ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুশফিক-সাব্বির চমক

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৮ নভেম্বর ২০১৫

মুশফিক-সাব্বির চমক

মিথুন আশরাফ ॥ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ১২৩ রান করতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। বিপদে পড়ে যায়। সেখান থেকে মুশফিক-সাব্বির মিলে দলকে রক্ষা করেন। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ১১৯ রানের জুটি গড়েন। যেখানে একটা সময় মনে হচ্ছিল ২০০ রান করাই বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে, মুশফিক-সাব্বিরের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে শেষপর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করল ২৭৩ রান। দুজনই আবার রানআউটের মধ্য দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। মুশফিকুর রহীম ১০৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ রান করে রান আউট হন। তার আগে ৫৮ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫৭ রান করে রান আউট হন সাব্বিরও। সাব্বির আউট হতেই মুশফিক-সাব্বিরের জুটিরও অবসান ঘটে। দুইজন মিলে দলকে ২৪২ রানে নিয়ে যান। সাব্বিরের আউটের মধ্য দিয়ে পঞ্চম উইকেটের পতনও ঘটে। এরপর ৯ উইকেট পতনের সঙ্গে আর ৩১ রান যুক্ত করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা শুক্রবার বলেছিলেন, ‘যে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে আমাদের জয়ের ধারা শুরু, সেখানে ৩২ রানে আমাদের ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সাকিব-মুশফিক তখন জুটি গড়ল। বিশ্বকাপে ১২০ রানে ৪ উইকেট পড়ে গেল, সাকিব-মুশফিক জুটি গড়ল আবার।’ মাশরাফি গতবছর শেষদিকে শুরু হওয়া জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের স্মৃতি তুলে এনেছেন। সেই সিরিজ থেকেই যে বাংলাদেশ সাফল্যের সিঁড়ি খুঁজে পেয়েছে। সেই সিরিজে সাকিব-মুশফিক বারবার দলকে হাল ধরেছেন। আর বিশ্বকাপেও হাল ধরেছেন। এবার তাই মাশরাফি এ দুইজনকে সামনে তুলে ধরে বোঝাতে চেয়েছেন, ব্যাটসম্যান আছে দলে; যারা হাল ধরতে পারবেন। তাই ঘটল। মনে হচ্ছিল, সৌম্য সরকারের পরিবর্তে নেয়া ইমরুল কায়েসকে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামানো হবে। কিন্তু একাদশেই রাখা হল না ইমরুলকে। তামিমের সঙ্গী করা হল লিটন কুমার দাস। লিটন ব্যর্থ হলেন। ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে যে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই ছাপ এখনও লেগে আছে। দলের স্কোরবোর্ডে ২ রান যোগ হতেই রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান লিটন। শুরুতেই বাংলাদেশ ধাক্কা খায়। তবে তা থেকে যে দ্রুতই উতরে যাবে বাংলাদেশ, সেই ভরসাও থাকে। ব্যাট হাতে নামেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি জাতীয় ক্রিকেট লীগের সর্বশেষ ম্যাচেই শতক করেন। কিন্তু রিয়াদ সেই ভরসার প্রতিদান দিতে পারলেন না। স্কোরবোর্ডে যখন ৩০ রান জমা হয়, এমন সময়ে রিয়াদও (৯) আউট হয়ে যান। সেখান থেকে মুশফিক-তামিম মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। দুজন মিলে ৭০ রানে জুটি গড়েন। যে দলের শত রান হয়, তখন দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকা তামিম (৪০) সাজঘরে ফেরেন। দল ভালই এগিয়ে চলছিল। তামিমও ভাল ব্যাটিং করেন। কিন্তু বড় স্কোর আর গড়া হল না। তখনও আসল ধাক্কাটা লাগেনি। কিন্তু আসল ধাক্কাটা আসে ১২৩ রানে গিয়ে। সাকিব ব্যাট হাতে নেমে ১৬ রান করেই আউট হয়ে যান। বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে। এরপর মুশফিক, সাব্বির রহমান রুম্মন, নাসির হোসেনই মূলত ব্যাটসম্যান থাকেন। আর মাশরাফি বিন মর্তুজা, আরাফাত সানি ও আল আমিনও ব্যাটিংয়ে থাকেন। কিন্তু ভরসা করতে হলে মুশফিক, সাব্বির, নাসিরকেই করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে সবার ভেতরই ভয় ঢুকে যায়। বাংলাদেশ না আবার ২০০ রানের মধ্যেই বেঁধে যায়! মুশফিক যদি আউট হয়ে যান তাহলে দলের হাল দীর্ঘমেয়াদে ধরতে পারবেন সাব্বির ও নাসির? সেই প্রশ্নও থাকে। একটু সময় গড়াতেই তার উত্তরও মিলে যায়। চার উইকেট পতনের পর দল বিপদে পড়ার পর; সব উধাও করে দেন মুশফিক-সাব্বির মিলে। দুজন মিলে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকেন। কোনভাবেই এ দুজনকে আউট করতে পারে না জিম্বাবুইয়ে বোলাররা। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের ফ্যাকাশে মুখ উজ্জ্বল হতে থাকে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে থাকে। তাদের ভালই জানা, মুশফিক যদি বড় স্কোর খেলে ফেলেন, তাহলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড অনেক মজবুত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে জিম্বাবুইয়ের হারের শঙ্কাই থাকবে। মুশফিক তাই করলেন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক তুলে নিলেন। তবে মুশফিক একা এ পথ পাড়ি দিতে পারতেন না যদি সাব্বির যোগ্য সঙ্গ না দিতেন। গতবছর যে ভূমিকায় মুশফিকের সঙ্গে ছিলেন সাকিব, এবার প্রথম ওয়ানডেতে সেই ভূমিকা নেন সাব্বির। একটা করে ওভার যেতে থাকে আর বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে রান জমা হতে থাকে। সেই সঙ্গে মুশফিক ও সাব্বিরের স্কোরবোর্ডও মজবুত হতে থাকে। ৩৪ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশ ১৫০ রান করে। ত্রিশ গজের বাইরে মাত্র ২ জন ফিল্ডার থাকার বাধ্যতামূলক পাওয়ার প্লে’তে (১-১০ ওভার) যেখানে বাংলাদেশ ৩৯ রান তোলে। সেখানে শেষ ১০ ওভারে (৪১-৫০ ওভার) ত্রিশ গজের বাইরে ৫ জন ফিল্ডার রাখার পাওয়ার প্লে’তে ৭৯ রান ওঠায় বাংলাদেশ। এ শেষ ১০ ওভারেই আসলে বাজিমাত হয়। মাঝখানের ৩০ ওভারে রান নেয় ১৫৫। ২৪২ রানে সাব্বির আউটের পর মুহূর্তেই ৯ উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে দ্রুত রানও বাড়তে থাকে। ১ রান যোগ হতেই নাসির (০) ও সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক আউট হয়ে যান। আরও ২১ রান স্কোরবোর্ডে যুক্ত হওয়ার পর পুরো ফিট না হওয়া সত্ত্বেও মনের জোরে খেলতে নামা মাশরাফি (১৫) ১ চার ও ১ ছক্কা হাঁকিয়ে আউট হন। ২৭৩ রানে গিয়ে আরাফাত সানি (১৫) রান আউট হয়ে যান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসেরও শেষ হয়। ৫০ ওভার শেষ হয়ে যায়। ইনিংস শেষ হতেই সবার ভেতর স্বস্তি কাজ করে। স্কোরবোর্ডে ভাল রানই শেষপর্যন্ত যুক্ত হয়েছে। তা সম্ভব হয়েছে মুশফিকের শতক ও সাব্বিরের অর্ধশতকে এবং এ দুজনের জুটিতেই। মূলত মুশফিক-সাব্বিরেই অল্প রানে ইনিংস শেষ হওয়া থেকে বেঁচেছে বাংলাদেশ।
×