ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সচিব পর্যায়ের বৈঠকে প্রটোকল ও ট্রানজিট মাসুল চূড়ান্ত হচ্ছে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌবাণিজ্যের নতুন দ্বার খুলছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌবাণিজ্যের নতুন দ্বার খুলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে নৌবাণিজ্যের নতুন দ্বার খুলছে। নৌবাণিজ্য প্রোটোকল স্বাক্ষরের ফলে ভারত-বাংলাদেশ নৌবাণিজ্যে ৩০ ঘণ্টার পরিবর্তে এখন ১০ ঘণ্টা সময় লাগবে। এতদিন সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে নৌপথে পণ্যপরিবহন করা হতো। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর দুই দেশের মধ্যে সরল এ পথ খোলার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলো। এদিকে দিল্লীতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে নৌবাণিজ্য প্রোটোকল ছাড়াও ট্রানজিট মাশুল চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিটন পণ্যে মাশুল ১৩০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। আর ভারত বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে পরিবহনের সময় পণ্যের নিরাপত্তা প্রহরা চাইলে আরও ৫০ টাকা দিতে হবে। সোমবার দুই দেশের সচিব পর্যায়ের ২য় দিনের বৈঠকে দিল্লীতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দিল্লী থেকে নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জনকণ্ঠকে জানান এখনও বৈঠক চলছে। আমরা আমাদের সরকারের তরফ থেকে প্রতিটন পণ্যের জন্য ১৩০ টাকা মাশুল প্রস্তাব করেছি। তবে এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি রাতেই আমরা উভয় পক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো। ভারত রাজি হলে তাদের সঙ্গে আমরা সমঝোতা স্মারক এমওইউ স্বাক্ষর করবো। ওই বৈঠক সূত্র বলছে, যাত্রী ও পর্যটন জাহাজ পরিবহনের সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সমঝোতাপত্র বাস্তবায়নের প্রোটোকল চূড়ান্ত হওয়া, ট্রানজিট ফি, ব্যাংক গ্যারান্টি, প্রোটোকল পথগুলোর নদীপথ ড্রেজিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার আর্থিক সাহায্য নেয়া এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর নির্মাণ নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ রুটগুলো হলো- ভারতের হলদিয়া, কলকাতা, পা-ু, করিমগঞ্জ ও শিলঘাট এবং বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, মংলা, সিরাজগঞ্জ ও আশুগঞ্জ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে পথে কলকাতা থেকে শিলাইদহ যেতেন, সেই পথের পুনরুজ্জীবন ঘটানো হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। রবিবার উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন পরিচালন পদ্ধতি বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (এসওপি) চুক্তি সই হয়েছে। নয়াদিল্লীতে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রথম দিনে এ চুক্তি সই হয়। এ সময় ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবহন ও জাহাজ চলাচলমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি এবং বাংলাদেশের নৌসচিব সফিকুল আলম মেহেদী উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের নৌসচিব সফিক আলম মেহেদী ও ভারতের সচিব রাজীব কুমারের উপস্থিতিতে এসওপি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম ও ভারতের পক্ষে সে দেশের জাহাজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা অমিতাভ কুমার। চুক্তি স্বাক্ষরের পর নীতিন গড়কড়ি বলেন, এরপর ভারত থেকে সস্তায় কমলালেবু ও চিনি রফতানি করা যেমন সুবিধা হবে, তেমনি বাংলাদেশ থেকেও ভারতের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা সহজ হবে। তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের ব্যয় ২০ শতাংশ কম হবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নৌসচিব বলেন, এ চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়েছে শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতায়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এক নতুন শিখরে উন্নীত করতে চান। সূত্র বলছে, এতদিন অস্বাভাবকি দূরত্বপাড়ি দিয়ে ভারত বাংলাদেশের বাণিজ্য চলতো। ভারতের র্পূব উপকূলের বন্দরগুলো থেকে মালবাহী নৌযান বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগর দিয়ে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দরে যেত। সেই পণ্য সেখানে খালাস হওয়ার পর আবার বাংলাদশের জাহাজে করে বাংলাদেশে আসতো। এর ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদশে পণ্য পৌঁছতে সময় এবং অর্থের অতিরিক্ত ব্যয় হতো। এখন থেকে পণ্যবাহী নৌযান ভারতের হলদিয়া, কলকাতা, করমিগঞ্জ, হলদিয়া বা পারাদ্বীপ থেকে রওনা হয়ে বঙ্গোপাসাগর হয়ে ভিড়বে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মংলা, নারায়ণগঞ্জ বা খুলনার বন্দরে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর একরে পর এক জট খুলছে। দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ ভারত এক সঙ্গে কাজ অঙ্গীকার করেছে। সুদীর্ঘকালের স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে হাসিনা-মোদি সরকার। সমুদ্রসীমা নিয়ে দুই দেশের মতবিরোধের অবসান হয়েছে। যদিও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে মতোবিরোধ রয়ে গেছে। গত জুনে মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় উভয় দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত রেখে সহায়তা করার বিষয়ে মতঐক্য হয়।
×