ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী সুফিয়া আখ্তার

সুফিয়া কামালের কবিতায় সুফীবাদ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২০ নভেম্বর ২০১৫

সুফিয়া কামালের কবিতায় সুফীবাদ

প্রবন্ধের শুরুতেই বলে নেয়া ভালো, সুফীবাদ অত্যন্ত প্রাচীন একটি চর্চিত বিষয়। সুফীবাদের অনেক সংজ্ঞা; অনেক ব্যাখ্যা এবং উপলব্ধি রয়েছে। সূফী সাধনার স্তর নিয়েও অনেক মতভেদ ও বিতর্ক আছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এই প্রবন্ধে এসব নিয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি। এই প্রবন্ধ মানব ও মানবাত্মার মুক্তি প্রত্যাশী কবি সুফিয়া কামালের কবিতায় কিভাবে সুফীবাদ রয়েছে, সে-আলোচনার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, সুফিয়া কামাল ত্রিশের দশকে তাঁর কবিতায় সুফীবাদ অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করেছেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৮ বছর। ১৯৩৮ সালে কলকাতা থেকে সুফিয়া কামালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থ কবির জন্য ব্যাপক সম্মান ও পরিচিতি বয়ে আনে। ‘সাঁঝের মায়া’ কবিতায় কবি লিখেছেন- ‘দীপÑ নাহি- জ্বালা গৃহে এমনি সন্ধ্যায় যেন তোমার আহ্বান, গোধূলি-লিপিতে আসে। নিঃশব্দ নীরব গানে গানে, পূরবীর সুরে সুরে, অনুভবি তারে প্রাণে প্রাণে, মুক্তি লাভে বন্দী আত্মা- সুন্দরের স্বপ্নে, আয়োজনে, নিঃশ্বাস নিঃশেষ হোক, পুষ্প-বিকাশের প্রয়োজনে!’ [সাঁঝের মায়া] এই কবিতায় ফুল ফোটার প্রয়োজনে অর্থাৎ পৃথিবীর অন্য কোন প্রাণের সৃজন- আনন্দে স্বপ্নে বিভোর কবি দেহ থেকে আত্মার মুক্তি প্রার্থনা করছেন। গোধূলি বেলায় দীপ জ্বালা হয়নি গৃহে এমন সময়ে সৃষ্টিকর্তার আহ্বানে প্রাণের অনুভবে, সঙ্গীতের সুরে পরম রোমান্টিকতায় নিঃশ্বাস নিঃশেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এ-যেন প্রখ্যাত সুফী আবুল মুঘীত আল হুসাইন বিন মনসুর আল-হাল্লাজের কবিতার মতো- ‘আমাকে খুন করো, বিশ্বস্ত বন্ধুরা আমার’ কারণ আমার নিহত হওয়াতেই আমার জীবন।’ আরেক প্রখ্যাত সূফী মাওলানা রুমী লিখেছেন- ‘আমি পাথর রূপে মারা যাই, এবং হয়ে উঠি একটি গাছ, একটি গাছ রূপে মারা যাই আর হয়ে উঠি একটি জন্তু .... মানুষ রূপে মারা গিয়ে একজন ফেরেশতার রূপে বেঁচে উঠব আমি। ... এবং শেষ আমি আর কিছুই থাকব না।’ সুফীবাদের অন্যতম বিশ্বাস বা উপলব্ধি হলো- সৃষ্টির পূর্বে ‘আমি ’সৃষ্টিকর্তার অংশ ছিলাম। সৃষ্টির পর ‘আমি’ সৃষ্টিকর্তা থেকে ‘বিযুক্ত’ হলাম। পরে আবার অনবরত পরমাত্মার সঙ্গে সৃষ্ট আত্মার মিলন আকাক্সক্ষার সাধনা। পরমাত্মার ইচ্ছায় তাঁর কাছ থেকে এই পৃথিবীতে আসা, তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করা। এটাই পরমাত্মার সঙ্গে মিলনের পথ। কিন্তু কখন পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত হবে; সৃষ্টিকর্তার মাঝে বিলীন হওয়ার সৌভাগ্য হবে, তা কোন ব্যক্তি-আত্মার অর্থাৎ ‘আমি’র জানা নেই। এ এক ব্যাখ্যাতীত উপলব্ধি। মানুষের মৃত্যু হবে। তার দেহের মৃত্যু হবে। কিন্তু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আত্মার