ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে যে তথ্যগুলো দেয়া উচিত নয়

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৯ নভেম্বর ২০১৫

ফেসবুকে যে তথ্যগুলো দেয়া উচিত নয়

ফেসবুক বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যদিও নেটের জগতে টুইটার বা ইনস্টাগ্রামের মতো আরও অনেক যোগাযোগ সাইট আছে কিন্তু এর মধ্যে ফেসবুকই এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশে ফেসবুক এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩ কোটির ওপরে, ২০০৮ সালেও এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজারের মতো। এ থেকে বোঝা যায় কি হারে বাড়ছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ভার্চুয়াল জগতটা অনেক বড়। এখানে ভালমন্দ নানা ধরনের মানুষের বাস। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা শত শত ফ্রেন্ডের মধ্যে প্রকৃত ফ্রেন্ডের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাই ফেসবুকে তথ্য শেয়ারের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রোফাইল পেজ বা ওয়ালে এই তথ্যগুলো কখনও শেয়ার করবেন না। টেলিফোন নম্বর ওয়ালে কখনও ফোন নম্বর দিবেন না। সেটি ব্যক্তিগত সেলফোন, বাসার ল্যান্ডফোন বা অফিসের ফোন নম্বর যাই হোক না কেন। দিলে অযথা হয়রানির শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ কাউকে দিতে চাইলে সেটি ইনবক্সে দিবেন। অবাঞ্ছিত কলার ছাড়াও হ্যাকারদের কাছে ফোন নম্বর একটি লোভনীয় জিনিস। এমন কিছু প্রোগ্রাম আছে যা দিয়ে ফোন নম্বর থেকে প্রোফাইলের সব তথ্য নামিয়ে আনা যায়। ফেসবুককে আপনি যদি ফোন নম্বর জানিয়ে থাকেন সেটি প্রোফাইলে থেকে যেতে পারে। সেটি হাইড করে দিতে পারেন। হাইড করার নিয়ম- ফেসবুক ওপেন করেন, উপরে আপনার নামের ওপর ক্লিক করুন, আপনার প্রোফাইল পেজ ওপেন হলো। কভার নিচে ডানদিকে দেখুন ছোট বক্সে লেখা আছে ‘আপডেট ইনফো’, এর উপর ক্লিক করুন। বাম পাশের কলামের ‘কনটাক্ট এন্ড বেসিক ইনফো’তে ক্লিক করুন। এবার ডানপাশে উপরে আপনার ফোন নম্বর দেখতে পাবেন। ফোন নম্বরের ডান দিকে এডিট অপশনে ক্লিক করুন। ‘অডিয়েন্স সিলেক্টর’ আইকনে ক্লিক করুন। এরপর ‘অনলি মি’ ঠিক করে নিন। এরপর ‘সেভ চেঞ্জেস’ এ ক্লিক করুন। বাসার ঠিকানা ফেসবুকের সব বন্ধুকে তো আমরা ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এদের মধ্যে কিছু আছে প্রকৃত বন্ধু, কিন্তু বন্ধুবেশী অন্যকিছু, আবার কেউ কোন ক্যাটাগরিতেই পড়ে না। এরা ফ্রেন্ডলিস্টে থাকলেও ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে আগ্রহী নয়। আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে যদি এমন কেউ থাকে যে বন্ধু হয়েছে কেবলই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাদের বাড়ির ঠিকানা জানান কি উচিত হবে ? তাছাড়া আপনার বাড়ির ঠিকানা জানলে কেউ যে তার অপব্যবহার করবে না তার নিশ্চয়তা আছে কি ? হোম এ্যাড্রেস হাইড করার নিয়ম অনেকটা ফোন নম্বর হাইড করার মতোই। ‘আপডেট ইনফো’তে যান। ‘প্লেসেস ইউ লিভড’ এ ক্লিক করুন। ‘কারেন্ট সিটি এন্ড হোম টাউন’ এ আসুন। এডিট করুন আগের মতো। এরপর ‘সেভ চেঞ্জেস’ করুন। আরেকটি জায়গা আছে সেখানে আপনার ঠিকানা থেকে যেতে পারে সেটি হলো ইভেন্টস। যদি আপনি ইভেন্টস ক্রিয়েট করে থাকেন সেখানে আপনার ঠিকানা বা অবস্থান থেকে যাওয়ার খুব সম্ভাবনা রয়েছে। এ থেকে মানুষ জেনে যাবে আপনি কোথার থেকে কোথায় এলেন। বিষয়টি পাবলিক, ফ্রেন্ডস, অনলি মি কোন অপশনটি ওপেন থাকছে তার উপর নির্ভর করে। এখন নিজের অবস্থানটি সর্বসাধারণকে জানানোর ইচ্ছা না থাকে ইভেন্টস ডিলেট করে দিতে পারেন। সেজন্য মাঝে মাঝে হিস্ট্রি পুরোটা চেক করে দেখবেন। কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত তথ্য ফেসবুকে কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ না করাই ভাল। বিষয়টি অবশ্য