ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা জাতীয়করণসহ এবার ৬ দফা দাবি জানাল শিক্ষক সমিতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

শিক্ষা জাতীয়করণসহ এবার ৬ দফা দাবি জানাল শিক্ষক সমিতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা জাতীয়করণসহ ছয় দফা দাবি তুলেছে বেসরকারী শিক্ষকদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। সমিতির নেতৃবৃন্দ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে বলেছেন, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হলে এমপিওভুক্তির বিড়ম্বনা দূর হবে। সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার যে বৈষম্য বিদ্যমান তা দূর হবে এবং শিক্ষার মানও উন্নত হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক। উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি রঞ্জিত কুমার সাহা, অলকা ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী শেখ, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনি হালদার, সহ-দফতর সম্পাদক মোঃ ইকবাল, সদস্য, অধ্যাপক আবু জামিল মোঃ সেলিম প্রমুখ। সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্বারা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসিক ৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৩০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, চাকরি জীবনে ১৯৯১ সালের স্কেল অনুযায়ী একটিমাত্র ইনক্রিমেন্ট পান। বেতন স্কেলের প্রারম্ভিক বেতনের ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা। বর্তমান সরকার ইতিবাচক সাড়া দিয়ে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একযোগে বেতন-স্কেল কার্যকর করায় সরকারকে সাধুবাদ জানান শিক্ষক নেতারা। একই সঙ্গে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদকে ধন্যবাদ জানান তারা। শিক্ষামন্ত্রী ইউনেস্কোর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানান হয়। শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেন, বর্তমানে একজন বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর প্রায় ২ থেকে ৩ বছরের অধিক সময়ে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা এবং ৩ থেকে ৪ বছর পরেও অবসর ভাতার টাকা পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত এ সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে একজন শিক্ষক বা কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর কখন তিনি তার প্রাপ্য অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাবেন তা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনার জন্য আবেদন করেও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন টাকা না পাওয়ার জন্য। তাই অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য প্রণীত আইন অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে অসহায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা প্রদানের দাবি জানান শিক্ষক নেতারা। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক নেতারা বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ইউনেস্কোর সুপারিশ হচ্ছে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হতে হবে জিডিপির চার থেকে ছয় শতাংশ। সেখানে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক দশমিক ৮ শতাংশ। শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন দাবির মধ্যে আছে- শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের লক্ষ্যে শিক্ষানীতি-২০১০ দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, সরকারী ও বেসরকারী বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের সমপরিমাণ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, বাড়ি ভাড়া, উৎসব ভাতা ও মেডিক্যাল ভাতা প্রদান। বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের পর এক বছরের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা প্রদান। প্রস্তাবিত সংশোধিত জনবল কাঠামো বাস্তবায়ন ও অনুমোদিত শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি এবং কর্মচারীদের সার্ভিস রুলস দ্রুত বাস্তবায়ন, বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য অবিলম্বে পৃথক একটি ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন ও স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা এবং নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা। এমপিওভুক্তির দাবিতে ২০ দিন ধরে অবস্থান ॥ ক্লাসরুম ছেড়ে ফুটপাথে ২০ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিন-রাত কাটাচ্ছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিনা বেতনে চাকরি করা থেকে মুক্তি পেতে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। শনিবারও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাথে ঘুমাচ্ছিলেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী।
×