বিনাশ হবে না। এই বিশ্বালয়ের লক্ষ কোটি প্রাণের মধ্যে অন্য একটি জীবনের ভেতর দিয়ে সে বেঁচে থাকবে। অর্থাৎ বারে বারে সে জন্মগ্রহণ করবে। কখনও গাছ, কখনও পাথর, কখনও ফুল, লতাগুল্ম, পিঁপড়া, ঘাস, কাঁকড়া, পাখি, জল, মাটি, বালি, পাহাড় হয়ে। স্রষ্টার ইচ্ছায় এই পৃথিবীতে তাঁর সৃষ্ট আত্মা পুনঃ পুনঃ জীবন-চক্রের এবং প্রাণবৈচিত্র্যের ভিতর দিয়ে এই ধরিত্রীতে অনেক দিন বেঁচে থাকবে। এটা সুফীবাদের দর্শন। এতে সুফিয়া কামালের অগাধ বিশ্বাস ছিল। যদিও তিনি সুফীবাদের মার্গীয় সাধনা কখনও করেননি। মানব মুক্তির কর্ম ও মানবাত্মার মুক্তির আকাক্সক্ষা এবং সুফীবাদ তাঁর রক্তে মিশেছিল। মাওলানা রুমী মনে করেন একপর্যায়ে ‘শেষ আমি আর কিছুই থাকব না।’ এখানে সুফিয়া কামালের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য লক্ষ করা যায়। সহজাত সুফিবোধের দ্বারা জারিত হয়ে সুফিয়া কামাল তাঁর ‘সমুদ্র কোথায় যাবে’ নামক প্রতীক কবিতায় প্রশ্ন তোলেন- “দলিত, গলিত-বিষ তিক্ত রূদ্ধ-শ্বাস ধৌত করি নদী যায় সমুদ্রের পানে স্নিগ্ধ হয়, পূর্ণ হয় সমুদ্র গাহনে। সে বিরাট সে বিপুল সে বিশালতার বক্ষ পাতি লয় যত আবর্জনা ভার। নীলকণ্ঠ সে নীলাম্বু বহে নিরন্তর সমুদ্র কোথায় যাবে? কে দেবে উত্তর?” [সমুদ্র কোথায় যাবে?] এখানে ‘সমুদ্র’ প্রতীক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুফীবাদে যে কথা বলা হয়ে থাকে, সাধনার অনেক পথ থাকবে, স্তর থাকবে কিন্তু শেষ পর্যায়ে একটি ধারায় এসে সব পথ ও মত মিলে যাবে, সমুদ্র সেই ধারার প্রতীক শেষ আশ্রয়স্থল। সব ক্লেদ ধুয়ে-মুছে এক সময়ে সমুদ্র ‘লয়’ হয়ে যাবে, এটা কবির অনুসন্ধানী মন ভাবতে পারে না। আল্লামা ইকবাল অসংখ্য বিষয়ে অলক্ষ্যের খোঁজে (সুফীবাদের একটি স্তর) অনেক সময় পার করেছেন। সুফিয়া কামালও এই স্তর থেকেই যেন প্রশ্ন ছুড়ে দেনÑ ‘সমুদ্র কোথায় যাবে?’ অর্থাৎ ‘আত্মশুদ্ধি’র পরে কী হবে? এই প্রশ্ন তাঁকে বিচলিত করে। জীবনমুখী, আধ্যাত্মিকতায় সিক্ত কবি খুঁজে ফেরেন তার উত্তর। মানব ও সমাজ মুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল আল্লাহর বা পরমাত্মার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি আজীবন ছিলেন সত্য, সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের পূজারী। অন্যায়, অসত্য, বৈষম্য ও অত্যাচার থেকে মানব মুক্তির লড়াইয়ে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাঁর কর্মে ও কবিতায় যে সুফীবাদের দর্শন পাওয়া যায়, তা তাঁর একান্ত নিজস্ব। অন্তর্গত সহজাত। বাস্তব জীবনে মানুষের ন্যায্য অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে; অন্যায় দূর করতে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নারী ও শিশু সংগঠনের হয়ে কাজ করেছেন, মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন আইন তৈরি করতে রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করেছেন; এদিক দিয়ে মরমি সাধক মনসুর আল-হাল্লাজের সঙ্গে তাঁর অনেক মিল পাওয়া যায়। মনসুর আল-হাল্লাজ তাঁর সময়ের শাসকদের