কর্মক্ষেত্রের ধরনের ওপর নির্ভর করে। আপনি হয়ত কোন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কিন্তু আপনার দেয়া কর্মক্ষেত্র তথ্যের থেকে কোন অবাঞ্ছিত ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের অন্যকর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য জানার চেষ্টা করতে পারে। হ্যাকারদের তথ্য সংগ্রহের প্রথম উৎস কর্মক্ষেত্র বিষয়ক তথ্য। এখান থেকে তারা অনেকসময় টার্গেট ঠিক করে। আপনার কর্মক্ষেত্রের বিবরণ সূত্রে আপনার কোন সহকর্মী বা ফেসবুক বন্ধুর মেইল বা ফেসবুক হ্যাক হয়ে যেতে পারে। আপনার অফিসের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করতে পারে। নতুন হ্যাকারদের পছন্দ অবশ্য লিঙ্কড ইন। যেখানে একজন স্টাফের বিস্তারিত তথ্য থাকে। টাইমলাইনে গিয়ে আগে দেয়া পোস্টগুলো চেক করুন। বর্তমান জব সম্পর্কিত কোন তথ্য আছে কি না দেখুন। অতীত জব সম্পর্কিত তথ্য থাকলেও দেখুন। আপনার বর্তমান সহকর্মীরা অতীতের তথ্য ঘেঁটে দেখার চেষ্টা করতে পারে। তার থেকে তারা হয়ত এমন কোন ধারণা করতে পারে যেটি আপনি চান না। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে আপনার কাজের ধরন ও ফ্রেন্ডের সংখ্যার ওপর। আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে যদি প্রচুর ফ্রেন্ড থাকে যাদের আপনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না তখন সতর্কামূলক পদক্ষেপগুলো নেয়া জরুরী। ৪. রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস জানিয়ে দেয়া একটি অনর্থক কাজ। আপনার স্ট্যাটাস ‘সিঙ্গেল’ থেকে ‘ম্যারিড’ বা ‘ইটস কম্পিøকেটেড’ সাইবার জগতে অনেক সময় এটি গসিপের জন্ম দিতে পারে। স্ট্যাটাস চেঞ্জ করলে ফেসবুক এ্যাপ অনেক সময় তা জানিয়ে দেয়। স্ক্যামার বা জালিয়াত চক্রের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাবেন না যারা প্রেমিক প্রেমিকাদের তথ্য ম্যানিপুলেট করতে বিশেষ পারদর্শী। এরা সামাজিক নেটওয়ার্ক, মেইল বা ডেটিং সাইটগুলো ব্যবহার করে প্রথমে আপনার সঙ্গে খাতির পাতানোর চেষ্টা করবে। পরে আপনার কাছ থেকে পয়সা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। ওয়াল থেকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস পুরোটাই মুছে দেয়া সম্ভব। আপনি নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে ইনবক্সে বা মেইলে এতদিনে হয়ত এরকম দুয়েকটি মেসেজ পেয়েও থাকতে পারেন। যেখানে বলা হয়েছে, প্রিয় অমুক... আমি আপনার ফেসবুক ছবি ও স্ট্যাটাস দেখেছি। আপনাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। দয়া করে এই মেইলে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখে পাঠান। ভুলেও এসব মেসেজের জবাব দেবেন না। বরং সোজা ব্লক করে দেবেন। ৫. আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য ফেসবুক একটি উন্মুক্ত জায়গা। এই উন্মুক্ততার সুযোগ নিয়ে অনেকে পাতছে প্রতারণা ফাঁদ। নানা রকম পুরস্কার সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে কৌশলে জেনে নিতে পারে আপনার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি। তাই এ নম্বর কখনো ফেসবুকে দিবেন না। আপনার কোন ‘বন্ধু’ আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনারই অজান্তে অনলাইনে কেনাকাটার কাজটি সেরে ফেলতে পারে। আপনি নিশ্চয়ই এটি চাইবেন না। তাহলে উপায়? ফেসবুক ওপেন করে ডান দিকে উপরে কোন ক্ষুদ্র ত্রিভুজ আইকনে ক্লিক করে সেটিংসে আসুন। বাম পাশের কলামে নিচের দিকে ‘পেমেন্টস’ লেখার ওপর ক্লিক করুন। এরপর ডানপাশে উপরে ‘এ্যাকাউন্ট সেটিংস’ ট্যাবে আসুন। পেমেন্টস (যদি করে থাকেন) তথ্যগুলো এখানে পাবেন। রিমুভ করে দিন। এটা করা হলে কেউ আপনার ফেসবুক হ্যাক করলেও ক্রেডিট কার্ড নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য পাবে না। ছবি : তাহসিন কিবরিয়া মডেল : রিমন, জেরিন ও নাফিসা
×