। ১৯৭১এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর তা-বলীলার জবাবে অস্ত্র তুলে নেয় বিপ্লবী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার ও অন্য সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসেন পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালী নাবিক ও নৌ-অফিসার, সেনা ও বিমান কর্মকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার মানুষ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানী শাসকদের স্বপ্ন নস্যাত ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর। সেই সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ। সশস্ত্র বাহিনী দেশের একটি গর্বের প্রতিষ্ঠান। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দেশের সুশিক্ষিত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী থাকাটা অন্যতম শর্ত। আজকের পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে। শান্তি মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
×