ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

রুশ শিল্পীদের ট্রাম্পেট ও পিয়ানোর সুরে মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১১ নভেম্বর ২০১৫

রুশ শিল্পীদের ট্রাম্পেট ও পিয়ানোর সুরে মুগ্ধ শ্রোতা

মনোয়ার হোসেন ॥ শীতের আগমনী বার্তা দেয়া হেমন্তের সন্ধ্যাটি গড়াচ্ছে রাতের পানে। ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। মিলনায়তনে ভেসে বেড়াল পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্র ট্রাম্পেটের মায়াবী সুর। আচ্ছন্ন করা সেই সুরে শ্রোতার অন্তরে বয়ে গেল স্নিগ্ধতার আমেজ। আর নিপুণ দক্ষতায় ট্রাম্পেট বাজালেন ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল চর্চার পীঠস্থান সেইন্ট-পিটারর্সবার্গ মিউজিক হাউজের নামী মিউজিশিয়ান নিকোলে স্ট্রানাৎস্কভস্কি। এই শিল্পীর সঙ্গে পিয়ানোর মোহনীয় সুর তুলেন একই সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের খ্যাতিমান পিয়ানো বাদক ভøাদিসøøাভ ফেদোরভ। এই দুই তরুণ রাশিয়ান মিউজিশিয়ানের যন্ত্রীসঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় মঙ্গলবার মোহাবিষ্ট হলো রাজধানীর সঙ্গীতপ্রেমীরা। রাজধানীর খামারবাড়ির বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। এখানে অনুষ্ঠিত হলো চেম্বার কনসার্ট শীর্ষক ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিক্যাল যন্ত্রসঙ্গীতের পরিবেশনা। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাশিয়ান দূতাবাস ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সঙ্গীতানুষ্ঠানে ট্রাম্পেট ও পিয়ানোর শিল্পীদ্বয় একক ও যৌথভাবে শোপাঁ, লিস্ত, চাইকভস্কি, বিটোফেন, শুম্যানসহ অন্যান্য বিখ্যাত কম্পোজারের সিম্ফনি ও পিস বাজিয়ে শোনান। বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতানুরাগীদের আলোড়িত করা সেই সব মোহনীয় সুরে মন রাঙানোর সুযোগ পেয়েছিলেন নির্দিষ্টসংখ্যক শ্রোতা। আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি নিবন্ধনের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক শ্রোতা উপভোগ করেছেন পশ্চিমা ধারার শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের যন্ত্রসঙ্গীত। উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার এ নিকোলায়েভ এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। এ ছাড়া বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিবন্ধিত অতিথিরা উপভোগ করবেন এই ভিন্নধর্মী আয়োজন। পরিপাটি ও গোছানো আয়োজন ছিল এটি। যথাসময়েই শুরু হয়ে গেল সুরের খেলা। প্রথমে মঞ্চে উঠেন নিকোলে স্ট্রানাৎস্কভস্কি। তাঁর হাতে ছিল ট্রাম্পেট। বাদ্যযন্ত্রটি দেখতে খানিক সানাই আকৃতির। তবে তা সানাই নয়। এর সুর সত্যিই মোহনীয়, আকর্ষণীয়। প্রথমে তিনি বাজালেন পশ্চিমা ধারার রাগ হামেলের একটি সিম্ফনি। তাতে ট্র্রাম্পেটের সুরের সঙ্গে ধীরে ধীরে বেজে উঠল পিয়ানোর কম্পোজিশন। প্রায় ১০ মিনিটের এ পরিবেশনায় অভিভূত হয়ে পড়েন উপস্থিত দর্শক। তারা তুমুল করতালিতে অভিনন্দন জানান এ শিল্পীকে। ট্রাম্পেটের সুর থামতেই ঝড়ে পড়ল পিয়ানোর সুরেলা শব্দধ্বনি। মঞ্চে এলেন খ্যাতিমান পিয়ানো বাদক ভøাদিসøøাভ ফেদোরভ। মোটামুটি পিয়ানোতে ঝড় বইয়ে দিলেন তিনি। বাজালেন ‘মাজুরকা’ শিরোনামের কম্পোজিশন। এরপর দুই শিল্পী পরিবেশন করেন হাঙ্গেরির বিখ্যাত কম্পোজার জোনান নেপুমুখ হামেলের নামকরা আরেকটি ক্ল্যাসিক্ল্যাল পিস ‘এ্যানডেন্টি এ্যান্ড রনডো ফ্রম কনচারটো ফর ট্রাম্পেট এ্যান্ড অর্কেস্ট্রা ইন ই-ফ্ল্যাট মেজর’। চমৎকার এই পরিবেশনা শেষে বিখ্যাত পোলিশ কম্পোজার ফ্রেডরিক ফ্রানকোইস চোপিন এর বিখ্যাত পরিবেশনা ‘মাজুরকা ইন এ্যা মাইনর’। এই পরিবেশনাটি পুরোপুরি পিয়ানো নির্ভর। এরপর তারা রাশিয়ার দুই বিখ্যাত কম্পোজার এন রিমস্কি কোরসাকভ ও এম টাকাবোরের কম্পোজিশন ‘ইট নট দ্য উইন্ড হুইচ ব্লোস ফ্রম এ্যা হাইট’ পরিবেশন করেন। এর পরের পরিবেশনাটিও ছিল ট্রাম্পেট ও পিয়ানোর সংমিশ্রণে। এর পর আবার পোলিশ কম্পোজার ফ্রেডরিক ফ্রানকোইস চোপিন এর আরেকটি চমৎকার কম্পোজিশন ‘এটুডে ইন এ্যা মাইনর’ পরিবেশন করেন। এটি পিয়ানো নির্ভর একটি কম্পোজিশন। