ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছায়ানটের নৃত্যোৎসবে মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৫

ছায়ানটের নৃত্যোৎসবে মুগ্ধ দর্শক

গৌতম পাণ্ডে ॥ ছায়ানট বিদ্যায়তনের ভেতর-বাইরে সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। মিলনায়তনে প্রবেশ করেই দেখা যায় দর্শকের উপস্থিতি এতবেশি যে, বসতে না পেরে পেছনে অনেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শাস্ত্রীয় নৃত্যের এই সুন্দর মুহূর্তকে কেউই যেন বিফলে যেতে দিতে নারাজ। ব্যাকস্টেজ থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে নূপুরের ঝঙ্কার। ছায়ানট আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘নৃত্যোৎসব ১৪২২’র শুক্রবার ছিল উদ্বোধনী দিন। এদিন সন্ধ্যায় দেশের স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পীদের একক ও দলীয় পরিবেশনায় মুগ্ধ দর্শক। শিল্পীরা মণিপুরী, ওড়িশি, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্যে সকলকে ভিন্ন এক মুহূর্ত উপহার দেন। ঘড়িতে যখন ঠিক সাড়ে ৬টা, মঞ্চে আসেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। স্বাগত কথনে তিনি বলেন, আমাদের দেশে নৃত্যের ঐতিহ্যগত আঙ্গিক নেই বললেই চলে। শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় কয়েকটি জায়গা রয়েছে। আমরা শাস্ত্রীয় নৃত্যকে ধরে রাখতে চাই, সে কারণেই প্রতিবছর আমাদের এই আয়োজন। সাধারণ মানুষ গভীরভাবে যেন এসব নৃত্য উপলব্দি করতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এই চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রথমেই মণিপুরী নৃত্য দিয়ে মঞ্চে আসে ছায়ানটের শিল্পীরা। ভারতের মণিপুর অঞ্চলে এ নৃত্যের উৎপত্তি। সাধারণত কীর্তন মণিপুরী ভাষা ও ব্রজবুলি মেশানো গানের সঙ্গে এ নৃত্য পরিবেশিত হয়। শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনায় ছিল ‘মন্দিরা নাট্যম’। এ নৃত্যে সরল, বিনয়ী, ভক্তিরস এবং কোমল ও মধুর ভাব ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা। নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্রর শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল ‘শুক-সারী দ্বন্দ্ব’। মণিপুরী নৃত্যের এ বিষয়টিতে রাধা-কৃষ্ণর গুণকীর্তন নিয়ে শুক ও সারীর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এবং পরিশেষে তারা উভয়েই দ্বন্দ্ব ঘুচে যায়, এটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একক নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী ওয়ার্দা রিহাব। তার পরিবেশনায় ছিল ‘বসন্ত বর্ণম’। হোলী খেলার মধ্যদিয়ে তিনি বসন্তকে বর্ণনা করেন তার নৃত্যে। ধৃতি নর্তনালয়ের শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনায় ছিল ‘খোবাক ইসই বা করতালি নৃত্য’। মূলত করতালি ও অঙ্গ শৈলির মাধ্যমেই এ নৃত্য পরিবেশিত হয়। রাধা-কৃষ্ণের মান ভঞ্জন নিয়ে ‘খ-িতা নায়িকা’ মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী তামান্না রহমান। এরপর শুরু হয় ওড়িশি নৃত্য পর্ব। নৃত্যছন্দের শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনায় ‘মঙ্গলাচরণ’ নৃত্যদিয়ে এ পর্বের শুরু হয়। পরে কৃষ্ণলীলা নিয়ে ‘অভিনয়’ নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী বেনজির সালাম সুমি। ভরত নাট্যম পর্বের শুরুতে পুষ্পাঞ্জলি নাট্যলিপিসহ ‘আলারিপু’ পরিবেশন করে ছায়ানটের শিল্পীরা। মালিহা রাগের উপর ‘তোদায়া মঙ্গলারম’ নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী পুজা সেনগুপ্ত। সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের পরিবেশনায় ‘জাতিসোয়ারম’ ভরতনাট্যমের পর মঞ্চে আসেন নৃত্যশিল্পী অমিত চৌধুরী। তাঁর পরিবশেনায় ছিল ‘নরসিংহ কৌতুভম স্তুতি’। অসাধারণ নৃত্যশৈলিতে তিনি নরসিংহর বর্ণনা করেন। পরে ‘তিল্লানা’ নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী শুভ্রা সেনগুপ্ত। কত্থক নৃত্য পর্বে ‘লক্ষেèৗ ঘরানার শুদ্ধ নৃত্য’ পরিবেশন করেন শিল্পী মনিরা পারভীন হ্যাপী। এরপর কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী স্নাতা শাহরিন ও মাসুম হুসাইন। সবশেষে নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীদের কত্থক নৃত্য পরিবেশনার মধ্যদিয়ে নৃত্যোৎসবের প্রথম দিনের আয়োজন শেষ হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার সন্ধ্যায় মনিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন সিলেটের শান্তনা দেবী, ছায়ানটের সামিনা হোসেন প্রেমা ও ফারহানা আহমেদ, এবং ভাবনা। ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন জসিম উদ্দিন ও সুদেষ্ণা স্বয়ম্পপ্রভা তাথৈ। গৌড়ীয় নৃত্য পরিবেশন করেন প্যারিস প্রবাসী শিল্পী র‌্যাচল প্রিয়াংকা। ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন শিল্পী জুয়েইরিয়াহ্ মৌলি, বেলায়েত হোসেন খান ও জাগো আর্ট সেন্টারের শিল্পীরা। কত্থক নৃত্যে অংশ নেন শিল্পী মুনমুন আহমেদ, তাবাছসুম আহমেদ, তাহনীনা ইসলাম ঝুমি ও ঢাকার কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। একের পর এক শিল্পীদের নৃত্যশৈলীতে মুগ্ধ দর্শক। নীরবে দেখে আর নৃত্যশেষে করতালিতে শিল্পীদের অভিনন্দিত করে। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শেষ হয় দুই দিনব্যাপী নৃত্যোৎসব।
×