ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মত প্রকাশের দায় সমাজ ও মানুষকেই কাঁধে নিতে হবে -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১২ নভেম্বর ২০১৫

মত প্রকাশের দায় সমাজ ও মানুষকেই কাঁধে নিতে হবে  -স্বদেশ রায়

পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা কখনও মত প্রকাশের সর্বোচ্চ স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে বলে ইতিহাস বলে না। যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হয়েছিল, সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে হয়েছিল। গ্যালিলিওকে দ- পেতে হয়েছিল। তাঁরা রাষ্ট্রকে মেনে এ বিচার মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু তাঁদের মতে তাঁরা অবিচল ছিলেন। সে মত নিয়ে যার যতই প্রশ্ন থাকুক না পৃথিবী থেকে সে মত কিন্তু মুছে দিতে পারেনি কেউ। আমেরিকান সংবিধান ফ্রিডম অফ স্পিচকে উর্ধে তুলে ধরলেও আজও আমেরিকার অনেক স্টেটে ডারউইন পড়ানো হয় না। নারী অধিকার বিলে স্বাক্ষর করেনি অনেক স্টেট। অর্থাৎ আমেরিকা নামক ক্ষমতাধর, মানবতার ধ্বজাধারী রাষ্ট্রটিও পারে না সব মত প্রকাশের নিশ্চয়তা দিতে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের দেশে অনেকে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। তারা যদি একবার মনে করে দেখেন, সেখানে শিল্পী হুসেনকে ছবি এঁকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়েছিল আর বর্তমানে যা ঘটছে তা আর স্মরণ করানোর কোন প্রয়োজন পড়ে না। গণতন্ত্রের পিতৃভূমি ব্রিটেনেও সব মত প্রকাশ করা যায় না। অনেক মত প্রকাশ আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ। আমেরিকার সংবিধানের মতো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি মার্কসের কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোতেও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উচ্চে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে কোথাও কোন মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। আবার যদি ভারতীয় সভ্যতাকে দেখা হয় তাহলে দেখা যায়, বৈদিক যুগে বা তারও আগে যখন সমাজ সব নিয়ন্ত্রণ করত তখন মত প্রকাশের অনেক স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু রাজা আসার পরে, রাজ-পুরোহিত আসার পরে, বিশেষ করে মনুসংহিতা থেকে মত প্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ আসতে থাকে। এক পর্যায়ে পুরোহিত মত প্রকাশের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ান। এরও কয়েক হাজার বছর পরে ইউরোপকে চার্চের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। পুরোহিত বা চার্চের এই কঠোর নিয়ন্ত্রণ থেকে সমাজকে বের হতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। সে সব সংগ্রামেও শতভাগ সফল হতে পারেনি মানুষ। কারণ, সমস্যাগুলো মানুষের নিজের ভেতরে ততদিনে প্রোথিত হয়ে গেছে। এইসব সংগ্রামে কখনও কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা বা রাজ্যব্যবস্থাকে সঙ্গে পাওয়া যায়নি। রাজ্য বা রাষ্ট্রব্যবস্থার ভেতর একটি নিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্র থাকে যাকে সুগার প্রলেপ দিয়ে বলা হয়, পরিচালনা যন্ত্র বা কেউ বলেন শাসনব্যবস্থা। অন্যদিকে ওই সব সমাজ কিন্তু এখনও পুরোহিত ও চার্চের বিধিনিষেধের ভেতর অনেকাংশে বিধিবদ্ধ যার কারণ শুধু রাষ্ট্রই নয়- মানুষ নিজেও। পৃথিবীতে আজও পর্যন্ত কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা বা শাসনব্যবস্থাকে কখনই সর্বোচ্চ মত প্রকাশের পক্ষে না পাবার কারণ রাষ্ট্রব্যবস্থার ভেতর বসানো একটি যন্ত্র। ওই যন্ত্রটির স্বয়ংক্রিয় শক্তি বড় অদ্ভুত। এর প্রায় সব চরিত্র ওই হীরক রাজার যন্ত্রর-মন্ত্রর ঘরের যন্ত্রের মতো। যত বড় উদার নেতা হোন না কেন একবার ওই রাষ্ট্রব্যবস্থার যন্ত্রর-মন্ত্রর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি কিন্তু আর সর্বোচ্চ মত প্রকাশের পক্ষে থাকেন না। অর্থাৎ ইতিহাসে আজও অবধি কোন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান শতভাগ মত প্রকাশের পক্ষে থাকেননি। অনেকে অনেকটা বেশি পক্ষে ছিলেন, তাঁরা জেফারসনের মতো নন্দিত হন। কিন্তু তাঁরাও শতভাগ নন। আমাদের উপমহাদেশে রাষ্ট্র পরিচালক হিসেবে মত প্রকাশকে সর্বোচ্চ সম্মান করেছেন জওয়াহেরলাল নেহরু, তিনিও শতভাগ নন। বরং কখনও কখনও তিনি দরিদ্র দেশ বলে সেখানে মত প্রকাশের ওপর প্রকাশ্যে বিধিনিষেধের কথা বলেছেন। তাঁর লৌহমানবী মেয়ে ইন্দিরা এ বিষয়ে আরও কঠিন ছিলেন। এভাবেই কিন্তু সব গণতন্ত্রের ইতিহাস খুঁজলে এমনই উদাহরণ মিলবে। পৃথিবীজুড়ে রাষ্ট্র কাঠামো যেভাবে গড়া তাতে খুব সহজে যে হীরক রাজার যন্ত্রর-মন্ত্রর ঘর রাষ্ট্র কাঠামো থেকে দূর হবে এমন আশা করার কোন পথ নেই। এই খুব শীঘ্রটা একটি মানুষের বয়সকাল বা শতাব্দী কালের হিসেবে ধরলে অনেক দীর্ঘ সময় মনে হতে পারে। কিন্তু সভ্যতার ইতিহাসে এ সময় দীর্ঘ নয়। তাই হতাশ হবার কোন কারণ নেই। কিন্তু কবে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় রাষ্ট্র পাশে আসবে ততদিন কি সমাজ বসে থাকবে? যে সমাজ সব ধরনের মত প্রকাশ না করে বসে থাকে, যে সমাজে সব ধরনের মত প্রকাশের পথ বন্ধ- ওই সমাজ মৃত সমাজ। মৃত সমাজ ততক্ষণ টিকে থাকতে পারে ঠিক যতক্ষণ একটি মৃতদেহ টিকে থাকে। তারপর থেকে তার পচন এবং নিশ্চিহ্ন হওয়া শুরু হয়। আশ্চর্যের বিষয় আজও অবধি কোন সমাজ মারা যায়নি। বরং সমাজ-প্রগতি এগিয়েছে। সভ্যতা এগিয়েছে। কারা এই সমাজ-প্রগতি এগিয়ে নেয়? বাস্তবে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে, সমাজের প্রয়োজনে সমাজ-প্রগতিকে এগিয়ে নেয়। যেহেতু ওই সমাজ-প্রগতির ভেতর মানুষের নিজের প্রগতি নির্ভর করে। নির্ভর করে তার অস্তিত্ব। প্রগতি অর্থ সচলতা, সচলতাই জীবন। সচলতা ছাড়া মানুষ নিজেই মৃত। তাই নিজের বেঁচে থাকার জন্য, বৃদ্ধি পাবার জন্য কখনও সচেতনভাবে, কখনও অবচেতনে মানুষ তার সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়। আর এখানে একটি বড় ভূমিকা কাজ করে মতামত। নানান মতামত মিলিত হয়ে বা কখনও দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে গতি সৃষ্টি করে যা সমাজকে এগিয়ে নেয়। যখনই কোন কিছু এগিয়ে যেতে থাকে তখন একটি নতুন আলোর রশ্মির মতো একটি অগ্রগতির রশ্মি ওই সমাজ থেকে বের হয়। এর কিরণ রেখা বা তেজ অনেকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু ওই রশ্মির তেজ থেকে অর্থাৎ জ্ঞান থেকে যা সৃষ্টি হয় তাকে অজ্ঞতা দিয়ে, স্থবিরতা দিয়ে স্তব্ধ করা যায় না। সব সমাজেই পশ্চাৎ গতির মানুষ থাকে- এই মানুষের ভেতর লুকিয়ে থাকে পাশবিকতা। তাই মানবিকতা ও পাশবিকতার দ্বন্দ্ব সমাজে প্রতি মুহূর্তে। বহুমত প্রকাশ ও বহুমতের মিলনের ভেতর দিয়ে যে জ্ঞান সৃষ্টি হয় এই জ্ঞানই মানবিকতা। একে অন্ধত্ব বা অজ্ঞতা দিয়ে রুখে দেয়া যায় না। ইতিহাস বলে, জ্ঞানের ওপর সব সময়ই পাশবিকতার আঘাত আসে। সভ্যতার শুরু থেকে এখনও তা চলছে। মানুষ যে রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে তা কিন্তু অনেকটা সম্মিলিতভাবে এই পাশবিকতাকে রুখে দেয়ার জন্য। আধুনিক রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের অন্যতম কাজ এটা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো সমাজের ভেতর সৃষ্ট আকাক্সক্ষা যে আধুনিক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে ওই আধুনিক রাষ্ট্র শতভাগ মানুষকে, সমাজকে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারছে না। মানুষের প্রতিনিধি যারা রাষ্ট্র চালান তাঁরা সাধারণত এই প্রগতির পথে থাকেন। কিন্তু সেখানেও ভাগ আছে এই ভাগ প্রথমে দেখা যায় রাজনীতির ভেতর। আধুনিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার জন্য ওই সমাজের মানুষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে- এক ভাগ থাকে রক্ষণশীল, যে কোন রক্ষণশীল মানেই কোন না কোন অজ্ঞতার চাদরে তার মন ঢেকে থাকে। আরেক ভাগ থাকে উদার। উদারতার জন্ম হয় জ্ঞানের আলো থেকে। নতুনকে ধারণ করার ক্ষমতা থেকে। অজ্ঞতা জন্মগত, জ্ঞানকে অর্জন করতে হয়। যে কারণে উদারতার পথ কঠিন। তাই পৃথিবীতে আধুনিক রাষ্ট্রেও বেশি সময় রক্ষণশীলরা ক্ষমতায় থাকে। উদারবাদীরা কম সময় পায়। তবে তারপরেও উদারবাদীরা যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে রাষ্ট্র তখন তুলনামূলকভাবে সমাজে মত প্রকাশের নিশ্চয়তার পক্ষে থাকে। কিন্তু তারপরেও সত্য, শতভাগ তারা থেকেছে এমন তথ্য ইতিহাসে নেই। বাংলাদেশও ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতার বাইরে নয়। বাংলাদেশে রক্ষণশীলরা এখন পুরোপুরি সন্ত্রাসী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে রক্ষণশীলরা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল- এমনকি সামরিক শাসনের নামে। সেটাও এক ধরনের সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল। তাই যে কোন ধরনের সন্ত্রাসীর কাছ থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাজকে উদার প্রগতির দিকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আশা করা ভুল। অন্যদিকে বাংলাদেশে এখন উদারবাদীরা ক্ষমতায়। তারপরেও কিন্তু রাষ্ট্রকে শতভাগ মত প্রকাশের পক্ষে পাচ্ছে না সমাজ। রাষ্ট্র ও সমাজকে এই শতভাগ মত প্রকাশের পক্ষে না পাবার কারণ প্রধানত তিনটি। এক. বর্তমান সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতি করার পাশাপাশি আরবান গেরিলা ওয়ার মোকাবিলা করতে হচ্ছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে। দুই. এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় রক্ষণশীল বা সন্ত্রাসীরা ছিল। তাই রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গে তাদের চেতনার লোক বসে আছে। অন্যদিকে, যে কোন উদারবাদী সরকার যখনই রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রবেশ করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা রাষ্ট্রের যন্ত্রর-মন্ত্রর ঘরেও প্রবেশ করে। তখন তাঁদের চরিত্রে অবচেতনভাবে কিছু পরিবর্তন ঘটে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার আগে তাদের বিশ্বাস থাকে আজারবাইজানের কবি নাসিমীর কবিতার ওই লাইনের মতো, ‘নিজের কম্পাসে গোটা পৃথিবীকে চিহ্নিত করা যায়। তা বলে পৃথিবীটা আমার কম্পাস নয়।’ কিন্তু যখনই তারা ক্ষমতায় যায়, সরকারে বসে তখনই পৃথিবীকে তারা পৃথিবীর বদলে নিজের কম্পাস মনে করে। অনেক কিছুকে তখন নিজের চিন্তার ঘূর্ণিতে ঘোরাতে চায়। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের চরিত্রে এখানেই সৃষ্টি হয় পরিবর্তন। এই পরিবর্তন হওয়ার যন্ত্রর-মন্ত্রর ঘর নির্বাহী বিভাগে আছে। ওই যন্ত্রর-মন্ত্রর ঘরে বসে দেখার ফলে তখন সমাজের অনেক কিছুকে পৃথিবীর বদলে কম্পাস মনে হয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রের আর যে বড় স্তম্ভ, বিচার বিভাগ। এখানেও কিন্তু ওই একই সমস্যা। তাদের অনেকের কাছেও পৃথিবীকে নিজের কম্পাস মনে হয়। বিচার বিভাগ নির্ভর করে বিচারপতিদের প্রজ্ঞার ওপর। কিন্তু ওই যে ‘অনেকে’ আছেন যারা নিজেকে ঈশ্বরের পরেই তাঁদের অবস্থান মনে করেন। তাঁরা ভুলে যান বা উপলব্ধি করতে পারেন না, সমাজ ও মানুষের আকাক্সক্ষাই তাঁদের এ অবস্থানে এনেছে। তাঁদের এই অজ্ঞতাও সমাজ-প্রগতি এবং মত প্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এটাও বাংলাদেশের বর্তমান মুহূর্তে মত প্রকাশে রাষ্ট্রকে পাশে না পাবার আরেকটি কারণ। আর সর্বশেষ আশ্রয় পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট হওয়া উচিত পার্লামেন্টারিয়ানদের সর্বোচ্চ ব্যক্তি মত প্রকাশের স্থান। কিন্তু রাজনীতির উদারতার অভাবে সেখানে দলীয় আনুগত্য বড় হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় পার্লামেন্টও বা কোন পার্লামেন্টারিয়ান সর্বোচ্চ স্বাধীনভাবে সমাজের মত প্রকাশের পক্ষে আসতে পারেন না। তারপরেও উদারবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকায়, সন্ত্রাসী সরকারের থেকে লাভ এখানে, মত প্রকাশের ফলে জীবনের ওপর যে হুমকি আসে সেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে না পারুক তবুও কিছুটা দেবার পক্ষে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ পারছে না কারণ, দীর্ঘদিন সন্ত্রাসীরা, মত প্রকাশের বিপক্ষ শক্তি ক্ষমতায় থাকায় তাদের লোকজন বসে আছে নির্বাহী বিভাগে। আর তাদের নিয়েই তো নির্বাহী বিভাগকে চলতে হচ্ছে। পাশাপাশি মত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধার ঘাটতি ও যন্ত্রর-মন্ত্রর ঘরের প্রভাব তো নির্বাহী বিভাগের আছেই। আছে তাঁদের মনোজগতেও। তবে সরকার যাই করুক, যতটুকু করুক সমাজকে কিন্তু মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। কোন সচল সমাজে কোন কালেও তা ছিল না। সমাজকে, মানুষকে সব ধরনের বাধা এড়িয়ে মত প্রকাশ করতে হবে। কারণ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্র ক্ষমতা এগুলো সমাজের সৃষ্টি, মানুষের সৃষ্টি। মানুষ তার প্রগতির স্বার্থে এগুলোকে সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে মানুষ এগুলোর ভিন্ন কী রূপ দেবে তা সভ্যতার ভবিষ্যত প্রান্তই জানে। সভ্যতার ওই ভবিষ্যতের পথে যাবার জন্যই মত প্রকাশের এ দায় সমাজ ও মানুষকে কাঁধে তুলে নিতে হবে। মানুষ দেখতে যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, মানুষ সীমাহীন সমুদ্র। তাতে সীমারেখা টানার ক্ষমতা কারো নেই। মানুষই আণবিক বোমা, মানুষই সূর্য, মানুষই পাথরের ওপর পড়া সূর্যের তীব্র রশ্মি। মানুষের মুখ দিয়ে উচ্চারিত বাক্যই অগ্নিশিখা। তাই এই শক্তিকে বেঁধে রাখা, রুখে দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই। তারপরেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, সমাজের গঠনের কারণে কোন কোন সমাজ জাগ্রত ও মতামত সৃষ্টিতে আগ্রহী থাকে বেশি। বাঙালীর মানসিক গঠনটি মতামত সৃষ্টির পক্ষে। যে কারণে পৃথিবীর সমস্ত বড় ঘটনার সঙ্গে কোন না কোন বাঙালী জড়িয়ে থাকে। এমনকি আমেরিকার কালো মানুষের ভোটাধিকারের সেই উত্তাল আন্দোলনেও ছিলেন এক বাঙালী মেয়ে। তাই বাঙালী সমাজের মত প্রকাশকে কেউ থামাতে পারবে না। কোন শক্তির এ সামর্থ্য নেই। তবে বাঙালীকে, বাঙালী সমাজকে এ জন্য সরকারের দিকে চেয়ে বসে থাকলে চলবে না। সমাজ ও মানুষকে এ দায় কাঁধে নিতে হবে। [email protected]
×