ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পথনাটকে প্রতিবাদ

মুক্তবুদ্ধি চর্চার ওপর এমন আঘাত আসেনি কোনদিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৫

মুক্তবুদ্ধি চর্চার ওপর এমন আঘাত আসেনি কোনদিন

মোরসালিন মিজান একটা অন্ধকার সময়। দানবের মতো মুখ হা করে আছে। বাংলাদেশের সব অর্জন যেন গিলে খেতে চায়। এখন ধর্মের নামে মানুষ খুন করা হচ্ছে। একদল উন্মাদ চাপাতির কোপে রক্তাক্ত করছে শান্তির ধর্ম ইসলামকে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে জঙ্গীরা। নিজের ধর্ম নিজের বিশ্বাসের বাইরে আর যা, এরা ধ্বংস করে দিতে চায়। নানা মত, পথ ও চিন্তার স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না। সত্য, সুন্দরের এই শত্রুরা তবু ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ অবস্থায় চলছে প্রতিবাদ। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রায় প্রতিদিনই নানা কর্মসূচী পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে নাটকের ভাষায় প্রতিবাদ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী পথনাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে পথনাটক পরিষদ। দুইদিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম দিন ছিল আলোচনাও। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে আলোচনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ। প্রধান অতিথির আলোচনায় রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চা এত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে কোনদিন যায়নি। আজ স্বাধীন চিন্তার মানুষগুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। অজুহাতÑ তাঁরা নাস্তিক। ধর্মের অবমাননা করে লিখছে অথচ ধরাপড়া খুনীরা জিজ্ঞাসাবাদে পরিষ্কার করে বলেছে, ব্লগ কী তারা বোঝে না। কোন লেখাও পড়েনি। নেপথ্যের অপশক্তি তাদের ব্যবহার করছে মাত্র। এরা প্রথমে ব্লগার এবং এখন প্রকাশকদের হত্যা করছে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, এখন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। একাত্তরের দুই ভয়ঙ্কর খুনীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পথে। এ সময় নানা নামে একই অপশক্তিকে তৎপর হতে দেখছি আমরা। যুদ্ধাপরাধীদের টাকায় এমনকি বিদেশ থেকে বিবৃতি আসছে। আমাদের অহঙ্কারের প্রতীক মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করার চেষ্টা করছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ অবস্থায় দেশী-বিদেশী চক্রান্ত রোধে সংস্কৃতিকর্মীদের সজাগ ও প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নাটক সময়ের কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের স্বপ্নের পথটি দেখিয়ে দেয়। সেদিক থেকে দেখলে এই প্রদর্শনী যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আলোচনায় অংশ নিয়ে নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী বলেন, আমরা বাঙালীরা নিজেদের কৃষ্টি সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচতে চাই। এ সংস্কৃতিতে ধর্মান্ধতার কোন স্থান নেই। ধর্মের নামে মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চলছে। নাটকের মাধ্যমে এই কথাগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা বলেন, বহু প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়ে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। এটি দেখে আমরা বুঝি, সরকার কত শক্তিশালী। কিন্তু মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের কারণে যখন একের পর এক মানুষ খুন হচ্ছে তখন কার্যকর ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। এটা দুঃখজনক। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আজ আনিসুজ্জামানের মতো বিশিষ্টজনকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আর তাই বাইরে এসেছি আমরা। নাটকের ভাষায় প্রতিবাদ করছি। সংস্কৃতিকর্মীরা জনগণের সমর্থন নিয়ে মাঠে থাকলে অপশক্তি পরাস্ত হতে বাধ্য বলে মত দেন তিনি। আয়োজনের প্রথম দিন ৪টি নাটকের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। নাট্যভূমি নিয়ে আসে ‘কালান্তর’। নাটকটি রচনা করেন জিন্না হক। নির্দেশনায় ছিলেন অপু আমান। আরণ্যক প্রতিবাদ জানায় ‘আগুনের জবানবন্দী’ নাটকে। মান্নান হীরার লেখা নাটকের নির্দেশনা দেন হাশিম মাসুদ। পদাতিক নাট্য সংসদ টিএসসি নিয়ে এসেছিল ‘তাহাদের কথা’। নির্দেশক ছিলেন মমিনুল হক দীপু। সবশেষে ছিল মৈত্রী থিয়েটারের নাটক ‘এই দিন এই দিন’। এসপিএম কামালের লেখা নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন নিয়াজ আহমেদ ও স্বপন আহমেদ। দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার প্রদর্শনী শুরু হবে বিকেল ৪টায়। রঙ্গপীঠ, গতি থিয়েটার ও ঢাকা রঙ্গপীঠের তিনটি নাটক থাকবে শেষ দিনে।
×