কাছে সুষম করব্যবস্থার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাঁর প্রদত্ত মতামত সমকালীন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর অবস্থান সাংঘর্ষিক করে তুলেছিল। সুফিয়া কামাল অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। কিন্তু তাঁর মধ্যে কোন ধরনের ধর্মান্ধতা ছিল না। কোন সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছিল না। ছিল না জাত-পাতের বিচার। তাঁর ‘সাঁঝের মায়া’ বাড়ির দরজা সকলের জন্য খোলা থাকতো। কিন্তু কোন যুদ্ধাপরাধী প্রবেশ করতে পারতো না। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে অত্যন্ত ভালবাসতেন। একবার রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন- রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার কাছে প্রার্থনার মতো। এতে বাংলাদেশের একটি ধর্মীয় দল তাঁকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করেছিল। তিনি এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট অসংখ্য মানবের দুঃখ -দুর্দশা, অত্যাচার, নিপীড়ন দেখে সৃষ্টিকর্তাকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করতে দ্বিধা করেননি। এই বিশ্বের যা কিছু সৃষ্টি সকলই তার সৃষ্টিকর্তার। তবে কেন বিশ্বময় এত মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়? তিনি সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রশ্ন করেন- ‘কেন সৃজনের মায়া নাহি বাজে বক্ষে তব নাহি পশে কানে? নাহি শোন কী ব্যথায় কাঁদে কোন খানে তোমার সৃজিত আত্মা- কোথা কোন দেহ-কারাগারে মুক্তি মাগে নিত্য বারে বারে?’ [ হে বিধাতা শোন ] কিংবা ‘তোমারে স্মরিয়া এই মাটির ধরার মুগ্ধ প্রাণ তোমারেই করিছে সন্ধান। আর্ত অসহায় এই মাটির মানব তারে তুমি কী দিলে বৈভব? [ এ দিনের প্রার্থনা / মৃত্তিকার ঘ্রাণ] এই পৃথিবীর সকল সৃষ্টির মাঝে তিনি নিত্য অবলোকন করতেন সৃষ্টিকর্তার প্রবল উপস্থিতি। তাঁর লেখা ‘শুধু তুমি’ কবিতায় তিনি তাঁর ঈশ্বরের নব নব সৃষ্টির লীলা দেখে স্রষ্টাকে অনুভব করতেন। সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টাকে উপলব্ধি করা এ তো সুফীবাদেরই কথা। সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে একত্রে ক’জন দেখতে পায়? সৃষ্টিকর্তা যেন কোটি নক্ষত্রের নেত্রে আনন্দিত চিত্তে প্রসন্নমুখে দেখছেন তাঁর সৃষ্টির রূপ। ‘হেরি চতুর্দিকে তুমি যে যেতেছ লিখে নিত্য, নিত, নব নব রূপে পল্লবে পুষ্পের বুকে, মধু বিন্দু, বীজের স্বরূপে। কোটি নক্ষত্রের নেত্রে চেয়ে আছ ধরণীর পানে তোমারি সৃষ্টির রূপ হের তুমি প্রসন্ন আননে- স্নিগ্ধ স্নিগ্ধ চন্দ্রকর তোমা পানে চেয়ে জাগে প্রহরের পরের প্রহর।’ [ শুধু তুমি] কিংবা ‘হে মহান তুমি রহমান তুমি লীলাময় নিমিষে নিমিষে কর সৃষ্টি, স্থিতি, লয়। তোমার সৃজন-সুখে উদ্ভাসিত সুন্দর প্রভাত, তৃপ্তিতে সৃজন কর রাত।’ [এ দিনের প্রার্থনা / মৃত্তিকার ঘ্রাণ / সুফিয়া কামাল রচনাসংগ্রহ ] কবি তাঁর এই ‘শুধু তুমি’ কবিতায় এক স্থানে সৃষ্টিকর্তাকে প্রিয় ও বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন। আবার প্রভু বলেছেন। আত্মসমর্পণে লীন হয়ে যেতে যেতে কবি গভীর আত্মোপলব্ধিতে বলছেন- ‘তোমার সৃজন লীলা মধু বিষে ভরি বিশ্বময় নিজ হাতে দিয়েছ বিথারি পাপে ভরা, তাপে ভরা, ফুলে ভুলে ভরা মর্ত্ত ভূমি- অপূর্ব্ব সৃজন শিল্প শুধু তুমি শুধু তুমি!’ [ শুধু তুমি/ অগ্রন্থিত কবিতা] এই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের তুলনা কোথায়? ২. স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে- সুফিয়া কামালের কবিতায় সুফীবাদ কিভাবে এলো? তিনি তো রাবেয়া বসরির মতো রাতের পর রাত জেগে সুফীবাদী সাধন প্রক্রিয়ার চর্চা করতেন না। তিনি নিজেকে কখন সুফী মনে করতেন না। তিনি সুফী ছিলেন না। কিন্তু তিনি তাঁর যাপিত জীবনে মানবধর্ম চর্চা, শরীয়তপন্থী আধ্যাত্মিক ধর্মচর্চার সঙ্গে সুফীবাদের আধ্যাত্মিক দর্শনকে নিবিড়ভাবে যুক্ত এবং আত্মস্থ করেছিলেন। তাঁর কবিতায় তারই প্রতিফলন ঘটেছে। তাই তিনি সুফীবাদের দর্শন অনায়াসে কবিতায় তুলে আনতে সক্ষম হন। তাঁর ভিতরে মানুষের জন্য ভাল কিছু করার আকুতি ছিল। তিনি ধৈর্র্র্যশীলা ছিলেন। কারও কাছে তাঁর কিছু চাওয়ার ছিল না। আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস ও অগাধ আস্থা এবং অশেষ সন্তুষ্টি ছিল। আল্লাহ ভীতি ছিল। সুফীসাধকদের এসব গুণ অর্জনের জন্য কঠিন তপস্যার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। কৃচ্ছ্রসাধন করতে হয়। শৈশবে সুফিয়া কামাল আধ্যাত্মিক চেতনা ও সুফীবাদ চর্চার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। তিনি ১৯১১ সালের ২০ জুন; ১০ আষাঢ় ১৩১৮ বঙ্গাব্দে বরিশালের শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মা নবাবজাদী সৈয়দা সাবেরা খাতুন। বাবা সৈয়দ আবদুল বারি ছিলেন আইনজীবী, ভাষাপ-িত, আধ্যাত্মিক, সুফী ঘরানার সাধক। সুফিয়ার বয়স যখন সাত মাস এবং তাঁর বড় ভাইয়ের বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখনই তাদের বাবা ধর্মকে ভালবেসে গৃহত্যাগ করেন। আর ফিরে আসেননি। ফলে মাতুয়ালয়ের জমিদারী আভিজাত্যে এবং সংস্কৃতিতে সুফিয়া বেড়ে ওঠেন। বাবার ধর্মীয় ভাবোন্মাদনা সুফিয়া কামালের মধ্যে ছিল না। কিন্তু বাবার ধর্মীয় ভাব প্রগাঢ়ভাবেই তাঁর মধ্যে ছিল। সুফিয়া কামাল তাঁর ‘একালে আমাদের কাল’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘সাধু-সাধক, ফকীর দরবেশকে আমরা ছোটবেলা থেকে ভক্তিভাজন মাননীয় বলে মেনে এসেছি। আমাদের পরিবার আবার ছিল পীর পরস্তি বা মাজার পরস্তিবিরোধী। মাজারে মানত করা, শিরনি দেয়া, চাদর জড়ানো ইত্যাদি কর্ম ‘বেদাত’ বলে গণ্য হতো। শুধু প্রতি চন্দ্র মাসের এগারো তারিখে বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানীর নামে শিরনি হবেই। আমার নানা তাঁর নামে অনেক শের নাত গজল লিখেছেন বলে শুনেছি। বড় বড় মৌলানা মৌলবীরা আসতেন, তাঁদের সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা হতো। মামার আমলেও এই শিরনি করতে আমি বার বার দেখে এসেছি। আর কলকাতায় আমার খালুর বাড়িতে তখন সেকালের প্রসিদ্ধ সুফীসাধক মৌলানা সফিউল্লাহ সাহেবের প্রভাব অত্যন্ত বেশি ছিল।’ (চলবে)
×