ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে গেলেন ৬৩ জন

‘বিদায় বলব না... শুধু বলব, ভাল থেকো সুখে থেকো...’

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২০ নভেম্বর ২০১৫

‘বিদায় বলব না... শুধু বলব, ভাল থেকো সুখে থেকো...’

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে ॥ এক বুক আশা আর সমৃদ্ধ ভবিষ্যত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে সদ্য বিলুপ্ত গোতামারী ছিটমহলের স্বপ্নারানী (৩৫) বাংলাদেশ ছেড়ে চিরদিনের জন্য সপরিবারে ভারত চলে গেলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন মাত্র ২৮ দিন আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক কন্যা শিশুকে। তার নাম দশমী। ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য কর্র্তৃপক্ষের ট্রাভেল পাস গ্রহণকারীদের চিরবিদায় জানাতে তাদের আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসেছে। বিদায়বেলা এক অভূতপূর্ব হ্নদয়বিদায়ক দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রায় সমস্বরে সবার কান্নায় বুড়িমারী ইমিগ্রেশন রুটের বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল। অনেকে স্বজনদের ছেড়ে যেতে চায় না। আবার অনেকের স্বজনরা ভারতে যেতে ইচ্ছুক স্বজনদের ছেড়ে যেতে দিতে চায় না। সবার চোখে জল ছল ছল করছে। তাদের এই দৃশ্য দেখে মিডিয়া কর্মী দুই দেশের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের চোখে পানি এসে যায়। মুহূর্তে সকলে যেন সকলের আত্মার আত্মীয় বনে যায়। এ সময় গোতামারী সদ্য বিলুপ্ত ছিটের বাসিন্দা স্বপ্না রানী বলেন, যাবার বেলায় ‘বিদায় বলব না... শুধু বলব,ভাল থেকো সুখে থেকো। কেঁদো না তুমি। হাসি মুখ দেখে যেতে চাই।’ প্রথম দফায় ১৯ নবেম্বর বৃহস্পতিবার জননী-জন্মভূমি বাংলাদেশের সকল মায়া ত্যাগ করে জেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন রুট দিয়ে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা পরিবারগুলো চিরকালের জন্য ভারতে চলে যায়। ওদের স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার সকল আনুষ্ঠানিকতা ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০ টায় । টানা কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা শেষে দুপুর ২টার পর ৬৩ নারী-পুরুষ-শিশুকে ভারতের কুচবিহার জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে নেয়। চলমান প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় দফায় বাকিরা এ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাবে আগামী ২৩ নবেম্বর সোমবার একই রুট দিয়ে। বাংলাদেশের জেলা প্রশাসনের পক্ষে পাটগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানিয়ে ভারতীয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সাফল্যে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ও ছিটমহল চুক্তির বাস্তবায়ন। এই চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে। এর ফলে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর বাংলাদেশের ভূখ-ের বিরোধমুক্ত পূর্ণাঙ্গ মানচিত্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটেছে দুই দেশের ভেতরে থাকা ১৬২ ছিটমহলের কয়েক হাজার পরিবারের।
×