ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১১ নভেম্বর ২০১৫

রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৫ম সাক্ষী মোঃ খসরু মিয়া ও ৬ষ্ঠ সাক্ষী মোঃ শফিক আলী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে ৫ম সাক্ষী বলেছেন, রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীকে গুলি করে হত্যা করেছে। মুক্তিযোদ্ধা আকল আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আজও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে রাজাকারদের দ্বারা আল্লাদ মিয়ার বোন ও মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী তাদের হাতে ধর্ষিত হয়। জবানবন্দী শেষে ৫ম সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। ৬ষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দী হলেও জেরার জন্য আজ বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। জবানবন্দী ও জেরার সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুনতাম মাহমুদ সিমন, রিজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ও এ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর। প্রসিকিউশনের ৫ম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ সখরু মিয়া, আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- আখাউড়া রাজপাড়া, থানা-বানিয়াং, জেলা-হবিগঞ্জ। আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আমি ছোটবেলা থেকেই আমার মামা জেনারেল এমএ রব সাহেবের একই খাড়াউড়া গ্রামের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম। একাত্তরের ২৬ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে এলাকায় হৈচৈয়ের শব্দ শুনতে পাই। পরে জানতে পারি পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের এলাকায় চলে এসেছে। তখন আমি আমার অপর মামা আব্দুর রহিম (জেনারেল এমএ রবের ভাই), তার স্ত্রী অরুনা বেগম, তার মা রাশিদা বেগম, তার বোন ফিরোজা বেগম ও তাদের বাড়ির কাজের একটি মেয়ে চাওর বিবিসহ আমাদের মামার বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে চলে যাই। তখন আমার মামা আব্দুর রহিম আমাকে বলেন যে, তাদের বাড়িতে গিয়ে ঘরে তালা দিয়ে আসতে। আমি মামার বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাই যে, তিনটি নৌকা আমার মামার বাড়ির দক্ষিণ দিকে পুকুর পাড়ে ভিড়ছে। ওই তিনটি নৌকাতে আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, আসামি মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আসামি আব্দুর রাজ্জাকসহ আনুমানিক ১৫/১৬ জন পাকিস্তান আর্মি ও কয়েকজন রাজাকার ছিল। তখন একটি গুলির আওয়াজ শুনে আমি মামার বাড়ির উত্তর দিকে একটি ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ি। সাক্ষী বলেন, তখন আসামিরা পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা আমার মামা জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে আক্রমণ করে এবং লুটপাট করে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর মামার বাড়ির পার্শ্ববর্তী হিন্দু পাড়াতেও আনুমানিক ১৫/১৬টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই আগুনে পোড়া ঘরের মধ্যে রমাকান্ত দেব, বরীন্দ্র কান্ত দেব, মনিন্দ্র কান্ত দেব, উমাই দেব এর ঘরও ছিল। আসামিসহ পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা সেখান থেকে এরপর একই গ্রামের ভিন্ন পাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমলা চেয়াম্যানের বাড়িতে যায়। সেখানে তারা কমলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। বিভিন্ন লোকের ওপর নির্যাতন করে। উল্লেখিত ঘটনার ১৫ দিন পরে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী বাড়িতে আসে। ওই দিন বিকেল আনুমানিক চারটা সাড়ে চারটার দিকে একটি গুলির শব্দ পাই। পরে জানতে পারি আসামি মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আসামি আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীকে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলীর বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে। এরপর রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা আকল আলীকে ধরে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাক্ষী আরও বলেন, এর পর আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকসহ পাকিস্তানী আর্মিরা একই গ্রামের আল্লাদ মিয়ার বাড়িতে যায়। সেখানে আল্লাদ মিয়ার বোন ও মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী ধর্ষিত হয়। এর পর বিকেল তিনটার দিকে তারা আমাদের গ্রাম ছেড়ে বানিয়াংয়ের দিকে চলে যায়।
×