ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুচির বিজয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বাড়বে ॥ বিশেষজ্ঞদের অভিমত

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১১ নভেম্বর ২০১৫

সুচির বিজয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বাড়বে ॥ বিশেষজ্ঞদের অভিমত

তৌহিদুর রহমান ॥ গণতন্ত্রের মানসকন্যা আউং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমেক্রেসি (এনএলডি) বিজয়ের পর সরকার গঠন করলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বাড়বে। বিশেষ করে আউং সান সুচি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হবেন। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ প্রসার হবে। সুচির বিজয় বাংলাদেশের জন্য সুবার্তা বয়ে আনবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে সুচির দল এনএলডি বিজয়ের প্রেক্ষিতে দলটি নতুন সরকার গঠন করতে চলেছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মিয়ানমারে সুচির দল বিজয়ের পর তারাই সরকার গঠন করতে চলেছে। কেননা ইতোমধ্যেই সামরিক সরকার এই ফলাফল গ্রহণ করেছে। সুচি বিজয়ী হওয়ার ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আর বাড়বে। কেননা দুইটি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে সম্পর্ক সব সময় ভাল থাকে। দুইটি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ খুব কম হয়। বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। মিয়ানমারের সঙ্গেও এখন সম্পর্ক আরও ভাল হবে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ ওয়ালিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা। এদিকে মিয়ানমারের আউং সান সুচিও গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে পরিচিত। সে কারণেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়বে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে সুচির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সেখানে ২৫ শতাংশ সংসদ সদস্য পদ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সে কারণে নিশ্চয়ই সুচি কৌশলী হবেন। এছাড়া মিয়ানমার আসিয়ান সদস্য হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের অন্য দেশগুলোর সদস্যদের দেশটির ওপর চাপ বাড়বে। তিনি বলেন, আমি খুবই আশাবাদী যে সুচির বিজয় বাংলাদেশের জন্য সুবার্তা বয়ে আনবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, মিয়ানমারে নির্বাচনে সুচির দল এনএলডি সরকার গঠন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। এনএলডি সরকার গঠন করলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা প্রতিবেশী কোন দেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকলে, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও ভাল হবে। তিনি বলেন, যদিও সুচি নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন কথা বলেননি। রোহিঙ্গা ইস্যুকে তিনি নির্বাচনে ব্যবহার করেননি। তিনি এ বিষয়ে একটি কৌশল নিয়েছিলেন। তবে নির্বাচনের পর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তিনি আগ্রহী হবেন। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিয়ানমারের সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন অভিযাত্রা সূচিত হয়। এছাড়া গত বছর ঢাকায় দেশ দুটির পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠক হয়। সেখানে উভয় দেশই পারস্পারিক সহনশীলতা ও সদিচ্ছার মাধ্যমে সীমান্ত রক্ষা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, আন্তঃসংযোগ, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিসিআইএম ও বিমসটেকের উদ্যোগগুলোতেও একত্রে কাজ করার জন্য আলোচনা হয়। এদিকে বর্তমানে দেশটিতে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্য অনেক দেশই অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেক্ষেত্রে এখন সুচির দল বিজয়ের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি হলে উভয় দেশের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সুফল বয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই মতামত দিয়েছেন। মিয়ানমারের একাকিত্ব এখন ভাঙছে। তারা এখন সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে উন্মুক্ত হতে চলেছে। আর সুচির দল নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ফলে দেশটি বিদেশী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্যও তার দুয়ার খুলে দেবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনার পাশাপাশি রেল ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার পারস্পারিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে ধারণা প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র মিয়ানমার এখন বাংলাদেশের জন্য পর্যটন, ব্যবসা ও বিনিয়োগের একটি চমৎকার স্থান হিসেবেও পরিণত হতে পারে। সূত্র জানায়, মিয়ানমারে নির্বাচনের পর এই পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে এনএলডি বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছে। তবে এনএলডি বিজয়ী হলেও সুচি রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধান হতে পারবেন না। কেননা ২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধন করে সুচির দেশের প্রধান হওয়ার পথ আটকে দেয়া হয়। বিদেশীকে বিয়ে করায় তিনি এখনকার সংবিধান অনুযায়ী ওই দুটি পদে বসার অযোগ্য। জিতলেও সংবিধান সংশোধনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনএলডি পাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে, কারণ পার্লামেন্টের শতাধিক আসন সংরক্ষিত রয়েছে সেনাবাহিনীর জন্য। সেটা ভেবে ৭০ বছর বয়সী সুচি অবশ্য আগেই বলে রেখেছেন, দল জিতলে প্রেসিডেন্ট না হলেও তার চেয়ে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবেন। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, সরকার গঠনের সুযোগ পেলে ৮৮ বছর বয়সী সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী উ থিনকেই প্রেসিডেন্ট করতে পারেন সুচি। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ইতোমধ্যেই এনএলডির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন সুচি। বর্তমান পার্লামেন্টের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি।
×