ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণ গোপাল দত্ত

আমার গডফাদারের মহাপ্রয়াণ

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

আমার গডফাদারের মহাপ্রয়াণ

৬ অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৫ মিনিটে এ্যাপোলো হাসপাতালের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে আমার গডফাদারের মহাপ্রয়াণ হলো। ‘গডফাদার’ শব্দটা শুনলে এই যুগে মানুষ হতচকিত হয়ে ওঠে, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। আসলে গডফাদার শব্দটার উৎপত্তি খ্রিস্টীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি থেকে। কোন নবজাতক শিশুকে ক্রাইস্ট করানোর জন্য অর্থাৎ গির্জাতে নিয়ে তাকে প্রথম যে খ্রিস্টধর্মের দীক্ষা বা খ্রিস্টধর্মের সন্তান হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়, সেই জায়গাতে শিশুটির মা-বাবার পাশাপাশি শিশুর কাকা-কাকি, জেঠা-জেঠি, ফুফু-ফুফা অথবা শিশুটির বাবার কোন বন্ধু এবং তার স্ত্রীকে একই সময়ে গির্জাতে উপস্থিত থাকতে হয় এবং ক্রুশ হাতে নিয়ে তাদের শপথ করতে হয় যে, শিশুটির বাবা-মার অবর্তমানে অর্থাৎ কোন কারণে বাবা-মা বেঁচে না থাকলে অথবা লালন-পালনে অপারগ হলে এ শিশুর দায়দায়িত্ব তারা পালন করবেন। অত্যন্ত সুন্দর একটি পদ্ধতি এবং সেটা থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় প্রত্যেক ধর্মেই কিছু না কিছু ভাল এবং মূল্যবান দিক আছে। সেখান থেকেই ওই যারা ক্রুশ হাতে নিয়ে শিশুর দায়দায়িত্ব নেবেন তাদের ওপর শুধু দায়দায়িত্ব বর্তায় না তাদের বলা হয় শিশুটির গডফাদার এবং গডমাদার। এরশাদুল হক সাহেব তেমনি আমার গডফাদার ছিলেন। যদিও কোন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় তিনি আমার লালন-পালনের দায়িত্ব নেননি। আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। আমার অনেক সিনিয়র। তাঁর ছোট ভাই এ এইচ এম আবুল কাশেম যিনি একজন সচিব হিসেবে অবসরে গেছেন, তিনিও আমার তিন-চার বছরের সিনিয়র এবং আমার বড় ভাইয়ের মতো। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা এক সঙ্গে ছিলাম। সব সময় কাশেম ভাই এবং ইরশাদুল হক বলতেন যে আমরা পাঁচ ভাই না, আমরা ছয় ভাই। অর্থাৎ আমাকে ওনারা ভাই হিসেবে ধরে নিতেন। আমি জানি না আমার কি কি দোষ বা গুণ আছে, তবে একমাত্র ব্যক্তি ইরশাদুল হক সাহেব আমাকে প্রাপ্তির চেয়েও অধিক স্নেহ, মায়া-মমতা ভালবাসা দিয়েছেন। ইরশাদুল হক সাহেব শুধু যে একজন শিক্ষিত প-িত ছিলেন তা নয়। তিনি অত্যন্ত উদার এবং ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। আমি যতটুকু জানি বিশ্ব এজতেমা টঙ্গীতে যেটা হচ্ছে, ওটার একজন প্রথম সারির সংগঠকও উনি ছিলেন। দেশের বাড়িতে উনি ‘আবেদা নূর ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন করেছেন। যেই ফাউন্ডেশনের অধীনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, দাতব্য চিকিৎসালয় থেকে শুরু করে সব কিছুই আছে এবং ওনার সম্পদের প্রায় সব অংশই উনি ওই ফাউন্ডেশনে দান করে গেছেন। কেবল একটি বাড়ি যেটা উনি ওনার তিন কন্যার জন্য রেখে গেছেন। আমার প্রতি ওনার প্রগাঢ় ভালবাসার একটা উজ্জ্বল নিদর্শন হলো, যার সঙ্গেই উনার কথা হতো উনি বলতেন, ‘একজন অমুসলিম ব্যক্তিও যদি বেহেশতে যায় তাহলে প্রাণ গোপাল যাবে।’ উনি কখনও বলতে ভুল করতেন না যে ‘প্রাণ গোপাল বাংলাদেশের বিধান রায়।’ আমি জানি বিধান রায় একজনই জন্ম নিয়েছিলেন। আমাকে তুলনা করলে, বিধান রায়কে অপমান করা হবে। সর্বশেষ উনি আমাকে মাস তিনেক আগে বলেছিলেন যে, তুমি যেভাবে রোগীদের দেখ, রোগীদের সেবা দাও, এর থেকে যেন তার গুণগত মান কোন অবস্থাতেই না কমে। আমি ওনাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, স্যার এর থেকে যদি আমি গুণগত মান আরও বাড়িয়ে দেই, বললেন বাড়াতে পারলে ভাল। কিন্তু এর থেকে যেন না কমে, তুমি যা দিচ্ছ এটায় পৃথিবী স্টান্ডার্ড হচ্ছে। এটা এমনও হতে পারে সন্তানের প্রতি পিতার যে ভালবাসা সেটা অথবা আমার প্রতি ওনার অন্ধ বিশ্বাস এবং অন্ধ ভালবাসা। তবে সত্যিকার পিতাই তার যোগ্য এবং অযোগ্য যে কোন সন্তানের প্রতি অন্ধভাবে ভালবাসা রাখতে পারেন। একটি ঘটনার অবতারণা না করলে হবে না সেটা হলো, ১৯৯৫ সালে আমি পাবলিক সার্ভিস কমিশনে অধ্যাপক নাক, কান, গলার একটি শূন্য পদের জন্য ইন্টারভিউ দেই। ওই পদটির বিপরীতে প্রার্থী শুধু আমি একজনই ছিলাম। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে কার্ড পাই এবং ইন্টারভিউ বোর্ডে আমার সাবজেক্ট স্পেশালিস্ট ছিলেন প্রফেসর আবদুল্লাহ হারুন সাহেব এবং আমার আরেক প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ নুরুল আমিন। পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল সায়েন্সের অধ্যাপক ফয়েজ স্যার। পিএসসির মেম্বার ছিলেন স্বাস্থ্য সেক্টরের একজন অধ্যাপক তিনি হলেন মিজানুর রহমান সাহেব। চারজনের বোর্ডে আমার আগে পরীক্ষা দিলেন নিউরো মেডিসিনের প্রফেসর পদে তখনকার ডাক্তার আনিসুল হক। তারপরেই আমি পরীক্ষা দিতে যাই। পরীক্ষাতে ঢোকার পরে স্বাভাবিক নিয়মে যে সব প্রশ্ন হয় জবাব দিচ্ছি। তবে মনে হলো যে, একজন এগজামিনার অর্থাৎ হারুন সাহেব উনি মোটামুটিভাবে ব্রিফ হয়ে আসছেন যেন আমি সুপারিশ না পাই। ওনার প্রশ্নগুলো ওরকমই তাল-বেতালের ছিল। ওই সময় আমার আমেরিকান জার্নাল, ব্রিটিশ জার্নাল, রাশিয়ান জার্নাল, পাকিস্তানী জার্নাল এবং ইন্ডিয়ান জার্নালে পাবলিকেশন্স ছিল। ইন্টারভিউয়ের শেষ পর্যায়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ফয়েজ সাহেব দাঁড়িয়ে বললেন ‘প্রাণ গোপাল Though this is not the rule of PSC but even then I am so happy & I am so glad that I congratulate you as a professor of ENT.’ যথাসময়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে আমার পদোন্নতির সুপারিশ চলে আসল মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ে যখন ফাইল প্রসেস হবে তখন নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলো। যেখানে আমার নাক, কান, গলা বিভাগের সিনিয়র কিছু অধ্যাপক এবং জুনিয়র কিছু ডাক্তার জড়িত ছিলেন। তদানীন্তন ড্যাবের নেতৃস্থানীয় নেতারা জড়িত ছিলেন। আমার ফাইলটি প্রসেস হলো। জনাব আব্দুর রউফ তিনি তখন যুগ্ম সচিব, প্রশাসন। জনাব রফিকুল ইসলাম উপসচিব। উনাদের মাধ্যমে ফাইলটি প্রসেস হয়ে যখন মাননীয় মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ সাহেবের কাছে যায় উনি ফাইলের ওপর লিখে দেন ‘The upward movement of the file should be temporarily stopped.’ অর্থাৎ এই ফাইলের উর্ধমুখী চলাচল বন্ধ করা হলো। এখানে উর্ধমুখী চলাচল বলতে বোঝানো হলো যে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত অনুমোদনের জন্য যেতে হবে সেটা আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসবে না এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও যাবে না। এই পর্যায়ে যুগ্ম সচিব রউফ স্যার রফিক সাহেবকে বললেন এই রকম ঘটনা। মন্ত্রী মহোদয় বলছে ‘ফাইলটা না পাঠাতে। এটা অবিশ্বাস্য যে একজন ডাক্তারের ওপর একজন মন্ত্রী এত বড় অবিচার করতে পারেন।’ আপনি গিয়ে ফাইলটি নিয়ে আসেনÑ আমাকে ডেকেছিল আমি যাব না। রফিক সাহেব তখন ফাইলটা এনে ওনাকে দেখান। আমি ফাইলের গতিবিধি জানার জন্য যখন ওনার কাছে যাই, যাওয়ার পরে উনি অকপটে সব আমাকে বললেন। আমার মনে হয় উনিও আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন। ওনার দুই সন্তান রানা আর রনি। একজন অস্ট্রেলিয়াতে আছেন একজন চট্টগ্রামের ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে চাকরি করেন, সম্ভবত এখন সে ঢাকায় আছে। তারাও আমার খুব প্রিয়। উনি আমাকে বললেন, আমার আর কিছু করার নেই। এই খবরের পরে আমি এরশাদুল হক স্যারের কাছে আসি, জিজ্ঞেস করলাম এই পরিস্থিতিতে আমি কি করব? ওনি বললেন তুমি যাও। ইতোমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসল। আসার পরে ইরশাদুল হক সাহেব আবার ফাইলটাকে প্রসেস করালেন রউফ স্যারকে দিয়ে। প্রধান উপদেষ্টার সচিব আবদুল্লাহ হারুন পাশা স্যারের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস স্যারের কাছে পাঠালেন। তখন ওনার সচিব ছিলেন নুরুদ্দিন আল মাসুদ সাহেব। এ ক্ষেত্রে আমি বলে রাখতে চাই যে, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব মোহাম্মাদ আলী, যোগাযোগ সচিব রেজাউল হায়াত, এরশাদুল হক স্যার, নুরুদ্দিন আল মাসুদ, আব্দুর রউফ স্যার এবং এম এ মজিদ স্যার যুগ্ম সচিব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অতিরিক্ত সচিব আফতাব উদ্দিন, প্রত্যেকে আমার প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন। এবং তাদের সহানুভূতি ও সাহস আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। এম এ মজিদ স্যার শুরু থেকে পদে পদেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমন একটা জঘন্য অপরাধ হচ্ছে, যার নজির অতীতে নেই, তাই উঠেপড়ে সবাই সাহায্য করেছিলেন। ওনারা মনে হয় নিজেদের বিবেকের তাড়নায় আমার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছিলেন এই ভেবে যে, আমার প্রতি একটা অন্যায় করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবার একটি চিঠি অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন সাহেব পাবলিক সার্ভিস কমিশন বরাবর পাঠিয়ে দিলেন এই বলে, ‘আমার পরীক্ষা ফেয়ার হয়নি এবং পুনরায় আমার পরীক্ষা নেয়া হউক।’ যেটা আমার মতে একমাত্র একজন ডাক্তার লিখতে পারে আর কেউ এরকম চিঠি লিখতে পারে না। কারণ আইন সম্পর্কে ডাক্তাররাই হলো সব চেয়ে বেশি অনভিজ্ঞ। রাষ্ট্রপতির ওখানেও আমার প্রফেসরশিপ ঠেকানোর জন্য আমার নাক, কান, গলার শিক্ষক, সহকর্মী ও ছাত্রদের একটা অংশ উঠেপড়ে লাগল। আমার প্রফেসরশিপ ঠেকানোর জন্য কেউ কেউ গিয়ে একটা চিঠি দিয়ে এলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে। এ ফাইল যেন সাইন করা না হয়। ওনার যিনি মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন, মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী সাহেব অসম্ভব সহানুভূতিশীল হয়ে এবং নুরুদ্দিন আল মাসুদ স্যার প্রত্যেকে নিজ ঘাড়ে দায়িত্ব নিয়ে মোটামুটিভাবে রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে বুঝিয়ে আমার ফাইলটা সই করাতে সক্ষম হননি। কারণ ইতোমধ্যে অধ্যাপক মাজেদ স্যারের নেতৃত্বে আমার নাক, কান ও গলা রোগ বিদ্যার ৫ চিকিৎসক মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমার বিরুদ্ধে কিছু বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ইরশাদুল হক স্যার যেদিন হজে যাবেন সেদিন আমি ওনার কাছে এলাম। আমার অধ্যাপক পদের জন্য আমি