ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;জয়ফুল বিবির জবানবন্দী

বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও রাজ্জাকের সহায়তায় পাক সেনারা আমার মাকে ধর্ষণ করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২০ নভেম্বর ২০১৫

বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও রাজ্জাকের সহায়তায় পাক সেনারা আমার মাকে ধর্ষণ করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড়মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৮ম সাক্ষী জয়ফুল বিবি জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামিদের সহায়তায় পাকিস্তানী আর্মিরা আমার মা আবেদা খাতুন আকসি ও আগর চান বিবিকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনা আগর চান বিবি আমাকে বলেছিল। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করার জন্য রবিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী আজিজুর রহমান ওরফে ডলের জবানবন্দী শেষে রবিবার জেরার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন, ব্যািরস্টার তুরিন আফরোজ, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল ও প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষের ছিলেন এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ও এ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর। এদিকে বড়মিয়া ও আঙ্গুর মিয়ার মামলায় জবানবন্দীকালে ট্রাইব্যুনালের এক সদস্যের সঙ্গে আসামি পক্ষের এক আইনজীবীর বাকবিত-া হয় । এর ফলে মামলার জেরা মুলতবি করে চেয়ারম্যানসহ অন্য দুই সদস্য এজলাস ত্যাগ করেন। হবিগঞ্জের মামলায় সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম জয়ফুল বিবি, আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-অলিপুর, থানা - বাহুবল, জেলা-হবিগঞ্জ। একাত্তরে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১১ বছর। একাত্তরের ২৬ অক্টোবর বেলা ১০টায় আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড়মিয়া, আসমি মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ,আসামি আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও কয়েক রাজাকার ও ১০-১৫ আর্মিসহ রব সাহেবের বাড়িতে আক্রমন করে লুটপাট করে ও অগ্নিসংযোগ করে এবং তার বড়ি সংলগ্ন হিন্দু পাড়ায়ও আক্রমণ করে। এর পর তারা কমলা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে সেখানেও অগ্নিসংযোগ করে। এর পর তারা বেরিপারে মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামানের বাড়ি ও আমাদের বাড়ি পাশাপািশ। আমি আমার বাড়িতে থেকে রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিদের মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামানের বাড়ির লোকজনদের মারপিট করতে দেখেছিলাম। সাক্ষী আরো বলেন, এর পর আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া দুই পাকিস্তানী আর্মিসহ আমাদের বাড়িতে আসে। তখন ভয়ে আমি আমাদের ঘরে ঢুকে যাই। এবং ঐ ঘরে শুয়ে থাকা আমার অসুস্থ বাবা মঞ্জব আলীর লেপের নিচে লুকিয়ে পড়ি। এর পর দেখতে পাই যে, আসামি বড়মিয়া তার সঙ্গে আসা ঐ দুই পাকিস্তানী আর্মিকে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তখন ঐ দুই পাকিস্তানী আর্মি আমার মা আবেদা খাতুন আকসিকে ধর্ষণ করে। ঐ দুই পাকিস্তানী আর্মি আমাদের ঘরে আমার মাকে নির্যাতন করার পর আনুমানিক আধা ঘণ্টা পরে বের হয়ে যায়। আমাদের বাড়ি লাগোয়া বাড়ি আগর চান বিবির বাড়িতে আসামিদ্বয় পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে যায়। সেখানে আগর চান বিবিকে দেখতে পায়। আর্মিরা আগর চান বিবিকে ধর্ষণ করে। এবং এই ঘটনা আগর চান বিবি আমাকে বলেছিল। এর কয়েকদিন পর আগর চান বিবি বিষ খেয়ে মারা যায়।
×