ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি, তিন ফরমেট মিলিয়ে তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৭ হাজার রান

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৮ নভেম্বর ২০১৫

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর পরই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। সাড়ে চার বছর আগে জিম্বাবুইয়ে সফরে ১০১ রানের সেই ইনিংসটির আগেই দলের মিডল অর্ডারের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে গিয়েছিলেন। অধিনায়ক হওয়ার পর নিয়মিত রান করলেও আর মাত্র একটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। গত বছর শেষদিকে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। আর চলতি বছর এপ্রিলেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঢাকায় ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান। শনিবার সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই পেয়ে গেলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। মুশফিকুর রহীম বাংলাদেশ দলের ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ সেটা প্রমাণ করে দিলেন আরেকবার। আগের সেঞ্চুরিগুলো দীর্ঘ সময় পর হলেও এবার মাত্র ৭ ইনিংস পরেই আরেকটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন দলের বিপদের মুহূর্তে। দলীয় ৩০ রানে দুটি এবং ১২৩ রানে ৪টি উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশ দল লড়াকু পুঁজি পেয়েছে মুশফিকের ১০৭ রানের ইনিংসের সুবাদে। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক সেঞ্চুরির তালিকায় তামিম ইকবাল (৬) ও সাকিব আল হাসানের (৬) পরই এখন মুশফিক। অবশ্য শাহরিয়ার নাফীসেরও সমান শতক আছে। তবে দেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক নতুন এক মাইলফলক ছুঁয়েছেন। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ এই তিন ফর্মেট মিলিয়ে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ৭ হাজার রান। এই ক্লাবে আগেই যোগ দিয়েছেন তামিম (৮৪৭৩) ও সাকিব (৮০৬৪)। মুশফিকের এখন রান ৭০৭৯। মিডল অর্ডারের গোড়াতেই সাধারণত ব্যাট হাতে নামেন মুশফিক। ৪, ৫ কিংবা ৬ নম্বর পজিশনে নিয়মিত খেলে থাকেন। এ কারণে একই সঙ্গে দুই ধরনের দায়িত্বে অবতীর্ণ হতে হয়েছে তাকে বিভিন্ন সময়। টপঅর্ডাররা ভাল সূচনা দিলে রান বাড়াতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে হয়েছে। আবার টপঅর্ডাররা ব্যর্থ হলে দায়িত্ব নিয়ে খেলে ইনিংস মেরামত করতে হয়েছে। দ্বিতীয় কাজটাই ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় করতে হয়েছে মুশফিককে। সেই দায়িত্বটা বারবারই দক্ষতার সঙ্গে সুস্থির থেকে পালন করেছেন। আর সে কারণেই তিনি বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে অন্যতম নির্ভরতা হয়ে উঠেছিলেন। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কিছুটা সমস্যায় পতিত হয়েছিল বাংলাদেশ দল। টপঅর্ডার দুই ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দ্রুতই ফিরে যান। দলীয় ৩০ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ, তখন মাত্র নবম ওভার। আবারও মুশফিকের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়েছে পুরো বাংলাদেশ দলকে। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে দু’দিন আগে যে কাজটি করে অপরাজিত ৮১ রানের ইনিংস খেলে ভাল একটি সংগ্রহ পাইয়ে দিয়েছিলেন, সেটা পারবেন আবারও? ধারাবাহিকভাবে রান করার একটা পুরনো ইতিহাস আছে মুশফিকের। সে কারণেই তো তিনি ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নামটা পেয়েছিলেন। রান করাটা বেশ কঠিন মনে হচ্ছিল প্রথমদিকে। তবে মুশফিক নামার পর তা যেন সহজই হয়ে গেল। শুরু থেকেই বেশ সাবলীলভাবে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি। তামিমের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপদ সামাল দেন তিনি। তামিম বিদায় নেয়ার পর অর্ধশতক পেয়ে যান। তবে ম্যাচের ৩০তম ওভারে ব্যক্তিগত ৫৩ রানে এক জীবন ফিরে পান। শর্ট ফাইন লেগে ওঠা ক্যাচ ধরতে পারেননি শন আরভিন। পঞ্চম উইকেটে সাব্বির রহমানের সঙ্গে আরও ১১৯ রানের জুটি গড়ে তোলেন। বড় একটি সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। অবশ্য ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পাওয়ার পথে ব্যক্তিগত ৯০ রানে আরেকটি জীবন পান মুশফিক। এবার টিনাশে পানিয়াঙ্গারা বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ ফেলে দেন। ফলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক পেয়ে যান মুশফিক। ২০০৬ সালের আগস্টে অভিষেক হওয়ার পর প্রথম সেঞ্চুরি পেতে মুশফিককে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৯৬ ম্যাচ ও ৮৭ ইনিংস। হারারেতে ২০১১ সালের ১৬ আগস্ট ১০১ রান করে ৫ বছর ধরে সেঞ্চুরি না করার খরা কাটান তিনি। অবশ্য ক্যারিয়ারের ৪৭তম ইনিংসে সেঞ্চুরির মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করেন ৯৮ রানে আউট হয়ে। সেটি ২০০৯ সালের ১৮ আগস্ট বুলাওয়েতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই। প্রথম সেঞ্চুরির পরই দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে একটিই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। প্রথম সেঞ্চুরির পর সেজন্য অপেক্ষা ছিল মাত্র ২৯ ইনিংস। ক্যারিয়ারের ১১৬তম ইনিংসে দ্বিতীয় শতক পান। এবার ভারতের বিরুদ্ধে ১১৭ রান করেন গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি। গত বছর নবেম্বরে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় মুশফিককে বাড়তি চাপ কমানোর জন্য। তবে ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা কিংবা নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে যে তকমা সেটা চলে যায়নি। মাত্র ২০ ইনিংস পরেই তৃতীয় শতক পেয়েছেন। ক্যারিয়ারের ১৩৬তম ইনিংসে চলতি বছর ১৭ এপ্রিল মিরপুরে করেন ১০৬ রান। আর এবার অপেক্ষাটা আরও কম। মাত্র ৬ ইনিংস পরেই পেয়ে গেলেন আরেকটি শতক। মাত্র ১০৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ রান করার পর সাজঘরে ফিরেছেন। কিন্তু ততোক্ষণে দলের অবস্থান মজবুত করেছেন দারুণ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করে। এই ম্যাচের আগে তিন ফর্মেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (টেস্ট+ওয়ানডে+টি২০) তার রান ছিল ৬ হাজার ৯৭২। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। এখন তার রান ৭ হাজার ৭৯। সবার ওপরে তামিম ৮ হাজার ৪৭৩ রান করে। পরেই আছেন সাকিব ৮ হাজার ৬৪ রান নিয়ে। অধিনায়ক ছাড়াই যেন বেশি দ্যুতি মুশফিকের। কারণ অধিনায়ক হিসেবে করেছেন মাত্র একটি আর শুধু খেলোয়াড় হিসেবে করেছেন তিনটি সেঞ্চুরি। যদিও ব্যাটিং গড়ে (৩৪.৩৫) অধিনায়ক হিসেবে ১০৬৫ রান করেছেন। আর অধিনায়ক হিসেবে না থেকে ৩০.৮৩ গড়ে করেছেন ২৮০৬ রান।
×