ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহাখালীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী ‘ব্যাংকক সুমন’ নিহত

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১১ নভেম্বর ২০১৫

মহাখালীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী ‘ব্যাংকক সুমন’ নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহতের নাম মোঃ হাবিবুর রহমান সুমন ওরফে ব্যাংকক সুমন (৩৮)। র‌্যাব জানায়, ব্যাংকক সুমন কথায় কথায় গুলি করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। হাসতে হাসতে গুলি ছুঁড়ে মানুষ খুন করতে পারে। তার বিরুদ্ধে একাধিক খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক মামলা হয়েছে। সে গুলশান, নিকেতন, বনানী, মহাখালী ও বাড্ডা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যমে শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মোঃ মাকসুদুল আলম জানান, নিহত ব্যাংকক সুমন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার গভীররাতে বনানী ও গুলশান এলাকায় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা সংবাদ পান মহাখালী সাততলা বস্তির পুকুর সংলগ্ন এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ নাশকতামূলক কার্যকলাপ করার জন্য অবস্থান করছে। পরে র‌্যাব দল রাত পৌনে ৩টার দিকে সেখানে অবস্থান নেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়। র‌্যাবের জিপে গুলি লাগে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় র‌্যাব দলটি ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড তাজা গুলি ভর্তি ১টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১ রাউন্ড খালি খোসা, ১টি রামদা এবং ২টি ছোরা উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব জানায়, এ সময় তারা র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে গুলি ছোড়ে। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানাতে পারেন, গুলিবিদ্ধ যুবকের নাম ব্যাংকক সুমন। সে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। পিতা-মকবুল হোসেন, সাং-পশ্চিম পাড়া সরদারবাড়ি, থানা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর, বর্তমান ঠিকানা-মহাখালী সাততলা বস্তি, থানা-বনানী, ডিএমপি, ঢাকা বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বনানী, গুলশান ও বাড্ডা থানা এলাকায় ২টি হত্যা, একাধিক অস্ত্র আইনে মামলা ও চাঁদাবাজির সময় গুলিবর্ষণ ও সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মামলা ও মাদক মামলা রয়েছে। ব্যাংকক সুমনের উত্থান ॥ প্রায় এক যুগ আগে মহাখালী ও সাততলা বস্তি এলাকায় ছিনতাই দিয়ে তার অপরাধ জগতে প্রবেশ। পরবর্তীতে মুকুল বাহিনীতে যোগ দিয়ে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। একবার চাঁদা চেয়ে না পেয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে মালিক ও কর্মচারীকে প্রকাশ্যে গুলি করে। এরপর তাকে পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি। কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে সে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। সে নিয়মিত ফেন্সিডিল, বিয়ার, গাঁজা বিভিন্ন মাদক সেবনে অভ্যস্ত ছিল। পরবর্তীতে সে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকবার সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে এসে একইভাবে অপরাধ জগতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। পরে সে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে গ্রুপ তৈরি করে গুলশান, নিকেতন, বনানী ও মহাখালী এলাকায় হত্যা, চাঁদাবাজি এবং গুলিবর্ষণসহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল। শীর্ষ সন্ত্রাসী আক্তারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে এলাকায় সে পরিচিত। কথায় কথায় গুলি করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। তার ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতেও সাহস পায়নি। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো হচ্ছে ॥ বনানী থানায় ২০(৩)১৩, ধারা-৩০২/২০১/৩৪, ২২(৪)১৩, ধারা-১৪৩/৩৮৫/৩২৬/৩০৭/৩৪,৩৮(৭)১৩, ধারা- ১৪৩/৩৮৫/৩২৬/৩০৭/৩৪ মামলা নং-১২(৮)১৩, ধারা-৩০২/৩৪ দঃ বিঃ, গুলশান থানায় মামলা নং-১৪(১২)১০, ধারা-১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯-এ। এছাড়া গুলশান ও বাড্ডা থানায় ২টি অস্ত্র মামলাসহ চাঁদাবাজির উদ্দেশে একাধিক স্থানে গুলিবর্ষণ এবং মাদকের মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমেদ জানান, আইপিএস পুকুরপাড় এলাকায় রাত আড়াইটার দিকে র‌্যাব-১ এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকার খবর পেয়ে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি জানান, নিহতের পরনে কালো প্রিন্টের শার্ট ও কালো প্যান্ট রয়েছে। নিহত ব্যংকক সুমনের বাবার নাম মকবুল হোসেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার, পশ্চিমপাড়া সরদারবাড়িতে। তিনি মহাখালী সাততলা বস্তিতে বসবাস করত।
×