ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মনে হচ্ছিল কাউকে রেহাই দেবে না ওরা’

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

‘মনে হচ্ছিল কাউকে রেহাই দেবে না ওরা’

সুরের ঝর্ণায় ভেসে যাচ্ছিল বাতাক্লাঁ মিউজিক হল। শ্রোতারা চোখ বন্ধ করে বুঁদ হয়ে ছিলেন ‘ইগল্স অব ডেথ মেটাল’র কনসার্টের সুর আর গিটারের শব্দ ঝঙ্কারে। দেড়শ’ বছরের পুরনো মিউজিক হল বাতাক্লাঁয় দেড় হাজারেরও বেশি শ্রোতা তখন ভেসে যাচ্ছিলেন ‘ডেথ মেটালে’র সুরে। কে জানতেন, কিছুক্ষণ পরই শুরু হয়ে যাবে ‘সাডেন ডেথ’? সব সুর থেমে যাবে হঠাৎ করে? মিউজিক হলে কখন যে চার জঙ্গী ঢুকে পড়েছিল কনসার্টের কেউ তা বুঝতেই পারেননি। জঙ্গীরাও মিউজিক হলে ঢুকে প্রথমে তেমন সাড়াশব্দ করেনি। শুধু তাদের হাতে ধরা একে-৪৭ রাইফেলগুলো গর্জে উঠেছিল। আর সে রাইফেলগুলো থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে আসছিল গুলি স্টেজ লক্ষ্য করে, দর্শকাসন লক্ষ্য করে। এ সময় গুলি চালাতে চালাতে তারা ছবি তুলছিল মোবাইল ক্যামেরায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, প্রথমে দেখলাম, আলোর ঝলকানি। একে-৪৭ রাইফেলের। তার পর দেখলাম ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসছে । আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের মতো! যেন সব কিছু গ্রাস করে নেবে। ছিঁড়ে ফেলবে মিউজিক হলের জমাট অন্ধকারও। গুলি ছুড়তে ছুড়তেই হাতে ধরা মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলছিল জঙ্গীরা। রাইফেলের গুলি ফুরিয়ে গেলে আবার তা ম্যাগাজিনে ভরে নিচ্ছিল। চার জঙ্গী ‘পজিশন’ নিয়েছিল হলের ভেতরে চারদিকে। মনে হচ্ছিল, কাউকে রেহাই দেবে না ওরা। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসছে দেখে চেয়ার ছেড়ে হলের মাটিতে শুয়ে পড়ার হুড়োহুড়ি পড়ে গেল দর্শক, শ্রোতার মধ্যে। মাথা বাঁচাতে, বুক বাঁচাতে। দর্শকরা মাটিতে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। মানুষ যাতে মাটিতে শুয়ে পড়েও বাঁচতে না পারে, সে জন্য নিচু হয়ে চেয়ারের তলা দিয়ে উঁকি মেরে ‘শিকার’ খুঁজছিল জঙ্গিরা। কাউকে নড়াচড়া করতে দেখলেই গুলি ছুড়ে ছিল। মার্কিন রক গ্রুপের কনসার্ট শুনতে এসেছিলেন রেডিও সাংবাদিক জুলিয়েন পিয়ার্স। ঘটনার বারো ঘণ্টা পরও তার চোখ-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বললেন, ওদের আমি গুলি চালাতে চালাতে জিহাদী সেøাগান দিতে দেখেছি। শুনেছি, ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে ইংরেজীতে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে বলছে, ‘তোমরা আমাদের সিরিয়ায় যেভাবে হামলা চালাচ্ছ, তার জন্য তোমাদের তো এই মূল্য দিতেই হবে! নিজেদের মধ্যে ওদের এ কথাও বলতে শুনেছি, আজ সবকটাকেই শেষ করে দেব। কাউকে এখান থেকে বাড়ি ফিরতে দেব না। ওরা এই কথাও বলছিল, আমরাও তো আর বেঁচে ফিরব না এখান থেকে। তার চেয়ে ভাল, সকলকেই মেরে যাই! ওরা ভেবেছিল, যারা বেঁচে গিয়েছেন, তাদের পণবন্দী করে রাখবে। কিন্তু হলের বাইরে ততক্ষণে প্রচুর পুলিশ এসে গেছে। তারা হলের ভেতরে ঢুকে গুলিও চালাতে শুরু করেছে। জঙ্গীদের সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে তাদের গুলির লড়াই। এ সবের মধ্যে চার জঙ্গীকে দেখলাম, হলের ভেতরেই নিজেদের মাথায় গুলি করতে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে হলের ভেতর চার জঙ্গীই আত্মঘাতী হয়েছিল।Ñআনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনের।
×