ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন ও নিরাপত্তার স্বার্থে চার দেশের সম্পর্ক জোরদারের সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

উন্নয়ন ও নিরাপত্তার স্বার্থে চার দেশের সম্পর্ক জোরদারের সুপারিশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ আঞ্চলিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, চার দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হলে এ অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। শনিবার রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন। ‘বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল : সুযোগ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করে এশিয়াটিক সোসাইটি। সেমিনারের শেষ দিনে বিভিন্ন পর্বে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে ভারতের সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক বলেন, ত্রিপুরায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুত রয়েছে। এ বিদ্যুত তারা বাংলাদেশকেই দিতে চায়। ত্রিপুরা থেকে আরও বিদ্যুত নিয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। ত্রিপুরায় বাংলাদেশীদের ব্যবসারও সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকার বাজার দখল করছে। ভবিষ্যতে আরও বাজার সম্প্রসারণ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিবিসির সাবেক এই সাংবাদিক বলেন, দুই দেশের সীমান্তে বেশ কয়েকটি সীমান্ত হাট চালু করা হয়েছে। তবে ত্রিপুরা সীমান্তে মাত্র দুটি সীমান্ত হাট পড়েছে। ত্রিপুরা ৬৮টি সীমান্ত হাট চায়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ইতোমধ্যেই চিঠি দিয়েছে ত্রিপুরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে ত্রিপুরা পুরোপুরি অন্যরকম। ত্রিপুরা জনগণ বাংলাদেশকে যতটা আপন মনে করে, সেটা অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেছিলেন, বাংলাদেশ উঠলে আমরা উঠব, আর বাংলাদেশ ডুবলে আমরাও ডুববো। মুখ্যমন্ত্রীর এ উক্তিই বলে দেয়, বাংলাদেশ নিয়ে ত্রিপুরাবাসীর কেমন মনোভাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেইন বলেন, আঞ্চলিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। চার দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হলে এ অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। একই সঙ্গে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অতীতের চেয়ে এখন ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো হলেও আশানুরূপ মাত্রায় পৌঁছেনি। এখনও এ অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দিল্লীর জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ভারত এখন তিনটি বিষয়ে জোর দিচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অভ্যন্তীরণ ও বহিঃনিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে মোদি সরকার মনোযোগী। আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্যা সমাধানে আগ্রহী মোদি সরকার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্যা সমাধানে সেখানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়ানো ও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। সে সময় ঢাকা ও দিল্লীর মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় বাস সার্ভিস চালু, ত্রিপুরায় সীমান্ত হাট চালু, ত্রিপুরায় ব্যান্ড উইথ রফতানি ইত্যাদি চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তি অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক নাগরিকের মধ্যেই বাংলাদেশ ও ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। ভারতের জনগণের মধ্যে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবের যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ বাংলাদেশ ভারতের জঙ্গীদের প্রশ্রয় দেয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে অভিবাসী হন। আবার বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক মারা যান। ভারত থেকে অবাধে মাদক আসে। এসব কারণেই দুই দেশের নাগরিকের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে সব মানুষের মধ্যে এ ধারণা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেমিনারে বক্তব্য রাখেনÑ অধ্যাপক আবদুর রব খান, অধ্যাপক আইনুন নিশাত, অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসেন, ড. আকমল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির প্রমুখ। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে শুক্রবার এ সেমিনার উদ্বোধন করা হয়।
×