ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজিতে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ নভেম্বর ২০১৫

এসডিজিতে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে জাতীয় পর্যায়ে সব ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন উন্নয়নকর্মীরা। তারা বলছেন, এমডিজিতে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু এসডিজির ১৭ লক্ষ্যের মধ্যে পাঁচটি লক্ষ্যে তাদের যুক্ত করা হয়েছে। এটি ইতিবাচক। দেশের মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ১০ শতাংশ মানুষ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। তাই এসডিজির বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুল এই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা জরুরী। এজন্য সারাদেশ থেকে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য জরিপ বা পরিসংখ্যান তুলে আনতে হবে। আর প্রতিবন্ধিতা সংবেদনশীল বাজেট তৈরির বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। বুধবার রাজধানীর রমনার বিআইআইএসএস অডিটরিয়ামে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রতিবন্ধিতা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক পরামর্শসভায় তারা এসব কথা বলেন। এ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও সেন্টার ফর সার্ভিসেস এ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজএ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পরিচালক ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবু ইউসুফ এবং ডিজএ্যাবিলিটি কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ চৌধুরী (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী)। এনজিও সংগঠন ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ড. রেজাউল হক সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিরা সভায় মতামত দেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের মোট সংখ্যা এবং প্রতিবন্ধিতার ধরন নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি ত্রুটিপূর্ণ জরিপ করেছে। কিন্তু সেটির ফলও প্রকাশিত হয়নি। সঠিক তথ্য না থাকায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিকল্পনাও যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না। সরকার প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় একাধিক আইন ও নীতিমালা করেছে। কিন্তু প্রয়োগ ও মনিটরিংয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া বেসরকারী পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এজন্য সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জাতীয় বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এখনও প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে অন্যান্য গোষ্ঠীর তুলনায় প্রতিবন্ধীদের জন্য তিন গুণ বেশি ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু আর্থিক বরাদ্দ বাড়ালেই প্রতিবন্ধীদের সমস্যার সমাধান হবে না। এজন্য অপ্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, প্রতিবন্ধীরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চেয়েও বেশি পিছিয়ে। স্বাস্থ্যগত ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার মতো বিষয়গুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে বিবেচনা করা যাবে না। তাদের জন্য বিশেষভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। মনসুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রতিবন্ধীদের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। তাদের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক অঙ্গীকারের চেয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা সমাজের মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এই বোধ তাদের মধ্যে ও অপ্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের গণপরিবহন প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়।
×