ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মঙ্গলের সামনে ঘোর ‘অমঙ্গল’

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১২ নভেম্বর ২০১৫

মঙ্গলের সামনে ঘোর ‘অমঙ্গল’

পূর্ণিমা আর আলো ছড়াবে না লাল গ্রহের পৃষ্ঠে। অমাবস্যার শীতল আঁধারে দু’চোখের পাতা যে একটু এক করে নেবে লাল গ্রহটা, সে উপায়ও থাকবে না একদিন। নাসার পর্যবেক্ষণ বলছে, মঙ্গলের আকাশ থেকে খসে পড়তে পারে তার চাঁদ ‘ফোবোস’। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ। তার মধ্যে ফোবোসই বড়। লাল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে তার দূরত্ব খুব বেশি নয়। মাত্র ছয় হাজার কিলোমিটার। পৃথিবীর চাঁদ পৃথিবী থেকে তিন লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে। তাই মহাকাশযানে চড়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। মঙ্গলে মানুষ থাকলে হয়ত বিমানেই পৌঁছে যেতে পারতেন চাঁদে। মঙ্গলের সেই অতিপ্রিয় চাঁদ ফোবোস নাকি আর আকাশে থাকবে না। এই অমঙ্গলের কারণ নিজের চাঁদের প্রতি মঙ্গলের অতিরিক্ত প্রেম। ভালবাসার অত্যাচারে খসে পড়তে চলেছে ফোবোস। নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ফোবোস মঙ্গলের খুব কাছে থাকায় তার ওপর মঙ্গলের অভিকর্ষজ টান খুব বেশি। এর ফলে নিজের কক্ষপথ ছেড়ে রোজ ফোবোস একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে মঙ্গলের দিকে। প্রতি ১০০ বছরে মঙ্গলের সঙ্গে ফোবোসের দূরত্ব দুই মিটার করে কমে যাচ্ছে। এর ফলে অভিকর্ষজ টান আরও বাড়ছে। এভাবে সরতে সরতে মঙ্গলের বুকে ফোবোসের আছড়ে পড়তে এখনও বহু বছর লাগবে। কিন্তু তার চেয়েও বিপজ্জনক উপসর্গ দেখা দিয়েছে ফোবোসের শরীরেই। কেমন সে উপসর্গ? মঙ্গলের চাঁদকে ঘিরে তৈরি হয়েছে লম্বা লম্বা আঁচড়ের মতো দাগ। ক্রমশ সেই আঁচড় বাড়ছে। দূর থেকে দেখে যেগুলোকে আঁচড় বলে মনে হচ্ছে, আসলে সেগুলো গভীর এবং সুদীর্ঘ খাদের মতো। নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রবল অভিকর্ষজ টানের কারণেই এই আঁচড়গুলোর সৃষ্টি। ফোবোসের গঠন আলগা হওয়ায় খুব দ্রুত এমন ঘটনা ঘটছে বলে দাবি মহাকাশবিজ্ঞানীদের। তাঁদের ধারণা, ফোবোসের পৃষ্ঠদেশের আস্তরণ খুব পুরু নয়। তা মাত্র ১০০ মিটার গভীর। সেই আস্তরণও খুব জমাট নয়। বরং বেশ খানিকটা ধুলো ধুলো। ১০০ মিটার গভীরে যা রয়েছে, তা নাকি আরও আলগা। অসংখ্য আলাদা আলাদা মণ্ড বা নুড়িপাথরের মতো বস্তু তালগোল পাকিয়ে রয়েছে ফোবোসের পেটের ভেতর। উপরের অপেক্ষাকৃত মজবুত আস্তরণের মধ্যে থাকায় তারা একসঙ্গে রয়েছে। না হলে ফোবোসের গর্ভে থাকা মণ্ডগুলোর পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ কমই। অর্থাৎ এক ঝুড়ি নুড়ি কাপড়ের পোঁটলায় বেঁধে রাখলে যেমন হবে, ফোবোসের গঠন অনেকটা সে রকম। বেশি টানাহেঁচড়া হলে পোঁটলা খুলে যেমন নুড়ি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনই দশা হচ্ছে মঙ্গলের চাঁদের। লাল গ্রহের টানে ক্রমশ তার কাছে যাওয়ার পাশাপাশি ফোবোসের নিজস্ব বাঁধনও আলগা হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। পৃষ্ঠদেশের দুর্বল আস্তরণ গর্ভের আলগা মালমসলাকে আর ধরে রাখতে পারছে না। ফলে ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছে ফোবোসের বাঁধন। গোটা উপগ্রহজুড়ে চিড় ধরছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে লম্বা লম্বা আঁচড়ের দাগ। নাসা জানাচ্ছে, ফোবোস ধ্বংসের পথে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। একটা সময় লাল গ্রহের আকাশ থেকে তার বড় চাঁদটাই উধাও হয়ে যাবে। একা একা ঘুরপাক খেতে থাকবে ছোটো চাঁদটা। বদলে যাবে মঙ্গলের পূর্ণিমা-অমাবস্যার হিসাব। বদলে যাবে লাল গ্রহের জ্যোৎস্না। -আনন্দবাজার অবলম্বনে
×