স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুরুতে ধস। শেষেও ধস। মাঝখানে শুধু ম্যালকম ওয়ালারের ব্যাটে একটু প্রতিরোধ গড়তে পেরেছে জিম্বাবুইয়ে। এক ব্যাটসম্যানের একটু প্রতিরোধে কী আর ম্যাচ জেতা যায়? যায় না। তাই তো প্রথম টি২০তে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এখন রবিবারের ম্যাচটি জিতলেই দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজেও জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ। যেমনটি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হয়েছে।
জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের টানা জয় চলছেই। গত বছর শেষের দিকে যে জিম্বাবুইয়েকে টানা হারিয়েছে বাংলাদেশ। তা অব্যাহত আছে। গত বছর ৩ টেস্ট, ৫ ওয়ানডের প্রতিটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এবার তিন ওয়ানডে জেতার পর প্রথম টি২০তেও জয় তুলে নিয়েছে। টানা ১২ ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। টস জেতার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘উইকেট ব্যাটিং বান্ধব।’ জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা বলেছেন, ‘আগে ব্যাট করতেই চেয়েছিলাম আমরা। বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে চাই। আশা করছি তা করতে পারব।’ কিন্তু তা করতে পারেনি চিগুম্বুরাবাহিনী। মাঝপথে ওয়ালার একটু ভয় দেখান। কিন্তু তা শেষপর্যন্ত আর টিকে থাকেনি। তাইতো ওয়ালারের ৬৮ রানই কেবল জিম্বাবুইয়ের ইনিংসে স্বস্তি হয়ে থাকে। তার এ ইনিংসের পরও জিম্বাবুইয়ে ১৩১ রানের বেশি করতে পারেনি। ১৯.৩ ওভারেই গুটিয়ে যায়। অনায়াসেই ১৭.৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান করে ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডের দলই টি২০তেও রেখে দেয়া হয়। তবে টি২০’র একাদশে ঠিকই পরিবর্তন দেখা গেছে। এনামুল হক বিজয় আবার জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরেছেন। সেই গত বছর আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টি২০ ম্যাচ খেলেছিলেন বিজয়। ১৪ মাস পর আবার আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। আর জুবায়ের হোসেন লিখনের টি২০ অভিষেকও হয়ে যায়। দুইজনেরই সুযোগ নিজেদের প্রমাণ করার। কিন্তু ব্যাটিংয়ে বিজয় ১ রানের বেশি করতে পারেননি। আর জুবায়ের বল হাতে ২ উইকেট নিলেও ক্যারিয়ারের প্রথম টি২০ ওভারেই যে ১৭ রান দিয়েছেন, সেই পীড়ায় ভুগবেন।
পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির অভিষেকের স্বপ্ন এখনও সফল হয়নি। অপেক্ষা করতেই হচ্ছে রাব্বিকে। ওয়ানডেতে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ অর্ধশতকের পর মনে হয়েছিল ইমরুল কায়েস একাদশে থাকতে পারেন। ২০১১ সালের পর আবার হয়ত জাতীয় দলের হয়ে টি২০ খেলবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন প্রথম টি২০ ম্যাচে বাস্তবায়িত হয়নি। ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করায় এমনিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকে। আর জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই দুর্বলতা এতটাই ঘিরে ধরে যে টি২০তেও পাত্তা পায়নি জিম্বাবুইয়ে।
জিম্বাবুইয়ে অল্প রানই করে। তা অতিক্রম করতে গিয়ে বাংলাদেশও খানিক বিপদে পড়ে। শুরুতেই বিজয় ১ রান করে রান আউট হয়ে যান। এরপর অবশ্য তামিম-সাব্বির মিলে দলকে ৪৫ রানে নিয়ে যান। কিন্তু ১৮ রান করে সাব্বির আউট হতেই ৮০ রানে ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। মুশফিক (২), নাসিরের (১৬) পর তামিমও (৩১) আউট হয়ে যান। জিততে ৩০ বলে ১৪ রান দরকার থাকে। এমন সময়ে লিটন (১৭) আউট হয়ে যান। তবে আর কোন উইকেট পড়েনি। শেষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২২*) ও মাশরাফি বিন মর্তুজা (১৫*) মিলে ১৪ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জেতান।
ওয়ানডেতে ৬ মাস ধরে আর টি২০তে ১৯ মাস ধরে ইনিংসের প্রথম ওভারে বল করেননি মাশরাফি। ওয়ানডেতে সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে এ বছর এপ্রিলে ও টি২০তে সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষেই গত বছর মার্চে প্রথম ওভারে বল করেন মাশরাফি। অবশেষে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টি২০তে করলেন। সেই আগের মাশরাফিকেই মিলল। প্রথম ওভারেই উইকেটও পেয়ে গেলেন। তার এ দুর্দান্ত শুরুতে দেখা গেল ৩৮ রানেই ৪ উইকেট হারাল জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু এরপর ওয়েলার ঝড়ের দেখা মিলল। দশম (জুবায়েরের প্রথম ওভারে) ও এগারোতম ওভারে (নাসিরের ওভারে) মিলিয়ে ৩৭ রান (১৭ ও ২০ রান) নেন ওয়েলার। এগারোতম ওভারের শেষ বলে অবশ্য নাসিরের বলে তামিম ক্যাচটি ধরতে পারলে ওয়ালার আউট হয়ে যেতেন। শেষপর্যন্ত এ ব্যাটসম্যান ৬৮ রান করেন। এ দুই ওভারেই অনেক রান হয়ে যায়। বিশেষ করে জুবায়েরের ওভারে যে বাউন্ডারি হাঁকানোর মতো আত্মবিশ্বাস পেল জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা, তাই জিম্বাবুইয়েকে এ সময়টাতে এগিয়ে দেয়। নয় ওভারে ৩৯ রান করে জিম্বাবুইয়ে। সেখানে ১১তম ওভারে গিয়েই স্কোর দাঁড়ায় ৭৬। ৯ ওভারে যেখানে ৩৯ রান নেয় জিম্বাবুইয়ে, সেখানে পরের ২ ওভারেই ৩৭ রান নেয়। ওয়ালারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই তা সম্ভব হয়। মাত্র ২০ বলেই অর্ধশতক করেন ওয়ালার। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি২০তে দ্রুত অর্ধশতক করার রেকর্ড গড়েন ওয়ালার।
এর আগে এলটন চিগুম্বুরা সিলেটে গত বছর টি২০ বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২১ বলে অর্ধশতক করেছিলেন। ওয়ালার যেন জিম্বাবুইয়েকে ‘লাইফ লাইন’ এনে দেন। এরভিনের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে আবার ৬৭ রানের জুটিও গড়েন ওয়ালার। ১০৫ রানে গিয়ে এ জুটি ভেঙ্গে দেন মাহমুদুল্লাহ। এরভিন আউট হতেই যেন আবারও শুরুর মতো বেসামাল হয়ে পড়ে জিম্বাবুইয়ে। মাঝপথে যে ওয়েলার প্রতিরোধ গড়েন, সেটিই শেষপর্যন্ত পুঁজি হয়ে থাকে। শেষপর্যন্ত ১৩১ রান করে জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু এত কম রান করে কী আর ম্যাচ জেতা যায়?
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: