ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার সন্ত্রাসীদের যে যেখানে পান ধরিয়ে দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১২ নভেম্বর ২০১৫

সাইবার সন্ত্রাসীদের যে যেখানে পান ধরিয়ে দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ সাইবার সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের যেখানেই পাওয়া যায় সেখানেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ অপরাধীদের যে যেখানে পান ধরিয়ে দিন। জানমাল রক্ষার জন্য যখন যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তখন তাই নেব। তাদের ধরতে প্রয়োজনে কিছু দিনের জন্য ভাইবার-হোয়াটসএ্যাপ বন্ধ রাখা হবে। তিনি গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার জন্য আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে জঙ্গীদের পক্ষ নেয়া আইনজীবীদেরও বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের দমনে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোঃ সেলিমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ভাল কাজের কিছু খারাপ দিক আছে। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল মানুষ পাচ্ছে। এ সুযোগ ব্যবহার করে কিছু কিছু মানুষ ক্রাইম করছে। দুর্ভাগ্য হলো কিছু লোকের মন্দ কাজের জন্য অনেক সময় ভাল মানুষ কষ্ট পায়। তাই সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের ধরতে প্রয়োজনে কিছুদিনের জন্য হলেও ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ বন্ধ করা হবে। বন্ধ করে হলেও সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িতদের ধরা হবে। তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন নানা সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। কারা ঘটনা ঘটাচ্ছে? যারা ধরা পড়ছে, তাদের পরিচয়টা কিন্তু এক জায়গায়। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, সেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকেরাই তাদের দোসর। তারাই বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পরিকল্পনায় একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় স্পীকার আপনি আছেন, এখানে সকল সংসদ সদস্য রয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আমার আহ্বান, সাইবার সন্ত্রাসে যারা লিপ্ত, যারা বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের যেখানে পান ধরিয়ে দেবেন। তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিতে হবে। তিনি এ কাজে গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ রাত, দিন, মাসের পর মাস পরিশ্রম করে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করছে। তারপর দেখা যায় ১৫ দিন বা মাসখানেকের মধ্যে তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে চলে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন বলেই তারা জামিন নিতে পারছে। আমরা বিচারবিভাগের ওপর হাত দিতে পারি না। তিনি আদালতকে বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জামিন যখন নিচ্ছে, এরা যে অপরাধ করেছে, অপরাধের মাত্রাটাও যেন বিবেচনা করা হয়। অপরাধ বিবেচনা করে যদি তাদের সাজা দেয়া হয়, তবে অপরাধ মুক্ত করা যাবে। তারা জামিন নিয়ে যায় আদালত থেকে। আর দোষ হয় সরকারের। বিচার না হলে তো দোষারোপ সরকারকেই করা হয়। আর জঙ্গী সন্ত্রাসীদের পক্ষে যারা আইনজীবী থাকেন তাদের প্রতিও আহ্বান জানাই তারা যেন দেশের স্বার্থে, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অপরাধ বিবেচনায় নেন। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গীবাদ দমনের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভূখ-কে যাতে কেউ সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদ সম্পর্কিত কোন কর্মকা-ে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গীবাদ দমনে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গীবাদ দমনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। সহিংস জঙ্গীবাদ দমনে জাতীয় পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে সরকার। সার্ক বিমসটেকসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গীবাদ দমন বিষয়ক বিভিন্ন চুক্তির রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাস দমন কৌশলের দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্য দিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে কোন শুভ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই। সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যা ছিল তাই থাকবে। অর্থাৎ সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ৩০ বছর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৩২ বছর। ইতোমধ্যে সরকার মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীত করেছে। সরকার দলীয় অপর সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমাতে পিপিপির মাধ্যমে নাগরিক সুবিধাসহ ৩টি স্যাটেলাইট শহর তৈরির জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্প তিনটি হলো মুন্সীগঞ্জ জেলার ইছামতি-সিরাজদিখান স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে বংশী ধামরাই স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন ও মানিকগঞ্জ জেলায় ধলেশ্বরী-সিংগাইর স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন প্রকল্প। তাছাড়া ঢাকা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী কামরাঙ্গীচরকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জন্য রাজউক কর্তৃক একটি মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি স্যাটেলাইট শহর বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে সাইট সিলেকশন করা হয়েছে এবং ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
×