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের সুর সুধায় দর্শক-শ্রোতারা যখন মোহিত তখন শিল্পীদ্বয় আরও চমৎকার সব কম্পোজিশন নিয়ে হাজির হন। এরপর তারা পরিবেশন করেন রাশিয়ান কম্পোজার আলেকজেন্ডার গ্লাজোনবের বিখ্যাত একটি পরিবেশনা ‘এ্যালবাম লিফ’। ট্রাম্পেট ও পিয়ানো দুটিই পশ্চিমা দুনিয়ার বাদ্যযন্ত্র হলেও আমাদের এ অঞ্চলেও খ্যাতি-পরিচিতি কম নয়। ইউরোপ-আমেরিকায় ধ্রুপদী সঙ্গীতে এসব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার অনিবার্য। বিশেষ করে জ্যাজ সঙ্গীত, একক বাদন, দলগত বাদন, চেম্বার মিউজিকে অনুষঙ্গ হিসেবে এসব বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সঙ্গীত আয়োজন ও গান তুলতেও ট্রাম্পেট ও পিয়ানোর ব্যবহার রয়েছে। ট্রাম্পেটের করুণ সুর ও পিয়ানোর মোহনীয় মূর্ছনা গতকাল আমোদিত করে দর্শক-শ্রোতাদের। সঙ্গীতানুষ্ঠানে ট্রাম্পেট ও পিয়ানোর শিল্পীদ্বয় একক ও যৌথভাবে শোপাঁ, লিস্ত, চাইকভস্কি, বিটোফেন, শুম্যানসহ অন্যান্য বিখ্যাত কম্পোজারের সিম্ফনি ও পিস বাজিয়ে শোনান। বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতানুরাগীদের আলোড়িত করা সেই সব মোহনীয় সুরে মন রাঙানোর সুযোগ পেয়েছিলেন নির্দিষ্টসংখ্যক শ্রোতা। আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার শ্রোতা উপভোগ করেছেন পশ্চিমা ধারার শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের যন্ত্রসঙ্গীত। ভøাদিসøøাভ যখন বাজাচ্ছিলেন তখন তাঁর আঙ্গুলগুলো যেন জাদুকরী ছন্দে নিয়ে আছড়ে পড়ছিল পিয়ানোর ওপর। আর সেই সুরধারায় শ্রোতারা একই সঙ্গে নিমগ্ন ও নিমজ্জিত হচ্ছিলেন। হাজার শ্রোতার আসনযুক্ত মিলনায়তনের পুরোটাই ছিল সুর রসিকে পরিপূর্ণ। বাদনের পুরো সময়টিতে নেমে অদ্ভুত নীরবতা। তাই বলে শব্দ হয়নি এমন নয়। শব্দ যেটুকু অনুরণন ছড়িয়েছে তার সমগ্রটাই দখল করে নিয়েছিল পিয়ানো ও ট্রাম্পেট। শুধু একেকটি পরিবেশনা শেষে মুগ্ধ শ্রোতার করতালিতে মুখর হয়েছে মুখর হয়েছে মিলনায়তন। সুরের অবগাহনে ভেসে যাওয়ার সুযোগটি যাঁরা পেয়েছিলেন তাঁরা যেন পরিবেশনার সময়টুকুতে বিচরণ করেছেন ভিন্ন এক জগতে। যেখানে ছিল না কোন কণ্ঠের খেলা, ছিল শুধুই বাদ্যযন্ত্রের মোহনীয়তা। প্রসঙ্গত, দেশে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রাখা এবং এর প্রচার-প্রসার ও দায়িত্বশীল উচ্চ রুচিসম্পন্ন শ্রোতা তৈরির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সেই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হলো ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল ট্রাম্পেট ও পিয়ানো বাদন সন্ধ্যা। রবিবার চারুকলার বকুলতলায় নবান্ন উৎসব ॥ আসছে পহেলা অগ্রহায়ণ ১৫ নবেম্বর রবিবার প্রতিবছরের মতো এ বছরও উদ্যাপিত হবে জাতীয় নবান্ন উৎসব ১৪২২। জাতীয় নবান্ন উৎসব উদ্যাপন পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়। দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রবীণ সংস্কৃতিজন এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। পহেলা অগ্রহায়ণ সকাল ৭টা থেকে দিনব্যাপী আয়োজনে থাকবে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, আদিবাসী পরিবেশনা, ধামাইল, আলকাপ, নবান্ন কথন, শোভাযাত্রা, পিঠা-মুড়ি-মুড়কি ও ঢাক-ঢোলের বাদন।
×