ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে এক সঙ্গে ৬ সন্তান প্রসব করলেন প্রসূতি চারজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৮ নভেম্বর ২০১৫

চট্টগ্রামে এক সঙ্গে ৬ সন্তান প্রসব করলেন প্রসূতি  চারজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে ছয় নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন এক প্রসূতি মা। শনিবার সকাল ১০টার দিকে জেসমিন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালে একসঙ্গে এই ছয় নবজাতকের জন্ম দেন ফটিকছড়ি সাদেকনগর গ্রামের গৃহবধূ রাবিয়া আনোয়ারা। ভূমিষ্ঠ ৬ শিশুর মধ্যে ৪ জন মারা গেছে। জীবিত ২ জনের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন। চিকিৎসকদের মতে, ঘটনাটি বিস্ময়কর হলেও একেবারে অস্বাভাবিক নয়। একসঙ্গে ৬ শিশু ভুমিষ্ঠ হওয়ার খবরে ডাক্তার-নার্সসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিড় জমান প্রসূতি ওয়ার্ডে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ জুলাই সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে। ওই দিন হাসপাতালে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার হাসনা বেগম ছয় নবজাতকের জন্ম দেন। তবে ওদের কেউ বেঁচে নেই। তাদের মধ্যে ৩ জন জন্মগ্রহণের দিন মারা যায়। বাকিরা পরদিন মারা যায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে প্রসব বেদনা উঠলে শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় রাবিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের লেবার রুমে চেকআপ করার পর সকাল ১০টার দিকে প্রথমে তিনি ছেলে শিশুটির জন্ম দেন। পরে একে একে আরও পাঁচটি মেয়ে শিশু জন্ম দেন এই প্রসূতি। ছয় নবজাতকের ৩ জনের ওজন ৫০০ গ্রাম ও ৩ জনের ওজন ৬০০ গ্রাম। এদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছে। হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ রোজী দত্ত বলেন, অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়ায় জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই ছেলে শিশুটিসহ একটি মেয়ে শিশু মারা যায়। বিকেলে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। অপর দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শিশুদের মা সুস্থ রয়েছেন। তিনি জানান, গর্ভাবস্থায় যেসব মেডিক্যাল চেকআপের প্রয়োজন হয়। রাবিয়ার এসব কিছুই করানো হয়নি। রক্ষণশীল পরিবারের গৃহবধূ হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় যথাযথ যতœও তিনি পাননি। যদি সঠিকভাবে যতœ নেয়া যেত তাহলে ছয়টি বাচ্চাকেই হয়ত বাঁচানো সম্ভব হতো। চমেক হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন দুই নবজাতকের বিষয়ে হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং এনআইসিইউর প্রধান ডাঃ চৌধুরী চিরঞ্জিত বড়ুয়া বলেন, ‘বাচ্চাগুলো খুবই অপরিণত। মাত্র ৬ মাসে জন্ম নেয়ায় এরা চার ভাগের একভাগ পরিণত হয়েছে। শিশুগুলোকে বাঁচাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে তাদের শারীরিক গঠনের যে অবস্থা তাতে জীবন শঙ্কামুক্ত নয়।’ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত-জিনগত, এক্স ওয়াই ক্রোমোজমের তারতম্য ও ভ্রƒণ বিভাজনজনিত কারণে একাধিক সন্তানের জন্ম হয়ে থাকে। এছাড়া দীর্ঘদিন সন্তান হয় না এমন প্রসূতিদের কিছু ওষুধ সেবনের কারণেও এমন হতে পারে। একসঙ্গে ৬ সন্তানের জন্মের ঘটনা বিরল হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা অস্বাভাবিক নয়। রাবিয়ার শ্বশুর সাহাব মিয়া বলেন, শুক্রবার রাতে রাবিয়া হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শনিবার সকালে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে সে ছয় সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভাল। তিনি আরও জানান, আমার ছেলে এয়াকুব (রাবিয়ার স্বামী) আবুধাবি প্রবাসী। ২০১০ সালে তাদের বিয়ে হয়। রাবিয়ার ৫ বছর বয়সী এক মেয়ে সন্তানও আছে।
×