ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১০ নভেম্বর ২০১৫

সিরিজ বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একদিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ডাবল খুশি মিলল। সকাল হতেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কন্যাসন্তান হয়েছে, সেই খুশির খবর মিলল। আর দিন শেষে রাতেই জিম্বাবুইয়েকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৮ রানে হারিয়ে সিরিজ জয়ের খুশি মিলল। সেই সঙ্গে দেশের মাটিতে আরেকটি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। টানা পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ জেতার আনন্দও সবার মনে-প্রাণে জুড়িয়ে গেল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ যে খুব ভাল রান স্কোরবোর্ডে জমা করে এমনটি নয়। ইমরুল কায়েসের ৭৬, নাসির হোসেনের ৪১, সাব্বির রহমান রুম্মনের ৩৩, মুশফিকুর রহীমের ২১ ও তামিম ইকবালের ১৯ রানে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান জমা করে বাংলাদেশ। তিনাসে পানিয়াঙ্গারা একাই ৩ উইকেট নেন। কিন্তু এ রানই যে জিম্বাবুইয়ে করতে পারবে না, সেই বিশ্বাসও সবার ভেতরই থাকে। শেষে তাই বোঝা গেল। জবাব দিতে নেমে ৪৩.২ ওভারে ১৮৩ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। এলটন চিগুম্বুরা ৪৭ ও সিকান্দার রাজা ৩৩ রান করেন। মুস্তাফিজুর রহমান ৩টি, আল আমিন ও নাসির ২টি করে উইকেট নেন। যেমনটি ভাবা হয়েছিল, তেমনটিই হলো। জিম্বাবুইয়েকে টানা হারিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের বড় ব্যবধানে জেতার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও জিম্বাবুইয়েকে উড়িয়েই দিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল মাশরাফিবাহিনী। সর্বশেষ ৭ ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে টানা হারের স্বাদ দিল বাংলাদেশ। বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিতলে জিম্বাবুইয়েকে আবারও হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ। গত বছর থেকে সিরিজ জয় শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই গত বছর শেষের দিকে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকরা। এরপর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন দিগন্ত যেন উন্মোচিত হয়। একের পর এক ম্যাচ, একের পর এক সিরিজ জিততে থাকে বাংলাদেশ। এমনকি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপের মতো আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হারানোর পর পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো সিরিজে হারানোর সঙ্গে হোয়াইটওয়াশও করে বাংলাদেশ। এরপর ভারতকেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারায়। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়েছিল মাশরাফিরা। জিম্বাবুইয়েকে হারাতে পারলে টানা পাঁচ সিরিজ জেতা হবে। এমন কৃতিত্ব নিজেদের ভা-ারে যুক্ত করার সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সেই সুযোগটি দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই নিয়ে নিল মাশরাফিরা। কিন্তু এমন দিনে দলের সঙ্গে থাকতে পারলেন না সাকিব। কন্যাসন্তান হবে, এজন্য রবিবারই যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীর কাছে চলে যান সাকিব। রাতেই খবর আসে সন্তান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পরে সন্তানের মুখ দেখেন সাকিব। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে তার ফ্যানপেজে স্ট্যাটাস দেন, ‘সুন্দর এই রবিবারে, ৮ নবেম্বর ২০১৫-এ আমি ও শিশির পরম করুনাময়ের অশেষ রহমতে স্বর্গের একটি টুকরো পেয়েছি। (উম্মে আহমেদ) শিশির ও আমাদের আদরের কন্যা সুস্থ আছে। সবাইকে তাদের দোয়া, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জন্য ধন্যবাদ। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, বিশেষ করে আমাদের মেয়ের জন্য, যাতে সে গড়ে উঠতে পারে তার পূর্ণ প্রতিভায়, মমতায় ও সকলের ভালবাসায়। আমিন।’ সাকিবের কন্যা সেই ভালবাসা সবার কাছ থেকেই পাচ্ছেন। সাকিবের কন্যা হয়েছে। সেই খুশির খবরটি নিয়েই বাংলাদেশ দল খেলতে নামে। সিরিজও জিতে দল। কিন্তু এবার সিরিজ জয়ের দিনে সাকিব দলের সঙ্গে থাকতে পারেননি। যেমনটি সর্বশেষ জেতা টানা চার সিরিজে ছিলেন। ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে খুব ভাল ব্যাটিং করেননি। সাকিব না থাকায় ইমরুল একাদশে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। দুর্দান্ত ইনিংস খেলার সঙ্গে ম্যাচসেরাও হয়েছেন। এদিনও ১২৭ রানেই বাংলাদেশের ৪ উইকেটের পতন ঘটে। দল খাদের কিনারায় পড়ে যায়। মুশফিকও এদিন আর দলের হাল ধরতে পারেননি। তবে দলীয় ১৫১ রানে ইমরুল আউটের পর সাব্বির-নাসির মিলে এদিন ষষ্ঠ উইকেটে যে ৪২ রানের জুটি গড়েন, সেটিই কাজে দেয়। যেখানে মনে হচ্ছিল ২০০ রানও করা সম্ভব নয়, সেখানে ২৫০ রানের কাছাকাছিই চলে যায় বাংলাদেশ। তখনই বোঝা হয়ে যায়, ২৪০ রানের বেশি করে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে এর আগে দেশের মাটিতে মাত্র ১ বার হেরেছিল বাংলাদেশ (৯ ম্যাচে মাত্র ১ বার), তাও সেই ১৯৯৯ সালে; সেটির পুনরাবৃত্তি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। বাংলাদেশের মাটিতেই যে খেলা। আর এখন বাংলাদেশ অনেক আত্মবিশ্বাসী দল। জিম্বাবুইয়ের মতো দল কুলিয়ে ওঠার মতো নয়। তবুও ৭৮ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর যে পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার রাজা ও চিগুম্বুরা মিলে বড় জুটি গড়তে থাকেন, সেখানে খানিক ভয়ও যুক্ত হয়ে যায়। যেই দুইজন মিলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন, ১৫১ রানে আল আমিন এসে সিকান্দারকে আউট করে দেন। তখনই বোঝা হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে হারতেই চলেছে। এরপর এক এক করে ১৮৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশও সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নেয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজটি নিয়ে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৬১টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে। ২০টি সিরিজে জয় ধরা দেয়। আর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১৫টি সিরিজের মধ্যে নবম সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ৩৫ সিরিজ খেলে ১৬টিতে জিতে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই ৭টি সিরিজ জয় মিলে। টানা সিরিজ জয়ে সবার উপরে আছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ১০ সিরিজ জেতে অসিরা। আর টানা ৫ ওয়ানডে সিরিজ জেতার তালিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ (একবার) ও দক্ষিণ আফ্রিকার (দুইবার) সঙ্গে নিজেদের নাম লেখায় বাংলাদেশ। তা সম্ভব হয়েছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে সিরিজ জেতায়।
×