ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করলেন ডাচ রানী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করলেন ডাচ রানী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ মোবাইল ব্যাংকিং প্রসারের প্রশংসা করেছেন নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ইতিবাচক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এছাড়া আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক। তবে এক্ষেত্রে আরও বেশি সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন রানী ম্যাক্সিমা। সাধারণ জনগণের মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়লে দুর্নীতির প্রবণতাও কমে আসবে। বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আর্থিক প্রক্রিয়ায় সব মানুষের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিন দিনের সফর শেষে বুধবার ঢাকা ত্যাগ করেন নেদারল্যান্ডসের রানী। ঢাকা ত্যাগের আগে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ড. রবার্ট ওয়াটকিনস বক্তব্য রাখেন। এ সময় ডাচ রানী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি খুবই ইতিবাচক। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ খুবই ভাল করছে। জাতিসংঘ বিশ্বের সকল দেশেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে চায়। সে কারণেই তিনি এবার বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এ দেশের সব মানুষকে আর্থিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে চায় জাতিসংঘ। নেদারল্যান্ডসের রানী বলেন, বিশ্বের ৪০টি দেশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ফিলিপিন্স, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে একটি কৌশলপত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকাও জরুরী বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে ডাচ রানী বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো সম্ভব হলে, দুর্নীতির প্রবণতাও কমে আসবে। বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন বলেও জানান ডাচ রানী। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ খুব অতিথিপরায়ণ। এখানের মানুষের অতিথিপরায়ণতায় আমি মুগ্ধ। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভিশন-২০২১ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকল নাগরিকের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি নিশ্চিত করতে চায়। সে কারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসএমই’র মাধ্যমে ঋণ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমেও অর্থসহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক ॥ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা। বুধবার ডাচ রানী বঙ্গভবনে বৈঠক করেন বলে জানান রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রানি ম্যাক্সিমার বৈঠকের পর প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ও গার্মেন্ট শিল্পের ভূমিকার কথা জানান। নেদারল্যান্ডসের রানী ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের সফলতারও প্রশংসা করেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন এবং আশা করেন বাংলাদেশ এই ধারা অব্যাহত রাখবে। রাষ্ট্রপতি এ সময় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) উন্নয়নে সরকারের সাফল্য এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে রানীকে ধারণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ বাংলাদেশের উন্নয়নে সব সময় সহায়তা দেয়ার কথা বলেছেন নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা। বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে রানী ম্যাক্সিমা এই আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। রানী ম্যাক্সিমা গণভবনে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। রানী ম্যাক্সিমার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ইহসানুল করিম বলেন, রানী ম্যাক্সিমা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সব সময় সহায়তা দেয়ার জন্য নেদারল্যান্ডস প্রস্তুত। ২০১২ সালে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে যে লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ নির্ধারণ করেছে, তা পূরণের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেয়ার কথাও বলেন নেদারল্যান্ডসের রানী। ম্যাক্সিমা বাংলাদেশ সফরে ‘অভিভূত’ বলে বলে জানিয়েছেন। ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়েরও প্রশংসা করেন রানী ম্যাক্সিমা। বাংলাদেশের দুই কোটি ৯০ লাখ নাগরিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত শুনেও প্রশংসা করেন তিনি। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস ব-দ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন রানী ম্যাক্সিমা। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক করেন ডাচ রানী। এ সময় রানী ম্যাক্সিমা বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আরও ক্ষমতায়ন দরকার এবং তাদের আরও সেবা দিতে হবে। বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রানী ম্যাক্সিমা ব্যাংকের লেনদেন আরও আধুনিকায়ন করার কথা বলেছেন। তিন দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় পৌঁছান ডাচ রানী। মঙ্গলবার গাজীপুরে পোশাক কারখানা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ও ডিজিটাল সার্ভার সেন্টার পরিদর্শনে ব্যস্ত কাটান নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর আতিউর রহমান, সরকারী কর্মকর্তা, উন্নয়ন অংশীদার, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার রাতে ডাচ রানী ঢাকা ত্যাগ করেন।
×