আসিনি, সুপারিশের জন্য আসিনি। আমি ওনার কাছে এসেছি শুধু বলার জন্য ‘স্যার, আপনি তো হজ করতে যাচ্ছেন কাবা শরীফে আমাদের জন্য একটু দোয়া করবেন, যেন ভাল থাকি এবং আল্লাহতায়ালা আমাদের আরেকটা সন্তান দেন’ এবং কাবা শরীফে সৎ মানুষের প্রার্থনা মহান স্রষ্টা কবুল করে থাকেন এটা আমার বিশ্বাস। তখন মিসেস ইরশাদুল হক কাগজ বের করে এটা লিখে নিলেন। উনি গাড়িতে উঠে যাবেন এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য মালামাল সব উঠে গেছে। তখন উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ‘তোমার ফাইলটা কি সাইন হয়ে আসছে?’ আমি বললাম না স্যার। কি বল! উনি আবার গাড়ি থেকে নেমে ওনার বারিধারার বাসার দোতলায় উঠলেন। উঠে ফোর ডিজিট টেলিফোন দিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরাসরি কথা বললেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান সাহেবকে বললেন, ‘স্যার আমি তো হজে যাচ্ছি আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। অনেক সময় আপনার সঙ্গে মনিং ওয়াক করেছি, দেখা হয়েছে, অনেক কিছু নিয়ে আমাদের মতানৈক্য হয়েছে, কোন কিছু মনে রাখবেন না স্যার, আমার জন্য দোয়া করবেন।’ এই সব কথা বললেন। বলার পরে উনি বললেন যে, স্যার ডাক্তার প্রাণ গোপালের ফাইলটা বোধ হয় সাইন হয়নি। ওই প্রান্ত থেকে উনি যা বললেন সেটা তো আমি শুনতে পাইনি। পরে ইরশাদুল হক স্যারের মুখ থেকে যেটা আমি শুনলাম সেটা হলো যে এটা করা যাবে না। কেন? He is anti-state. ZLb Bikv`yj nK m¨vi ej‡jb Ôm¨vi, As a Senior Secretary of the Government & as a responsible person of the locality I, Irsadul Haque personally stand by the side of Dr. Pran Gopal Datta for his character certificate and also to say that there is no subversive activity known against যরস’ রাষ্ট্র বিরোধী কোন কার্যকলাপ তার বিরুদ্ধে নেই। স্যার আমি হজে চলে যাচ্ছি। আপনার যদি মন চায় আপনি ফাইলটায় একটু সাইন করে দিয়েন। সত্যি সত্যি এই বক্তব্যের পরে আব্দুর রহমান বিশ্বাস স্যারের মন বোধ হয় গলেছিল এবং উনি আমার ফাইলটা সাইন করে দেন। ফাইলটা সাইন করার প্রথম খবরটা আমি পাই ওনার মিলিটারি সেক্রেটারি মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী এবং ওনার সচিব নুরুদ্দিন আল মাসুদ স্যারের মাধ্যমে। যাই হোক, এক বছর পরে ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে আমি অধ্যাপক হিসেবে আমার নিয়োগ পাই এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে যোগদান করি। আমার গডফাদারের মহাপ্রয়াণে আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, আমি বোধ হয় এতিম হয়ে গেলাম। এই ইরশাদুল হক সাহেব ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গবর্নর মনোনীত হয়েছিলেন এবং সিলেটে গবর্নরের পদ অলঙ্কৃত করার অপেক্ষায় ছিলেন। আমি কায়মনোবাক্যে, নীরব ভঙ্গিতে, অপলক দৃষ্টিতে, নিদাঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে মহান আল্লাহ তালার কাছে এই প্রার্থনা করব উনি যেন জান্নাতবাসী হন। উনি যেন বেহেশতের সব চেয়ে সুন্দরতম স্থানে জায়গা পান। আমি জানি না, একজন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে আমার এই প্রার্থনা কবুল হবে কি-না। তবে আমি একজন মানুষ হিসেবে এই প্রার্থনা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে প্রার্থনা করছি স্রষ্টা যেন আমাদের শক্তি দেন উনার কীর্তিগুলো ধরে রাখার জন্য। লেখক : সাবেক ভিসি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×