ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিকফা বৈঠকে প্রস্তাব দেবে

বাংলাদেশের ব্লু-অর্থনীতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের ব্লু-অর্থনীতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশের ব্লু-অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। টিকফা’র দ্বিতীয় বৈঠকে বাংলাদেশকে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকৃষ্টে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। আর তাই টিকফা বৈঠকের পরই দেশটির বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সরকারী প্রতিনিধিদল। আগামী ২৩ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে টিকফা বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই বৈঠক সামনে রেখে এজেন্ডা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শক্তিধর অর্থনীতির এই দেশটির সবচেয়ে বেশি আগ্রহ এদেশের সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে। এছাড়া দেশের বিদ্যুত ও জ্বালানিখাতেও যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। টিকফা বৈঠক নিয়ে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত যুক্তরাষ্ট্র এক চিঠিতে ব্লু অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রফতানিতে জিএসপি পুনর্বহাল এবং শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার বিষয়ে টিকফা বৈঠকে আলোচনা করতে কার্যসূচী নির্ধারণ করছে সরকার। চুক্তি করার পর এটি হবে টিকফা ফোরামের (ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) দ্বিতীয় বৈঠক। তবে চুক্তিটি কার্যকর ও অর্থবহ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানিতে জিএসপি সুবিধা বহাল থাকা জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে টিকফা বৈঠকে পররাষ্ট্র, শ্রম সচিব এবং সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানির বাধা দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে এই চুক্তিটি গত ২০১৩ সালে করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তত একবার কিংবা প্রয়োজনে যেকোন সময়ে টিকফার বৈঠক আহ্বান করতে পারবে যেকোন দেশ। তবে গত বছর টিকফা ফোরামের কোন বৈঠক না হতে পারলেও এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই বৈঠক করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ২৩ নবেম্বর অনুষ্ঠিতব্য টিকফা বৈঠকের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ‘ব্লু’ বা সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিদ্যুত ও জ্বালানিখাতসহ দেশের বিভিন্ন খাত নিয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ যখন মন্দা তখন এদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বেড়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, টিকফায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বিনিয়োগ নিয়েই। আর এ কারণে টিকফা বৈঠকের পরবর্তী দিন ২৪ নবেম্বর দেশটির বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কার্যসূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া জিএসপি পুনর্বহাল ও রফতানিতে শুল্ক এবং কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হবে। তিনি বলেন, সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আশা করছি টিকফা বৈঠক সফল হবে। এদিকে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা চূড়ান্ত হওয়ায় বাংলাদেশের মোট সমুদ্র সীমানা দাঁড়িয়েছে এক লাখ আঠারো হাজার আট শ’ তেরো বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, সমুদ্রনির্ভর উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্রকে পাল্টিয়ে দিতে পারে। সেন্টার ফর ব্র্যাক থ্রো থিংকিং কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, সমুদ্র সম্পদকে নিজস্ব সক্ষমতা কিংবা অনুকূল শর্তসাপেক্ষে উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যায় তবে দেশের জিডিপিতে আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে অতিরিক্ত ৩-৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যুক্ত হওয়া সম্ভব। ভারত এবং চীন তারা মূলত তাদের নিজস্ব সক্ষমতা দ্বারা সমুদ্র সম্পদের সদ্ব্যবহারে সচেষ্ট রয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমার বিদেশী কোম্পানিসমূহের দ্বারস্থ হয়েছে। এ কারণে সমুদ্র অর্থনীতিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টে সরকারেরও প্রচেষ্টা রয়েছে। আর তাই টিকফা বৈঠক সামনে রেখে ব্লু অর্থনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সরকার। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন, মৎস্য আহরণ, পর্যটন খাতের বিকাশ, মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ ম্যাগনেটাইট, জিরকন, রিউটাইল, ইলমেনাইট প্রভৃতি উত্তোলনে বিদেশী বিনিয়োগ অপরিহার্য্য হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, ব্লু-অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বিদেশী বিনিয়োগের বড় বেশি প্রয়োজন। যদি টিকফা বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয় তাহলে এটি হবে সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিনিয়োগ নীতিকে অনেক শিথিল করা হয়েছে। রয়েছে অর্থনৈতিক ছাড় ও সুবিধা। এই সুবিধা বিদেশী বিনিয়োগকারীরা গ্রহণ করতে পারেন। টিকফা কার্যকরে মার্কিন বিনিয়োগ প্রয়োজন ॥ এদিকে টিকফা চুক্তি কার্যকর করতে হলে দেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পোশাক রফতানিতে কোটা ও ডিউটি ফ্রি নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত এক বছরে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্য রফতানি বাবদ যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক প্রদান করেছে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ সক্ষমতার তুলনায় তা অনেক কম। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুত খাত ছাড়াও আরও বেশকিছু খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সহজ কর অবকাশ সুবিধা, কম শুল্কে যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য শতভাগ সমান সুবিধা, বাধাহীন এক্সিট পলিসি, মুনাফা নিজ দেশে নেয়াসহ নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে সাতটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা জমি নিয়ে শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৮ কোটি তরুণ জনশক্তি এবং ১৬ কোটি ক্রেতার বিশাল বাজার বিনিয়োগকারীদের সহায়ক হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তির (টিকফা) ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×