ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতীক্ষা সেনের প্রতীক্ষা...

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১০ নভেম্বর ২০১৫

প্রতীক্ষা সেনের প্রতীক্ষা...

রুমেল খান ॥ প্রাণকুমার সেনের আদিনিবাস পুরনো ঢাকার তাঁতীবাজারে। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা পেয়ে আলাদা দেশে পরিণত হলে তিনি সপরিবারে পাড়ি জমান ভারতে। তার দুই ছেলে। একসময় দুই ছেলেই বিয়ে করে সংসারী হলো। প্রাণকুমারের আশা, নাতি-নাতনীর মুখ দেখবেন। একসময় ভগবান মুখ তুলে চাইলেন। বড় ছেলে প্রতীক সেনের (বর্তমানে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার, ব্যাঙ্গালুরু নিবাসী) স্ত্রী স্মিতা সেন (গৃহিণী) প্রসব করলেন একটি ফুটফুটে কন্যা শিশু। দিনটা ছিল ২৪ এপ্রিল, ১৯৯৯। দাদু হওয়ার জন্য তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো প্রাণকুমারের প্রতীক্ষার অবসান হলো। হলো আশা পূরণ। তাই শখ করে নাতনীর নাম রাখলেন ‘প্রতীক্ষা’ (ডাকনাম ডোনা-ও তার দেয়া নাম)। প্রতীক্ষা আর শচীন টেন্ডুলকরের জন্ম তারিখ একই। না, প্রতীক্ষা ক্রিকেটার হয়নি। সে বেছে নিয়েছে টেনিস! এখন সে সুদর্শনা ষোড়শী। ক’দিন আগে ঢাকায় ‘ওয়ালটন আইটিএফ জুনিয়র আন্তর্জাতিক টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ’ টুর্নামেন্ট খেলে এখন অবস্থান করছে রাজশাহীতে আরেকটি টুর্নামেন্ট খেলার জন্য। এত খেলা থাকতে টেনিসকে বেছে নেয়া কেন? প্রতীক্ষার জবাব, ‘শৈশবে স্কুলে পড়ার সময় ভাল লাগত বলে একটু-আধটু টেনিস খেলতাম। তবে খেলাটা তেমন বুঝতাম না। ২০১০ বা ২০১১ (সালটা পুরোপুরি মনে নেই) টিভিতে একটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে দেখলাম রাফায়েল নাদালকে। তার প্রতিপক্ষ রজার ফেদেরার। ওই ম্যাচটি দেখেই আমি টেনিসের প্রতি সত্যিকারের আকৃষ্ট হই। তারপরই সিরিয়াসলি খেলাটা শুরু করি। যদিও অন্যদের চেয়ে আমি অনেক দেরিতেই খেলাটা আরম্ভ করি।’ উন্নতি করতে হলে উন্নত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রতীক্ষা তাই গত মাস ছয়েক ধরে স্পেনের ‘এলিট টেনিস একাডেমি’তে ৫/৬ কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। স্পেনের কিছু স্থানীয় টেনিস টুর্নামেন্টেও এ সুবাদে খেলা হয়েছে তার। ভারত ও স্পেনে অনুষ্ঠিত একাধিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলে ২/৩টি শিরোপাও জিতেছে। তবে সেগুলো দ্বৈরথে। এখনও কোন একক শিরোপা জেতা হয়নি। প্রতীক্ষার বর্তমান জুনিয়র র‌্যাঙ্কিং ১৫৯৬। প্রিয় খেলোয়াড় রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। মেয়েদের মধ্যে ভাল লাগে মারিয়া শারাপোভা এবং মনিকা সেলেসকে। ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘অনেক বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও ম্যাচ খেলতে চাই। র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতি ঘটাতে চাই। স্বপ্ন দেখি গ্র্যান্ডসøাম ও অলিম্পিক টেনিস খেলার।’ সানিয়া মির্জা প্রসঙ্গে প্রতীক্ষার ভাষ্য, ‘তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। তিন বছর আগে দিল্লীতে তার সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল। সানিয়ার বর্তমান ডাবলস পার্টনার মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গেও দেখা হয়েছে, স্পেনে। সানিয়ার কারণেই আজ ভারতে মেয়েদের মধ্যে টেনিস-জোয়ার এসেছে। এখানে প্রচুর প্রতিভাবান মেয়ে আছে যারা সব ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা পেলে একসময় আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়ে পরিণত হতে পারবে।’ স্মরণীয় ম্যাচ? ‘এ বছরের জানুয়ারিতে নাইরোবিতে একটি টুর্নামেন্টের একক ম্যাচে মরক্কোর এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে আমি একটি গেমে ৫-০ তে পিছিয়ে পড়ি। পড়ে আমি কামব্যাক করার চেষ্টা করি এবং শেষ পর্যন্ত ৭-৫ এ হেরে যাই।’ টেনিস খেলার সুবাদে এ পর্যন্ত ফ্রান্স, স্পেন, নাইরোবি, বুরুন্ডি এবং বাংলাদেশ সফর করেছে প্রতীক্ষা। টেনিস ছাড়া স্কেটিংয়েও পারদর্শী প্রতীক্ষা তার পড়াশোনা নিয়ে বলে, ‘স্কুলে পড়লে টেনিস খেলার জন্য বাইরে যাওয়া বা এ খেলার জন্য সময় বের করা খুব মুশকিল। তাই আমি অনলাইনে একটি উন্মুক্ত স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ছি।’ বাংলাদেশে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আসা। ‘গত বছরও টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছিলাম। এখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ, মানুষজন সবকিছুই খুব ভাল লাগে।’ স্বগোক্তি প্রতীক্ষার। দু’হাতে ব্যাকহ্যান্ড খেলে প্রতীক্ষা, ‘ব্যাকহ্যান্ড শটটিই আমার খেলার স্ট্রং পয়েন্ট।’ সে খেলতে পছন্দ করে ক্লে-কোর্টে। গ্রাস কোর্টে তেমন নয়। তাই গ্রাস কোর্টে বেশি খেলতে চায় প্রতীক্ষা। গ্র্যান্ডসøাম ও অলিম্পিকে খেলা এবং ক্যারিয়ারের একক শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখে প্রতীক্ষা। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়ার প্রতীক্ষার অবসান কবে ঘটবে প্রতীক্ষা সেনের?
×