ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্রের পথে সুচির দীর্ঘ লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৯ নভেম্বর ২০১৫

গণতন্ত্রের পথে সুচির  দীর্ঘ লড়াই

মিয়ানমারে এর আগের জাতীয় নির্বাচনকালে আউং সান সুচি ছিলেন গৃহবন্দী। সে নির্বাচনে তার দল বিপুল বিজয় অর্জন করেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়। বর্বর সামরিক শাসক তার দল ন্যাশনাল লীগ ফল ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সরকার গঠন করতে দেয়নি। এর ২৫ বছর পর রবিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণতন্ত্রের প্রতীক সুচি ইয়াঙ্গুন ভোট কেন্দ্রে ভোট দেন। সমর্থকদের উচ্ছ্বাসপূর্ণ জয়ধ্বনির মধ্য দিয়ে সুচি ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ সময় তার পরনে ছিল লাল রঙের টপ। এর সঙ্গে মিলিয়ে চুলে গোঁজা ছিল ফুল। খবর এএফপির। মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক আউং সানের কন্যা সুচি (৭০) গত তিন দশক ধরে সহিংসতা এড়িয়ে দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য ব্যক্তিগত অনেক মূল্য দিতে হলেও তিনি হয়ে ওঠেছেন দেশটির গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক। তবে সমালোচকরা বলছেন, মানবাধিকার আইকন হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পাওয়া সুচির সুনাম সম্প্রতি ক্ষয়ে এসেছে। মিয়ানমারের ক্ষীয়মান রাজনীতিতে প্রবেশের পর তিনি আদর্শবাদ থেকে সরে এসে কঠোর বাস্তবতার পথ বেছে নেন। তারা গৃহবন্দী অবস্থায় থাকা সুচির সঙ্গে মুক্ত সুচির মাঝে এক ধরনের পার্থক্য দেখতে পেয়েছেন। এদিকে মিয়ানমারের এ নির্বাচনে সুচির দল সংখ্যারিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হবে বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সুচি জানেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়াই শেষ কথা নয়। কারণ এর আগের নির্বাচনেও তার দল যুগান্তকারী বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু এ বিজয়কে প্রত্যাখ্যান করে জান্তা সরকার সুচির ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কারারুদ্ধ করে। তাকেও গৃহ অন্তরীণ থাকতে হয় দুই দশক ধরে। কিন্তু এরপর ২০১১ সালে মিয়ানামারে এক ধরনের আধা বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। এ সরকার নানা ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। পরিবর্তন আসে অনেক কিছুতেই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিয়ানমার রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক নিকোলাস ফারেলি বলেন, দেশটিতে এখনও বড় দুই ফ্যাক্টর অপরিবর্তিত। এর একটি সুচির দীর্ঘদিনের ক্যারিশমাটিক অবস্থান। অপরটি সামরিক এলিট শ্রেণীর দৃঢ়ভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার প্রবণতা। তিনি বলেন, মিয়ানমারের অধিকাংশ ভোটারের কাছে দেশটির কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের মূল নেত্রী একমাত্র সুচি। তাদের ধারণা ১৯৯০ সালে যে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়েছে এখন তারা এর কাছে এসে পৌঁছেছেন। এবারের নির্বাচনে জয়ী হলেও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কারণ জান্তা শাসিত সংবিধানে বিধান রাখা হয়েছে যার স্ত্রী/স্বামী অথবা পুত্র/কন্যা কেউ বিদেশী হলে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সুচিকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যেই এ বিধান রাখা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে সুচি সংবিধান সংশোধনের দৃঢ় অঙ্গীকার করেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, দল জয়ী হলে প্রেসিডেন্টের উপরের কোন পদে তিনি থাকবেন। আর তাই যদি হয় তা হলে মিয়ানমারের রাজনীতির আগামী নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতেও থাকবেন সুচি।
×